“অন্যরকম একটি মেয়ে”

in BDCommunity5 years ago

ভারী স্কুল ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে গটগট করে হাঁটছে আলপনা। পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরাই তার পছন্দ। আলপনাদের পাড়াটা ঢাকা শহরের আর দশটা এলাকার মত ঘিঞ্জি বা অপরিষ্কার কোনোটাই নয়। এখনো সবুজের ছোঁয়া আছে। পাখ-পাখালির আনাগোনাও দুর্লভ নয়। হাঁটার সময় পথে কোনো মূল্যবান জিনিস পেলে কুড়িয়ে নেয় সে। মূল্যবান জিনিস বলতে নারকেলের মালা,ডিমের খোসা, পুরোনা ক্যাসেট, কৌটা এসব।ওর মতে , এগুলা খুবই দুর্ল্ভ হয়ে উঠেছে আজকাল।কিন্তু এসবের বেশ উপকারিতা আছে।ওর মা এ ধরণের শখে বেশ বিরক্ত। প্রায়ই তিনি বলেন,”আলপনা ,তোর এমন ছন্নছাড়া স্বভাব টা ছাড় তো। আর কখনো রাস্তা থেকে এসব কুড়িয়ে আনবি না।তোর লজ্জা করে না? কিন্তু মায়ের এমন টীকা-টিপ্পনী আর নিষেধ সে থোড়াই কেয়ার করে। সে এসব দিয়ে খেলনা-পাতি, শো-পিস তৈরি করে। ডিমের খোসা দিয়ে মানুষের মাথা, নারলেকের মাথার ল্যাম্পশেড।হার্ডবোর্ডের ফটোফ্রেম, তুলার মানচিত্র,কাগজ আর পাইপের হাতি ইত্যাদি তৈরি করেছে। বাবা অবশ্য ওকে উৎসাহ দেন। “মায়ের মধ্যে আমার সৃষ্টিশীলতা আছে”-এমন মন্তব্য প্রায়ই করেন তিনি। আলপনা নিজেই উপহার তৈরি করে, তাই বন্ধুদের জন্মদিনে পয়সা খরচ করতে হয় না। সেদিন আলপনা তার ল্যাবরেটরিতে (তার বেডরুম) বসে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র দিয়ে “সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” মত্ত। এমন সময় হতভাগা হিটলার মামা হাজির হলেন।

2020-07-18-00-26-42.jpg

“আরে মামা,কি খবর?
ধুর,খবর আর কি! বেকার যুবকের কোন খবর থাকেনা।পকেট একদম খালি। ও হ্যাঁ, তুই আমাকে ১০০ টাকা ধার দিতে পারবি? “হুম” মুখ ভ্যাংচায় আলপনা, তারপর বলে, “আমি কি টাকার গাছ?
মামা চোখ বড়ো বড়ো করে ওর ঘরটাকে দেখতে থাকেন। “একিরে , তুই টাকার গাছ না হলে আবার কি? এত্তসব শো-পিস টাকা না দিয়ে কিনেছিস? “কিনবো কেন, নিজেই বানিয়েছি।আর এসব বানাতে আমার খরচ ও হয়নি। ইউরেকা, ইউরেকা” লাফিয়ে উঠে মামা। “ কি হয়েছে পাগল হয়ে গেলে নাকি? “ পাগল ছাগল যাই বলিস না কেন, আমি বুদ্ধি পেয়ে গেছি।“ “কি বুদ্ধি? “আরে এখন থেকে আর চাকুরি না খুঁজে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করবো। তুই, তুই আমার পার্টনার।তুই এসব শো-পিস বানিয়ে আমায় সাপ্লাই দিবি।
এরপর মামা রোজ বিভিন্ন অব্যবহার্য্য জিনিস সংগ্রহ করে আনেন। আলপনা লেগে পড়ে শো-পিস তৈরিতে। দেখতে দেখতে চৈত্র মাস ও পেড়িয়ে যাচ্ছে। মামা ঠিক করলেন বৈশাখী মেলাতেই স্টল দেবেন। আলপনা পুরোদমে কাজ করছে।শুরু হলো বৈশাখী মেলা। সাদমাটা একটা স্টল ।কিন্তু সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে দেরি হলো না। স্টলে মামাই থাকেন। স্কুল শেষে আলপনাও চলে আসে। বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে। এরই মাঝে মেলা বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরি করতে ওদের স্টলে এলেন এক রিপোর্টার আর ফটোগ্রাফার। মামা শোনালেন পুরোনো জিনিস দিয়ে শো-পিস তৈরির কেচ্ছা। সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা-“এই আইডিয়া কই পেলেন? মামা বললেন,”আমার ভাগনি আলপনার তৈরি শো-পিস দেখে। তারা তো আলপনাকে দেখে অবাক। অতঃপর আলপনাকে সবকিছুর ফিরিস্তি দিতে হলো। ফটোগ্রাফার ছবি তুলে নিলেন। দু’দিন বাদেই পত্রিকায় ছাপা হল “ ক্ষুদে শিল্পীর আত্নপ্রকাশ।“ এরপর ওদের স্টলের বিক্রিও আরো বাড়ল। শেষ পর্যন্ত ভালোই লাভ হলো। লাভের অর্ধেকটা মামা আলপনাকে দিলেন। আলপনা আপত্তি করেছিল, কিন্তু মামার মুখে এক বুলি, তুই আমাকে ব্যবসা শিখালি, দিনরাত পরিশ্রম করলি,তোকে আরো বেশি দেয়া উচিত।
টাকাটা দিয়ে কি করবে ,ভেবে পাচ্ছে না আলপনা।ভাবতে ভাবতে ছাদে ওঠে সে। চারপাশ টা ভাল করে দেখছে সে । একটু দূরে রাস্তায় একটা মেয়ের দিকে চোখ আটকে গেল তার। মেয়েটা কাঁদছে। ওদের পাড়ায় থাকে। নাম জবা। আলপনা ছাদ থেকেই ডাকে, “ এই জবা কাঁদছো কেন? ওপরে আসো।
জবা এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আপু আমাদের ক্লাসের সবাই কক্সবাজারে পিকনিক এ যাচ্ছে। ১০০০ টাকা চাঁদা।তাই আব্বু-আম্মু আমাকে যেতে দিচ্ছে না।“সে কি! এসো আমার সাথে। জবাকে ঘরে নিয়ে আসে আলপনা। ড্রয়ার থেকে ১০০০ টাকা বের করে গুঁজে দেয় জবার হাতে।
খুশিতে আত্নহারা জবা-“আপু তুমি খুব ভাল।আমি যখন রোজগার করব তোমার টাকা শোধ করে দেব।“
জবা যাওয়ার পর পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছে আলপনা।একটা ছবিতে চোখ স্থির হলো। ফুটফুটে একটা মেয়ে। লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত। সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল আলপনার। কিন্তু বাকি টাকা খরচের একটা রাস্তাও পেয়ে গেলো সে।

Sort:  

লেখা চালিয়ে যান। ভালো লাগলো।