প্রকৃতির ভালবাসায় মুগ্ধ জীবন...

in BDCommunity2 years ago

ভোর রাত থেকেই মেঘের গর্জন। বাইরে তুমুল বাতাস। কাঠের জানলায় সেই বাতাসের ধাক্কায় অদ্ভুত একটা শব্দ হচ্ছিল। সেই শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। এমন অদ্ভুত শব্দে প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম। এর আগে এমন শব্দ শুনি নি। প্রাথমিক অবস্থায় ভয়টা কাটিয়ে উঠে জানলা খুলতে না খুলতেই ঠান্ডা একটা হিমশীতল বাতাস গায়ে লাগল। আধো আলো আর অন্ধকারে জানলা দিয়ে বাড়ির পেছনের অংশটা মায়াবী সুন্দর লাগছিল।

বাড়ির পেছনে কারো তেমন একটা যাওয়া হয় না। সেই সুযোগে ঘন ঝোঁপঝাড়ে ভরে গিয়েছে পুরো জায়গাটা। অনেকটা জঙ্গলের মতোই। বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই সবকিছু ভিজে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল প্রকৃতি বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নতুন এক দিনের জন্য তৈরি করেছে। ঘন সবুজ গাছপালার ফাঁকে একটু একটু করে সূর্যটাও উঁকি দিয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দিচ্ছিল।

গ্রামের বাড়িতে দেয়ালের কাজ চলছে। সেই উপলক্ষেই গত কিছুদিন ধরে গ্রামে আছি। কাজ শেষ হতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে প্রায়। নানাবিধ ঝামেলায় এমনিতেই মন মেজাজ ভাল ছিল না৷ সারাদিনের কাজ কর্ম শেষে রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার পর আর হুঁশ থাকে না। কোন ফাঁকে যে ঘুমিয়ে যাই, টেরও পাই না। এভাবেই চলে গিয়েছে গত কয়েকটা দিন। এছাড়া বেশ কিছু ব্যাক্তিগত কারণে মানসিক ভাবেও কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। একই সাথে শারিরীক ও মানসিক দিক দিয়ে ক্লান্ত থাকায় অদ্ভুত এক বিষন্নতা ভর করে আছে পুরো মন ও শরীর জুড়ে৷ আর এই বিষন্নতা কিছুটা হলেও দূর হয়ে গিয়েছিল আজকের এই সুন্দর বৃষ্টি ভেজা ভোরের স্পর্শে।

জানলার পাশে বসে বসে অনেকটা সময় ধরেই বৃষ্টি দেখছিলাম। ভালই লাগছিল। কিন্তু এভাবে ত বেশিক্ষণ বসে থাকা যায় না। আলসেমি ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আবারও জানলার পাশে গিয়ে বসলাম। বৃষ্টি না থামলে বের হতে পারব না। আর কাজও শুরু করতে পারবে না৷ অযথায় সময়গুলো নষ্ট হচ্ছিল। বসে বসে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম।

যদিও বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা লাগে নি। ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আটটা বাজতে না বাজতেই কিছুটা থেমে গিয়েছিল। আমারও আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। বাইরে তখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ঝড়ছে। এমনিতেই আবহাওয়া অনেকটা ঠান্ডা, তার উপর আবার বৃষ্টির ফোটায় শরীর কিছুটা ভিজে যাওয়ায় ঠান্ডায় শরীরটা কাঁপছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই৷ কাজ তো শুরু করতেই হবে।

.
আমাদের গ্রামটা সুন্দর। সবুজে ঘেরা। চারপাশে বিশাল জমি, ধান ক্ষেত আর গাছপালা। দক্ষিণের বাতাসে যে কারো মন ও প্রাণ শীতল হয়ে যাবার কথা। আমারও সেটাই হয়েছে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চারপাশটা দেখছিলাম আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। গত কিছুদিনের ক্লান্তিকর জীবনটা আজ কিছুটা হলেও ফুরফুরে লাগছে। প্রকৃতির এই যেন এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক ঔষুধ৷ প্রকৃতি তার নিজের উপাদান দিয়ে তার সন্তানদের মনের সকল কষ্ট, দুঃখ ও দুর্দশা দূর করে দেয়। অদ্ভুত না?

দুপুর হতে হতে অবশ্য ভোরের বৃষ্টির সমস্ত চিহ্ন চলে গিয়েছে৷ উত্তপ্ত সূর্যটা আগের মতই তার তাপ বিকীরন শুরু করে দিয়েছে। প্রচন্ড গরমে মিস্ত্রীদের সাথে টুকটাক কিছু কাজ করতে হয়েছে৷ ইদানিং একটু বেশিই ঘামি৷ শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝড়তে থাকে। অথচ ছোটবেলায় এর চেয়েও বেশি পরিশ্রম কিংবা দৌড়াদৌড়ি করেও এতটা ঘামতাম না। সময়ের সাথে সাথে মানুষের শরীরে কতটা পরিবর্তন আসে, তাই না?

Sort:  

কোন ফাঁকে যে ঘুমিয়ে যাই, টেরও পাই না।

আর এইদিকে আমার রাতে ঘুমই আসতে চায়না। হালকা পাতলা পড়াশোনা করে শুয়ে পরি ১১/১২ টার দিকে। তারপর শুরু হয় মোবাইল ব্যবহার করা। পরে ঘুমাতে ঘুমাতে বেজে যায় সেই দুইটা কি তিনটা। মাঝে মাঝে তো একেবারে সকাল করেই ঘুমাই 😃। তবে ঐদিন আর বেলা ১১/১২ টার আগে ঘুম ভাঙ্গেনা। অলস জীবনযাপন করছি তো ; তাই কিছুর নিয়মকানুন নেই।

তবে অলস সময় ফুরিয়ে এসেছে। একমাস পরেই ইন্টার্নিতে জয়েন করতে হবে। তারপর শুরু হবে চাকরী জীবন। তখন হয়তো আপনার মতোই অবস্থা হবে আমার৷

সময়ের সাথে সাথে মানুষের শরীরে কতটা পরিবর্তন আসে, তাই না?

তা তো অবশ্যই। প্রকৃতির নিয়ম টাই যে এমন। একটা বয়স শেষে সবকিছুতেই ঘুনে ধরতে থাকবে। যৌবনভরা দেহটা তখন গুটিয়ে যাবে। কুজো তৈরি হবে শরীরের মাঝখানে। তারপর একদিন হয়তো হৃদযন্ত্রটা কাজ করে বন্ধ করে দিবে। এখনেই সমাপ্তি।

তবুও থেমে নেই কিছুই। যতদিন শরীরে জোর আছে পরিবারের ঘানি টানতে হবে। দিন দিন ব্যস্ততা আর দায়িত্ব বেড়েই চলবে।

গ্রাম ছাড়া এরকম মানসিক প্রশান্তি আর কোথাও পাওয়া যাবে না। চারদিকে সবুজ গাছপালা,ধানক্ষেত আর বিশুদ্ধ বাতাস যে কারও মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে। গ্রামে থাকলে কেনো জানি মন এমনিতেই ফুরফুরা থাকে।