বাংলার প্রকৃতিতে বর্ষাকাল অভাবনীয় এক সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়।তবে এই সৌন্দর্য শহরে থেকে উপভোগ করা যায় না,উপভোগ করতে হয় গ্রামের কোনো পরিবেশে থেকে।গ্রামের সবুজ পরিবেশকে বর্ষা তার জল দিয়ে ধুয়ে মুছে আরো সবুজ করে তুলে।যারা শহরে থাকে বা যাদের গ্রামের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই তারা এই সৌন্দর্যের দেখা কখনো পাই নি।গাছের পাতার উপর যখন বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে তখন, পাতার দোল খাওয়া সৌন্দের্যের একটি উদাহরণ।
ঐসময় নদী-নালা,খাল-বিলের পানি বেড়ে গিয়ে উপচে আশপাশের জমিতে চলে আসে।তাতে আশপাশের জমিগুলোও নদীর অংশ বলে মনে হয়।কোনো জিনিস যখন দিগন্ত স্পর্শ করে বা শুরুর অংশটুকু দৃষ্টি সীমার মধ্যে থাকলেও শেষ অংশটুকু দৃষ্টসীমার বাহিরে চলে যায় তখন তার সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যায়।যখন পানির পরিমাণ সর্বোচ্চ হয় তখন সেই সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কিছু দিন এমন হয়,দিনরাত ছব্বিশ ঘন্টাই বৃষ্টি পড়তে থাকে থেমে থেমে।এই দিনকে বাদলা দিন বলে,আমাদেন গ্রামের ভাষায় "গাদলা" বলে।এই দিনে ঘরে থাকতে হয় সারাক্ষণ, তাই ঘরে বিভিন্ন শুকনা খাবার খাওয়ার আয়োজন করা হয়।যেমন শীমের বীচি ভাজা,বাদাম,বুট ভাজা,চাল ভাজা কাঁঠালের বীচি ভেজে লবণ দিয়ে,মরিচ দিয়ে খাওয়া।এগুলো মাটির চুলার মাঝে বালু দিয়ে ভাজা হয়।
বর্ষামৌসুমে ছেলে মেয়েরা গোসল করার জন্য বর্ষার নতুন পানিকে বেচে নেয়।বর্ষার নতুন পানিতে ঠাইটম্বুর হয়ে থাকা পুকুর বিলে তারা সাঁতার কাটে।পানিতে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলে।
বৃষ্টিতে ভিজা বর্ষাকালের এক বিরাট অংশ।বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করার মধ্যে কতো আবেগ,কতো আনন্দ না জানি লুকিয়ে থাকে।বিশেষ করে ছোট ছেলে মেয়েরা মায়ের বকুনি খেয়ে হলেও বৃষ্টি পড়লে তারা ভিজবে।বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়াদৌড়ি করার মাঝেই তাদের আনন্দ।
এই বর্ষা মৌসুমে মাছ মারার দুম পড়ে।নদী-নালা,খাল-বিল সব জায়গায় মাছ মারার জন্য মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতি তৈরি করে।কেউ জাল দিয়ে মাছ মারে,কেউবা আবার লোহা দিয়ে তৈরি খুঁচ দিয়ে মাছ মারে।জালের বিভিন্ন নাম,ধর্ম জাল,ঠেলা জাল।তাছাড়াও বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র বানানো হয়।একেক জায়গায় এগুলোকে একেক নামে ডাকা হয়।
রাত্রে লাইটের সাহায্যে খুঁচ দিয়ে মাছ মারারকে "বাতি বাওয়া" বলে।দলবেঁধে ছেলেরা বাতি বাইতে যায়।মাছ রাতে চুপচাপ এক জায়গায় বসে থেকে,লাইটের মাধ্যমে ফোকাস করে,খুঁচ বিঁধিয়ে দেওয়া হয় মাছের শরীরে।
অনেকে আবার পানিতে নেমে হাত দিয়ে মাছ ধরে।হাত দিয়ে কাদার মধ্যে মাছ খুঁজতে থাকে।যেসব মাছ কাঁদার সাথে লেগে বসে থাকে,সেগুলোকে মুষ্টি মেরে ধরে ফেলে।অবশ্য এই কাজটা সবাই পারে না।তাছাড়াও মাছ ধরা একটা শিল্পের মতো।যে কেউ চাইলেই পারে না।যার এই শিল্পগুণ আছে সেই মাছ ধরতে পারে।
এই সময় বিভিন্ন ধরনের নৌকা দেখা যায় পানিতে।ক্ষেতেও পানি চলে আসে,ছোট ছেলেরা কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানায়,গ্রামের ভাষায় একে "বোরহা" বলে।ভেলাতে করে তারা ঘুরে বেড়ায়।কেউ বা মাছ মারে।কেউবা মনের আনন্দেে ঘুরে বেড়ায়।
এই সময় পাট পচানো হয়।তাতে কিছু গন্ধ হয় পরিবেশে।কিন্তু কৃষকের মুখে অবশ্যই হাসি ফুঁটে।তবে বর্ষার ভয়ংকর রুপ দেখা যায় যখন বৃষ্টির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। তখন বন্যা হয়।আর বন্যা বয়ে নিসে নানান ধরনের অসুবিধা।বন্যা ছাড়া বর্ষাকাল সুন্দর, কিন্তুবন্যা হলে বর্ষাকালের মতো অভিশাপ আর নাই।
বর্ষাকাল গ্রামে থেকে উপভোগ করা যায়।আর শহরে বর্ষাকাল মানেই রাস্তায় হাঁটু সমান পানি।আর কিচ্ছু না।
Congratulations!
Curated by
@sourov
Join us on Discord
A Youth Run Community Organization from Bangladesh
50SP100SP200SP500SP1000SP2000SP5000SP10000SP
Hi @shaonashraf, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @simplifylife!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON