পৃথিবী আজব এক জায়গা।এখানকার মানুষ গুলো আরও আজব।আমরা সবাই সুখের পিছে ছুটে মরি।এগুলো বস্তাপচা কথা মনে হচ্ছে তাই না,এগুলোকেই নতুনভাবে বলি।যে সুখের পিছণে আমরা ছুটি, যদি জিজ্ঞেস করা হয় এই সুখ বলতে কি বুঝো তখন এর জোরালো সংঞ্জা কেউ দিতে পারবে না।ঐ যে একটা কথা আছে চিলে কান নিয়ে গেছে কিন্তু কার কান নিয়েছে সেটা কেউ জানে না, কান খুঁজে সবাই ক্লান্ত।এবার মনে হতে পারে সুখের সংঞ্জা সবার জানা। তাহলে সেটা কি। ভালো থাকার নাম সুখ।ভালো থাকার নাম যদি সুখ হয় তাহলে আমরা ভালো থাকি কিসে।ভালো খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থানে। তাই যদি হয় তাহলে ভালো খাদ্য কি। এর কি কোন নির্দিষ্ট প্রকার আছে। যদি থাকে তাহলে এটা অর্জন করা হয়ে গেলে একটা পূর্ণ।এবার আসি বস্ত্রে। ভালো বস্ত্রের নির্দিষ্ট কোন নাম্বার আছে। যা দেখে আমরা বুঝবো এটাই ভালো বস্ত্র।বাসস্থানের ক্ষেত্রে একি প্রশ্ন প্রযোজ্য । কিভাবে বুঝবো ভালো থাকার জন্য কেমন বাসস্থান প্রয়োজন।
কেউ যদি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করে সে ছোট বেলা থেকে হয়তো নাস্তা খেয়েছে পান্তা ভাত। নিম্নমানের সস্তা কাপড়চোপড় পড়েছে। ভাঙা ঘরে ঘুমিয়েছে।এরপর সে যখন বড় হয়েছে তখন সে যদি ভালো একটা চাকরি পায় তাহলে সে মাছ মাংস খেতে পারবে। দালান ঘর বানাতে পারবে। দামী কাপড় পরিধান করতে পারবে। তাহলে তো সে সুখি মানুষ হওয়ার কথা। কিন্তু সে কি তাতে সন্তুষ্ট হবে। নিশ্চয় সে আরও ভালো কিছু পাওয়ার আসায় ছুটবে।
মনে করা যাক একজন লোক কোটিপতি। তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক।গ্রাম,শহর,পাহাড়,সমুদ্র সবখানে তার বাড়ি আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পোশাক সে পরিধান করে । খাবার সেকি আর বলতে হয়, তিন বেলা রাজকীয় ভোগ গ্রহন করে। তাহলে সে নিশ্চয় সুখি মানুষ। তার জীবনে কোন দুঃখ নেই, কোনো না পাওয়া নেই, কোন আপসোস নেই।তাহলে কেনো সে সুখী হবে না। কিন্তু আপনি তার কাছে যান দেখবেন সে চাঁদে বাড়ি কিনবে, মঙ্গল গ্রহে ঘুরতে যাবে এসব আয়োজনে ব্যস্ত। তাই চাওয়া যতক্ষণ পাওয়ায় পরিবর্তিত না হয় ততক্ষণ সে শান্তি পাবে না।
যে যেই অবস্থায় আছে সে চাই তার থেকে ভালো অবস্থায় যেতে। আমি অন্যের কথা না বলে নিজের একটা কথা বলি। আমি যখন গ্রামে ছিলাম তখন সাইকেল চালাতে শিখেছি। যেহেতু আমি খুব ছোট বেলায় ঢাকা এসেছি তাই গ্রামে আমার সাইকেল ছিলো না। আমি আমার মামার সাইকেলে চালানো শিখেছি। ঢাকায় আসার পর আমার স্বপ্ন ছিলো সাইকেল কিনবো।অবশ্য গ্রামে যখন ছিলাম তখন চাইতাম একটা স্বাভাবিক ছোট লাল সাইকেল,কিন্তু শহরে আসার পর নতুন মডেলের "গিয়ারের সাইকেল" দেখার পর মত পাল্টে গেলো।তারপর অনেক অপেক্ষার পর নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন সাইকেল কিনলাম।কিন্তু এখন আর ঐ সাইকেল চালাই না,কত বছর যাবৎ স্পর্শ পর্যন্ত করি না,ঘরের এক কোণে অবহেলায় পড়ে আছে।অথচ এককালে রাস্তায় বের হলেই শুধু সাইকেলের দিকে তাকিয়ে থাকতাম,রাতে সাইকেলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম।এখন আর সেই সাইকেল আমাকে তেমন টানে না,আমার কাছে মূল্যহীন।
আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা পোস্ট প্রায়ই চোখে পরে একজন লেংড়া লোক যার পা নাই সে ভাবে আমার যদি পা থাকতো, পায়ে হাঁটা পথচারী ভাবে আমার যদি একটা সাইকেল থাকতো,যার সাইকেল আছে সে চাই মটর সাইকেল, যার মটরসাইকেল আছে সে চাই প্রাইভেট কার,যার প্রাইভেট কার আছে সে চাই বিমান এভাবেই বাড়ে মানুষের চাহিদা। যার পা নেই সে যদি পা চাই এটা যৌক্তিক। কিন্তু অন্যরা যা আছে তাতে কখনো সন্তোষ্ট না। যার যত আছে সে ততো বেশি চাই।আমি দেখেছি গ্রামের যেসব কৃষকদের গোলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু,পুকুর ভরা মাছ তারা আবার গোলা বানায় যাতে আরও বেশি ধান রাখা যায়,গোয়াল তৈরি করে যাতে আরও গরু রাখা যায়। এভাবে আরও চাই,আরও চাই করতে করতে মানুষ হাতে কাছে থাকা সুখ ভোগ করতে পারে না।
তাই আমার কাছে মনে হয় মানুষ দুঃখ বিলাসী প্রানী। এই যে সুখ সন্ধান এটাও তার দুঃখ বিলাসেরই অংশ।মানুষ এটাই শুনতে এবং নিজেকে মানাতে পছন্দ করে যে সে দুঃখে আছে, সুখে নেই।
মানুষের চাহিদা কখনো কমে না, দিন দিন সেটা আরো বাড়ে। আমরা আসলেই দুঃখ বিলাসী মানব। আমরা ভালো থাকলেও কেনো জানি সবাইকে বুঝাইতে চাই আমরা ভালো নেই। একটা ব্যাপার খেলার করছি যে মানুষ রোমান্টিক গান শোনার থেকে স্যাড সং শুনতে বেশি দেখা যায় ।
সুখকে খুঁজা বাদ দিলেই হয়তো আমরা সুখী হতে পারতাম।