লিফ্ট থেকে বেরিয়ে দেখতে পেলাম, একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি প্রশংসার ইঙ্গিত খুঁজছেন। তিনি মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে ছিলেন, আমি তাকে একটি উষ্ণ ধন্যবাদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল সমস্ত সময় দূর থেকে আমাদের সাথে খেলছিল। আমি নিজের ঘড়ির দিকে তাকালাম। প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আমার সহকর্মী আমাকে বাসার সামনে নিতে এসেছে আরও আধ ঘন্টা হয়ে গেছে। আমি যখনই কাজের জন্য এই শহরে ব্যস্ত থাকি, তখনই এই রুটিন মেনে চলি। এই শহর আমাকে একটি সুখি অনুভূতি দিয়েছিল। সাধারণভাবে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল। আমি প্রতিদিনই সেই একই ভদ্রলোককে লিফটের ওখানে বসে থাকতে দেখি।
আজকের পুরোটা দিন একটা ব্যস্ত দিন হতে চলছে। বাসা থেকে অফিস, অফিস থেকে নিজের ভার্সিটি। তারপর পুরনো এক স্কুল বন্ধুর সাথে ছোট একটি হ্যালো। তারপর আবার নিজের চেনা ঘরে ফিরে আসা। এর মধ্যে নিজের বোনের মেয়েটার জন্য ছোট কিছু উপহার কিনতে হবে। কারণ প্রতিদিনই ঘরে ফিরে আমার বোনের মেয়েটা, আমার খালি ব্যাগটায় তার পছন্দের জিনিস খুঁজতে থাকে। আমার ভার্সিটির ক্লাস শেষ হয় রাত সাড়ে নয়টায়। সেখান থেকে একটি চকলেটের দোকানে গিয়ে তার জন্য অনেকগুলো চকলেট কিনে নিজের চেনা পথে রিকসায় রওনা করি। বাসায় ঢুকতেই সে আমার কাছে দৌড়ে আসে। কাঁধে থেকে ব্যাগ নামাতে ব্যাগের ভেতর চকলেট খুঁজতে থাকে। অন্যদিনের মত আজকে ব্যাগ খালি ছিল না সে চাইতেই তার পছন্দের চকলেট গুলো খুঁজে পেলো। তার সেই মিষ্টি হাসি আমার পুরো দিনের ক্লান্তি দূর করে দিল।
ব্যাগের কথা বলতেই মনে পড়ে গেল আজকে ভার্সিটিতে প্রথম ইনস্টলমেন্ট এর শেষ দিন। দেরি না করে সেদিকে মনোযোগ দিলাম। ল্যাপটপ টা বের করে নিজের ভার্সিটির আইডি কার্ড দিয়ে সেখানে টাকা প্রদান করি। একটা সময় ভার্সিটির কথাটা বেশ আনন্দের ছিল। বিশেষ করে যখন আমি এই ভর্তি হইনি। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে শুধু মনে হচ্ছে যে কবে শেষ হবে। কারন এত দিক দিয়ে চাপ নেওয়া বেশ কঠিন। একদিকে নিজের চাকরি আবার পড়াশোনা। বিশেষ করে যে দিনটায় মানুষের ছুটির দিন থাকে, সেই দিনটাতে আমার বেশি ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটে। আমি শুক্রবার এর কথা বলছি। বিশেষ করে শুক্রবার দিন সবাই ছুটি কাটায়। সেই দিনটাতে আমার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্লাস। অনলাইনের ক্লাস গুলোর হিসেব ভিন্ন ছিল। আর এখন পুরোপুরি অন্য জগতের মধ্যে দিয়ে সময় কাটছে।
আমি যখনই সে ভদ্রলোককে আমার বাসার নিচে প্রতিদিন দেখতে পাই, আমি তার আচরণ খেয়াল করি। তিনি যখনই আমার দিকে তাকিয়ে হাসেন সেটা আমার কেন জানি ভালো অনুভব হয় না। আমি চেষ্টা করি তার চোখ এড়িয়ে চলার। প্রতিদিন নিয়ে রাস্তায় এমন হাজারো চোখ আমাদের নিরব উদ্দেশ্যে তাকিয়ে থাকে। যার কোন যুক্তিগত কারণ নেই। আমি বিশ্বাস করি তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারবেন না। তবুও এত ক্লান্ত পড়ে এসব ভাবার সময় হয়না। বাসে করে যখন অফিসে যাচ্ছিলাম তখন ছোট ছোট দুটি হাত আমার কাছে সাহায্য চাইলো। যাদের আমি ফেরাতে পারিনি। প্রতিদিনের এই ক্লান্ত সময়ে অনেকগুলো ছোট ছোট গল্প তৈরি হয় নিজের মধ্যে। কিছু কিছু গল্প এড়িয়ে চলতে পারলেও কিছু একেবারেই এড়িয়ে চলা যায় না। কিছু ছোট গল্প নিজের একটি সম্পূর্ণ দিনকে আনন্দের করে তোলে। আবার কিছু গল্প কিছু সেকেন্ডের হলেও সেটা কষ্ট দিয়ে যায়।
আমার একটি দিন যেখানে অনেক বেশি ব্যস্ততা থাকে। এখন আর আগের মতো ছুটি কাটানো হয় না। না, ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেওয়া। আমার দিন এখন ব্যস্ততার মধ্যেই যায়। এটা এক ধরনের আনন্দ দেয়, কারন বাসায় বসে থাকার থেকে ব্যস্ত থাকা বেশ ভালো।
এটি শিশুদের সম্পর্কে একটি জিনিস, তারা সর্বদা ভালবাসা অনুভব করতে চায়, এটি দুর্দান্ত ছিল আপনি তার জন্য একটি উপহার কিনেছিলেন, এটি পড়াশোনার একটি জিনিস, এটি সর্বদা চাপযুক্ত।
কিন্তু এটা ভালো লাগছে যে খুব বেশি সময়সূচী থাকা সত্ত্বেও আপনি সেগুলো পরিচালনা করতে পেরেছেন।