অতীত সুন্দর

in BDCommunity2 years ago

আমার যখন ১৫ বছর বয়স তখন আমার নানা মারা গিয়েছিলেন। ছোটবেলায় আমি তার সবকিছু অনুসরণ করতাম। যদি এক কথায় বলতে হয় তাহলে তিনি আমার সুপারহিরো ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র যে বর্তমান কে নিয়েই আমার সাথে কথা বলতেন এমনটি নয়, তিনি আমার সাথে তার অতীত নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম টা কেমন হতে পারে সেটা আমাকে বলেছিলেন। আমি তার মতো হওয়ার জন্য খুব বেশি পিছিয়ে ছিলাম না। তিনি তার পরিবারের যত্ন করতেন, কিন্তু আমি আমার পরিবারের বাকি সদস্যদের খুব একটা যত্ন করিনি।

শৈশবের বেশিরভাগ সময় আমি আমার বোনের সাথে তর্ক করে কাটিয়েছি। কিন্তু এই সময়টাতে আমার তার কথা মনে পড়ার কারণ, আমি হয়তো আর একটু সুন্দর করেও অতীতটা তৈরি করতে পারতাম। যেখানে শুধুমাত্র ভালোবাসা থাকতো। আমার নানা যখন মারা যায় আমার মনে হয়েছিল আমি সবকিছুর ভিত্তি হারিয়ে ফেলতে চলেছি। সেই সময়টাতে শুধুমাত্র আমি একাই নিজেকে অসহায় মনে করছিলাম না। আমার নানু তার জীবনের ৫০ টি বছর আমার নানার পাশে কাটিয়েছেন। আমি বুঝতে পারছিলাম না তিনি কিসের উপর এখন থেকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করবেন। আমার সেই দিনটা এখনো মনে পড়ে, কারণ সেই দিনটা আমার পরিবারের জন্য সবথেকে অন্ধকারের সময় ছিল।

নানা আমাকে বলেছিলেন, তোমার যখন অল্প বয়স থাকবে তোমার নিজের মধ্যে শক্তি থাকবে। তুমি অন্যকে কথা বলার জন্য জোর খুজে পাবে। তখন তোমার পাশে কেউ না থাকলেও তোমার সময় কেটে যাবে। হ্যা, এটা সত্যি ছিল। তিনি সেই ছোট্ট বয়সেই আমার কাছে সব দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন তোমার মায়ের খেয়াল রাখবে। আমি ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে দেখেছিলাম। আমার পরিবার সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে নিজেদের চলার পথ খুঁজে নিয়েছিল। কিন্তু আমি সেই মানুষটিকে দেখে ভেঙে পড়েছিলাম, যিনি আমার নানার সব থেকে কাছের মানুষ ছিলেন। আমি দেখছিলাম পরিবারের বাকি সদস্য গুলো আমার নানু কে পাত্তা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।

তিনি নিজেকে ধীরে ধীরে ঘরে বন্দি করে ফেলেছিলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম তিনি নিজেকে পৃথিবী থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছিলেন। এটা আমার জন্য সবথেকে বেশি দুঃখজনক ছিল। আমি তাকে এমন হতাশ অবস্থায় দেখে নিজে দাঁড়াতে পারছিলাম না। আমি আগের মতই স্কুল থেকে ফিরে তার সাথে সময় কাটাতে শুরু করেছিলাম। আমার নানু পরিবারের বাকি সদস্যদের উপর আর নির্ভর করতে চাইছিল না। কিন্তু আমি নিজেকে নির্বোধ মনে করছিলাম যে আমি পুরোটা নিজের মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করছি। আমি পারিবারিক চিন্তা ভাবনা দেখে হতভম্ব হয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমার আর কি বা করার ছিল? আমি যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটার উপর আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল আমার উপর চাপানো দায়িত্বের সাথে আমি লড়াই করতে শুরু করেছিলাম।

সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আমি আমার নানুর অনেক কাছে চলে গিয়েছিলাম। আমি তাকে নতুনভাবে জানতে শুরু করি। বলতে গেলে আমি প্রথমবারের মতো আমার নানার পর কারো সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হয়েছি‌। ছোটবেলায় মাঝেমধ্যেই নানুর সাথে তার কথার বিরোধিতা করতাম। মনে হতো তিনি মাঝেমধ্যেই ভুল বলে থাকেন। কিন্তু অবশেষে তার দৃষ্টিভঙ্গি আমি বুঝতে পারছি। ভবিষ্যতে হয়তো তার সাথে আর কখনো আমার বিরোধিতা করতে হবে না। সময়টা খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা অনেকেই বলে থাকি আমাদের ভালো সময়টা খুব দ্রুত চলে যায়। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি ভালো সময়টা যেমন আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যায়, খারাপ সময়টাও নিজের মত করে একদিন পাল্টে যায়।

আমি মাঝেমধ্যেই অনুভব করতাম যে, সেই সময়টা কেন আমাদের জীবনে এসেছিল। যেটাকে আমি আমার জীবনের সবথেকে খারাপ অতীত হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে সব বদলে যায়। আমরা সবাই স্বাভাবিক গতিতে আবার চলতে থাকি। এমন একটা সময় তৈরি হয়, মনে হচ্ছিল যে আমাদের মধ্যে খারাপ কোন অতীত নেই। যা ছিল সব সুন্দর। সময় আমাদের শিখিয়ে দেয় খারাপ দিনটাই ভবিষ্যতে একটি সুন্দর অতীত তৈরি করে। জীবনের যত যা কিছু পিছনে ফেলে এসেছি সবকিছুই এখন সুন্দর মনে হয়। সেই সময়টার প্রতিটা মুহূর্ত এখন সুন্দরভাবে মনে করতে ইচ্ছে করে। কখনো মনে হয় না সেই দিনটা অন্ধকার ছিল। তাই অতীত যেমনই হোক না কেন অতীত আমাদের কাছে সুন্দর।

IMG_20220716_174851.jpg

Sort:  

You post has been manually curated by BDVoter Team! To know more about us join our Discord.


Delegate HIVE POWER to us & earn HIVE daily.

FOLLOW OUR HIVE AUTO CURATION TRAIL

Hi @shahinaubl, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON