
২৫ বছর ধরে তিনি পূজারি হিসেবে রয়েছেন। সেই থেকেই তার অভ্যাস প্রতিদিন খুব ভোর থেকে জেগে উঠা। এটা অবশ্য নতুন কোন ঘটনা নয় , কারণ তিনি প্রতিদিনই খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন । কিন্তু আজ সকালে তার মনে হচ্ছিল কিছু একটা যেন তার কক্ষের উঠানে ঘুরে বেড়াচ্ছে । তার কাছে অস্বাভাবিক এক ধরনের অনুভুতি হচ্ছিল। তার বাড়ির অধিকাংশ মেম্বার সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের প্রার্থনা সম্পূর্ণ কর।
তিনি তার পূজোর ঘরে দেখতে গেলেন সেখানে কি হচ্ছে। তিনি অন্ধকারে দেখতে পান কেউ একজন মাথায় হুড লাগানো অবস্থায় সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি কেবল মাত্র কোন ব্যক্তির কালোছায়া লক্ষ্য করলেন। তিনি পরে বুঝতে পারলে আমি লোকটি ছিল একজন সিঁধেল চোর।
তখন তিনি শান্তভাবে সেই চোর কে, জিজ্ঞেস করল তুমি কি চাও? চরটি বলে উঠল তাড়াতাড়ি আমাকে দানবাক্সের চাবিটা দিন । তা না হলে ছুরি ঢুকিয়ে দিব আপনার পেটের ভেতর ।গালাগাল দিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে ভয় দেখানোর জন্য চোরটি একটি লম্বা ধারালো ছুরি বের করল। চোরটি ছুরি হাতে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেল।
তিনি দেখতে পাচ্ছেন , ছুরিটা তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে । কিন্তু তিনি মোটেও ভয় পেলেন না, শুধু সেই লোকটির জন্য তার করুণা হচ্ছিল।
তিনি চাবিটা এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে চাবির গোছা দিব।
যখন তিনি চাবিটা তার হাতে দিয়ে দিলো, তখন সে ছুটে গিয়ে দান বাক্স খুলে সেখান থেকে টাকা পয়সা তুলে নিচ্ছিল। তখন তিনি চোরটার ছেড়া জামা কাপড় আর শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করছিলেন। সহজেই লোকটিকে দেখূ বোঝা যাচ্ছিল যে সে খুবই গরীব।
সত্তিকারের সহানুভূতি নিয়ে তিনি তাকে বললেন , শেষবারের মতো তুমি কখন খাবার খেয়েছ, বাছা?
এই সব জেনে আপনার তাতে কি প্রয়োজন ? চুপ করে এখানে দাঁড়িয়ে থাকুন । চিৎকার করে চোরটি বলল।
তিনি শান্ত হয়ে চোর টিকে বললেন , দানবাক্সের পাশে কাপবোর্ডের উপর কিছু খাবার রয়েছে। তুমি চাইলে সেখান থেকে কিছু খাবার নিয়ে যেতে পারো।
তার এমন কথা শুনে চোরটি কিছুটা থতমত খেয়ে গেল। তারপর চোরটি ছুরিটা তার দিকে এগিয়ে ধরে, দান বক্স থেকে নগদ টাকা পয়সায় এবং খাবারগুলো পকেটে রেখে দিল।
তার গলার কাছে ছুটিটা নিয়ে লোকটি বলল, পুলিশকে খবর দেবেন না অথবা অন্য কাউকে এই চুরির কথা বলবেন না ।চেঁচিয়ে বলল সে।
তিনি বললেন পুলিশকে কেন আমি খবর দিব? তখন তিনি বেশ শান্ত ছিলেন। তিনি আরো বললেন ওই দানের টাকাগুলো তোমার মত গরিবদের সাহায্য করার জন্যই আমরা জমা করেছি। আর আমি নিজে থেকেই এই খাবারগুলো তোমাকে দিয়েছি। তুমি কোনোকিছুই চুরি করো নি । এখন তুমি যেতে পারো এবং আশা করি তারপরে আর তোমার চুরি করার দরকার হবেনা। তুমি শান্তিতে থাকো।
তারপরের দিন তিনি মন্দিরের সকল কমিটির লোকদের সাথে এই ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন । সবকিছু শোনার পর কমিটির সবাই গর্ব অনুভব করলেন।
কিছুদিন পরেই তিনি একটি খবরের কাগজে দেখতে পেলেন সেই চোরটি চুরি করার সময় অন্য বাড়িতে ধরা পড়েছে। তার ১০ বছরের জেল হয়েছে।
ঠিক ১০ বছর পর আবারো সেই অধ্যক্ষ মহোদয়ের খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল। পুজোর কক্ষে তিনি কিছুর একটা শব্দ শুনতে পেলো। সেখানে কি ঘটছে তা জানার জন্য তিনি উঠে পড়লেন এবং হ্যাঁ আপনারা ঠিকই অনুমান করেছেন । তিনি দেখলেন সেই পুরনো চোরটাই দাঁড়িয়েছে দান বাক্সের পাশে। ঠিক আগের মতোই তার হাতে ধারালো একটা ছুরি রয়েছে।
চোরটি চিৎকার করে বলল, আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন? ‘হ্যাঁ,’ কিছুটা শান্ত কণ্ঠে তিনি বলতে বলতে পকেট থেকে দানবাক্সের চাবিটা বের করে তার হাতে দিয়ে বলল, এই নাও তোমার চাবি।
তখন লোকটি হাসতে হাসতে ছুরিটা নামিয়ে নিল এবং তাকে বলল আপনার চাবি আপনি রেখে দিন। এই 10 বছর জেল খানায় আমি শুধু আপনার কথাই ভেবেছি। কারণ না ভেবেও কোন উপায় ছিল না । আমার জীবনে আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমাকে এমন দয়া দেখিয়েছিলেন । প্রকৃতপক্ষে আপনিই যিনি আমার ভাল মন্দের কথা ভেবেছিলেন। আমি আবারও চুরি করতেই আপনার এখানে এসেছি । কিন্তু তবে আমি বুঝতে পেরেছি যে গতবার আমি ভুল জিনিসটাই নিয়ে গিয়েছিলাম ।এবার আমি এসেছি আপনার মনোভাব এবং আপনার হৃদয়ের গভীরে প্রশান্তির গোপন কথা গুলো জানার জন্য।
তখন লোকটি বলল দয়া করে আপনি আপনার করুনার চাবিটি আমাকে দিয়ে দিন এবং আমাকে আপনার শীর্ষ করে নিন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেই চোরটি তার কাছে উপসম্পদা গ্রহণ করে ভিক্ষুত্ব বরণ করল এবং সে জীবনে যা কল্পনাও করতে পারেনি সেরূপ ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়ে উঠল। এ ঐশ্বর্য কোনো টাকা-পয়সা নয়, এ হচ্ছে করুণাধারায় সিক্ত হৃদয়ের ঐশ্বর্য এবং মনের গভীর প্রশান্তি। এই ঐশ্বর্যই তো আসলে আমরা চাই।
লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লাম । অসাধারণ লিখেছেন
লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লাম । অসাধারণ লিখেছেন