আমি ভীষণ কথা প্রিয় মানুষ। শব্দটা কিছুটা হাস্যকর মনে হলেও আমার কথা বলতে ভীষণ ভালো লাগে। পরিবারের সাথে এমন সময়ও নিজের কাটে, যেখানে শুধু আমি একাই কথা বলতে থাকি আর বাকি যারা থাকে তারা শুধু শ্রোতা। একটা দিন যদি গল্প করার মানুষ না থাকে সেই দিনটা কেমন শূন্য লাগে আমার কাছে। আমি কিন্তু একদমই ভিতরে কথা জমিয়ে রাখতে পারিনা। হয়তো নিজের কাছের মানুষটার কাছে অথবা পরিবারের কাছে নিজের সকল কথা শেয়ার করি। এখন ভাবতে পারেন তাহলে তো আমার সাথে আপনার নিজের কোন ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করা যাবে না। কারণ যেহেতু আমি নিজের ভেতর কথা গোপন রাখতে পারি না। তারমানে আপনার ব্যক্তিগত কথাও হয়তো গোপন রাখতে পারব না।
বিষয়টি আমি একটু পরিষ্কার করি, আমি সব সময় নিজেকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি। নিজের নিত্যদিনের কথা, যেটা নিজের মধ্যে থাকে। নিজের ভালোলাগা, নিজের খারাপ লাগা। অথবা নিজের কাটানো সুন্দর সময় গুলো মানুষের সাথে বলতে পছন্দ করি। কিন্তু এটা কখনোই নয় যে আমি আরেকজনের কথা নিজের মনে করে অন্যের কাছে শেয়ার করব। অন্তত এই জিনিসটা আমি পছন্দ করিনা। সত্যি বলতে আমার সাথে যখন কেউ দেখা করতে আসে অথবা কোন বন্ধুর সাথে অনেকদিন পর দেখা হয়। বিপরীত পাশের মানুষটা কথা না বললেও আমি একাই কিন্তু অনেক বকবক করে যাই। কথা বলার মাঝে আমি এক ধরনের ভিন্ন রকম আনন্দ খুঁজে পাই।
সেই কথার মাঝে আনন্দ থাকুক অথবা কষ্ট সেটা নিজের মধ্যে চাপিয়ে রাখতে কখনো পছন্দ করি না। নিজের কাছের মানুষগুলোর প্রতি বিশ্বাসের কারণে নিজের সকল কথাই শেয়ার করতে পছন্দ করি। মাঝেমধ্যেই আমি ভাবি আমরা কত সহজেই খুব সুন্দর ভাবে কথার মাধ্যমে নিজের ভাবগুলো প্রকাশ করি। কিন্তু এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা কথা বলতে পারে না। ধরুন আমাকে যদি কেউ ঘড়ি ধরে বলে যে আপনি পাঁচ মিনিট কোন কথা না বলে থাকবেন, আমার কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব হবে না। কিন্তু যেই মানুষগুলো কথা বলতে পারেনা তাদের আগ্রহটা কত বেশি আমরা হয়তো কখনো চিন্তাও করতে পারবোনা। এমন অনেকেই রয়েছেন যারা সহজে নিজের মনের কথাগুলো বলতে পারেনা। আর যারা একেবারেই কথা বলতে পারে না, তারা কিভাবে নিজের ভেতরের কথাগুলো প্রকাশ করে? কিন্তু সেই মানুষগুলো কিন্তু নিজের ভাব প্রকাশ করে থাকে। সে মানুষগুলো নিজের হাতের সাহায্যে নিজের কথা'র সাইন প্রকাশ করে। তারাও কিন্তু কখনো চুপ করে থাকে না। নিজের যা প্রয়োজন, নিজের কষ্ট, নিজের ভালোলাগা, সবকিছুই তারা প্রকাশ করে নিজের মত করে।
আমি ভীষণ গল্প করতে পছন্দ করি। অনেক সময় হয় কি যখন আমি বাসায় একা থাকি তখন বাড়িতে কথা বলার কেউ থাকেনা। তখন আমি গান শুনি, প্রচুর গান শুনতে পছন্দ করি। সেই সময়টায় শুধু যে শুনতে পছন্দ করি তা না, গানের সাথে সাথে নিজেও গান গাইতে ভালোবাসি। ভাববেন না আমি খুব ভালো গান গাইতে পারি, আমি একদমই গান গাইতে পারি না। কিন্তু একা একা নিজের জন্য গাইতে পছন্দ করি। আমার ধারনা আমার মত সবাই এই কথা বলতে পছন্দ করে। কিন্তু সেই কথাগুলোর মাঝেও সুন্দর্য থাকতে হয়। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনার কথার কারণে কেউ কষ্ট পাক। আমার মা সব সময় একটা কথা বলতেন আমায়, মানুষকে মারার থেকেও নাকি কথা দিয়ে বেশি কষ্ট দেওয়া যায়; এটা সত্যি, আপনি যখন কিছু বলবেন সেই কথাটা কিন্তু কখন আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। আসলে আমাদের মুখের কথার অনেক দাম জানেন তো। তাই আমাদের কথায় যতটা বেশি আনন্দ থাকে, ঠিক একই ভাবে নিজেদের কথায় অনেক বেশি কষ্ট থাকে।
আমরা মানুষকে রেগে গিয়ে অনেক কথা বলি। এমন কিছু কথা বলি যেটা যখন আমাদের মাথা ঠান্ডা হয় নিজের কাছেই খারাপ লাগতে শুরু করে। তাহলে ভাবুন সেই মানুষটা কেমন লাগে যে মানুষটা কে আপনি রাগের কারণে কত কিছু বলেছেন। তাই চেষ্টা করতে হবে রাগের সময় আমাদের কথাগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করার। মানুষ ধীরে ধীরে সবকিছুই ভুলে যায়, কিন্তু কটু কথা গুলো সারাজীবন মনে রাখে। কথা বলবেন প্রাণ খুলে। যেটার মধ্যে অন্যের প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা থাকবে। গল্পের আসরে আপনার কথাতেই যেন বন্ধুদের আড্ডা জমে ওঠে। পরিবারের আনন্দের মুহূর্তগুলোতে যেন আপনার কথাতেই প্রাণ ফিরিয়ে আসে।
