মা হচ্ছে আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। যার মা আছে,সে যে কতটা ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী তা বলে বোঝানো যাবে না। মাকে নিয়ে তেমনি একটি গল্প আজ শেয়ার করছি।
আজ মে মাসের ১ তারিখ। আন্তঃ শ্রমিক দিবস। বাংলা ক্লাসে স্যার দিবসটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন।সবশেষে তিনি বললেন, এ মাসের ১৩ তারিখে আরো একটি দিবস আছে। সেটি হলো মা দিবস।
মা আমাদের কত আপনজন, মায়ের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তিনি অনেক কথা বললেন। তিনি আরো বললেন ,মা দিবসে তোমরা প্রত্যেকে যে যা পার তাই দিয়ে মাকে শুভেচ্ছা জানাবে। সাধ্যমত একটি ফুল দিয়ে, কেউবা নিজের লেখা কবিতা বা আঁকা ছবি দিয়ে কিংবা ছোট খাটো উপহার দিয়ে মাকে উইশ করবে। আর যে এসবের কিছুই দিতে পারবে না সে দু; হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলবে, মা আমি তোমাকে ভালবাসি। দেখবে মা কত খুশি হয়।
আমরা ৫ম শ্রেণির চার বন্ধু-সুমন,রবিন, উৎপল ও আমি রিন্টু। স্যারের বলা মা দিবস নিয়ে টিফিন পিরিয়ডে আলোচনা করছ।মাকে নিয়ে এর আগে কখনো এভাবে ভেবে দেখিনি।আমরা যার যার মায়ের আদর,ভালবাসা নিয়ে অনেক কথাই বললাম।কেবল উৎপলই কিছু বললো না।
ওকে চুপ দেখে সুমন বললো, কিরে তুই ও তোর মাকে নিয়ে কিছু বল’। কি আর বলবো, আমার মা তো আমাকে খুব আদর করে। রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ভাল ভাল খাবার খেতে দেয়।আমি পায়েস খেতে ভালবাসি,তাই আমাকে মাঝে মাঝে পায়েস রান্না করে দেয়। মা যে আমাকে কত আদর করে তোরা কেউ ভাবতেই পারবি না। আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে ওর মায়ের কথা শুনলাম। এরপর চারজনে মিলে ঠিক করলাম, এবার মা দিবসে প্রত্যেক মাকে কিছু উপহার দেব।সবাই টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সেই টাকা দিয়ে উপহার কিনবো। রবিনের কাছে আমরা প্রতিদিন ২ টাকা করে জমা রাখি। অবশেষে মা দিবসের আগের দিন টিফিন পিরিয়ডে আমরা টাকা গুনতে শুরু করলাম। ৩ তারিখ থেকে টাকা জমাচ্ছি।মাঝে একদিন শুক্রবার ছিল। তাই এই ৯ দিনে আমাদের ৭২ টাকা জমার কথা।কিন্তু জমেছে ৬২ টাকা।কারণ উৎপল টাকা দিতে পারেনি। ও বলল,ওর মা বাইরের খাবার খাওয়া পছন্দ করে না।তাই প্রতিদিন টাকা দেয় না। আমরা বললাম, মন খারাপ করিস না, যে টাকা জমেছে এতেই উপহার হয়ে যাবে।
এবার ঠিক করার পালা কে কার মাকে কি দিবে।সুমন বললো ওর মা গল্পের বই ভালবাসে ।তাই গল্পের বই দিবে। উৎপল বলল, ওর মা লাল কাঁচের চুড়ি পরতে খুব ভালোবাসতো।তাই চুড়ি কিনবে।সে কেন ভালবাসে না বলে ভালবাসতো বলেছে তখন আমরা তা বুঝতে পারিনি।
পরের দিন শুক্রবার। স্কুল বন্ধ, তবু আমরা চারবন্ধু স্কুলের গেটের সামনে মিলিত হলাম।আমি মায়ের জন্য ফুল কিনলাম।সুমন ওর মায়ের জন্য একটি গল্পের বই কিনলো।রবিন কিনলো মা লেখা একটি পোস্টার। উৎপল কিনল এক ডজন লাল টকটকে কাঁচের চুড়ি। এরপর আমরা প্রথমে সুমনদের বাড়ি গেলাম। ওর মা বই দেখে অবাক হলেন।মা দিবসে এটা সুমনের উপহার শুনে আনন্দে ওকে বুকে জরিয়ে ধরলেন। এরপর আমাদের সবাইকে মিষ্টি খেতে দিলেন। তারপর গেলাম আমাদের বাসায়।আমার মা ফুল পেয়ে খুব খুশি।তক্ষুণি গরম সিঙ্গারা আর জিলিপি আনিয়ে খেতে দিলেন। এরপর গেলাম রবিনের বাসায়। রবিনের মা খুশি হলেন।তিনি নিজ হাতে বানানো কেক খেতে দিলেন। সবশেষে গেলাম উৎপলের বাসায়।ইটের তৈরি পুরোন বাড়ি।আমরা ওকে বললাম তুই আগে যা। ও মুখ কাচুমুচু করে ভিতরে ঢুকলো। হঠাত শুনতে পেলাম,এই বদমাশের বাচ্চা, সারা সকাল কোথায় ছিলি? শয়তান,না বলে কাজের ভয়ে কোথায় পালিয়েছিলি? মারের ও শব্দ পেলাম। আমরা ভয়ে ভয়ে উকি মেরে দেখলাম,মুখ নিচু করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে উতপল।আর একজন মহিলা ওকে খুব মারছে।মারের চটে একসময় ওর পিছনে লুকিয়ে রাখা হাত থেকে কাঁচের চুড়িগুলো পড়ে ভেঙ্গে গেল।
এমন সময়,বাড়ির ভেতর থেকে একজন মহিলা বের হয়ে এল।তাকে দেখে বললাম, ওকে এভাবে মারছে কেন? সে রাগত কন্ঠে বলল, ঐটা ওর সৎ মা। ‘কেন ওর নিজের মা কোথায়? সেতো ওর সাত বছর বয়সে মারা গেছে। তারপর থেকে এই মহিলা ওকে মারে। দোষ করলেও মারে,না করলেও মারে।
আমাদের মনটা খারাপ হয়ে গেল।বুঝতে পারলাম মা নেই বলে চুড়ি কেনার কথা বলার সময় ও কেন অতীতবাচক ক্রিয়া ব্যবহার করেছিল। নিজের মায়ের প্রিয় লাল চুড়ি দিয়ে যে মহিলার মন জয় করতে চেয়েছিল ,এখন ওই মহিলাটিই তাকে মারধর করছে।
মা দিবসের সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল মা-হারা উৎপলের কান্নায়।
পরিশেষে ভাল থাকুক পৃথিবীর সকল মায়েরা।
হৃদয় বিদারক। সমাজে এমন অনেক উতপল রয়েছে ।