আমাদের আশেপাশের সব কিছু যেমন আমাদের পরিবেশ,ঠিক তেমনি আমাদের আচার-আচরণ, চলাফেরা, যোগাযোগ, ভাষা সব কিছু মিলে আমাদের সংস্কৃতি।স্থান, কাল ভেদে এ সংস্কৃতি ভিন্ন হয়।আপনি যে পরিবেশে বড় হবেন সে পরিবেশের সংস্কৃতি আপনার মধ্যে ধারণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই নতুন পরিবেশের সংস্কৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে।
আর মানুষ যতই আধুনিক আর ডিজিটাল হোক না কেনো তার ভিতরে একটা রক্ষণশীলতা থেকেই যায়।সে চাইলেই তার অভ্যাসগুলো জীবন থেকে মুছে দিতে পারে না।অভ্যাসের দাস বলে যা আছে সেটা মনে হয় সবচেয়ে বেশি খাদ্যাভাসে দেখা যায়।মানুষ যেখানে থাকে, যেসব খাবার খেয়ে বড় হয় সব খাবারেই সে অভ্যস্ত হয়।স্থান পরিবর্তনে অনেকে ধীরে ধীরে এ অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারলেও অধিকাংশ লোক তা পারে না।আবার একটা অংশ এমনও আছে না খেয়ে থাকলেও নিজের খাদ্যাভাসের বাইরে একটা দানাও দাঁত দিয়ে কাটবেন না।
ছোট বেলা থেকে আমার খাদ্যের প্রতি একটা অনীহা রয়েছে।যাকে সোজা ভাষায় বলে খাবারের প্রতি রুচি নেই।আমি খুব কম খাওয়া দাওয়া করি,খুব অল্প পরিমাণ খাই।কিন্তু আমার মায়ের হাতের কিছু খাবার যা আমার কাছে অমৃত। আমাদের এলাকায় পুঁঠি মাছের ভেজা এক ধরনের শুটকি হয় যেটাকে আমরা চ্যাপা বলি।হয়তো কোনো একবেলা আগের তরকারি আছে আমি খাবো না তখন আম্মা রসুন, কাঁচামরিচ, চ্যাপা 'চাট কোলায়' ভেজে হাতে মেখে ভর্তা করে দিতো।আহা কি মজাদার খবার।লাখ টাকার খাবার কিনে খেলেও এ স্বাদ পাওয়া যাবে না।হাতে চাল করলে চালের একটা অংশ ভেঙে যায় সেই অংশ কে আমাদের এলাকায় 'ক্ষুদ' বলে।সে 'ক্ষুদ' বেটে সেটা দিয়ে ছোট গোলআকৃতির পিঠা বানিয়ে তার মধ্যে চ্যাপা শুটকির ভর্তা দিয়ে, আম্মা "চ্যাপা পিঠা" বানায়। এ খাবার খেতে পেরেছি তাতেই জীবন স্বার্থক এমন মনে হয়।এতো গেলো চ্যাপার রেসেপি।
আমাদের গ্রামের "মাংসের পিঠা"। এর চেয়ে ভালো খাবার হয় নাকি।সমুচা যেভাবে বানায় ঐভাবে,ভিতরে থাকে মাংসের কিমা।আর আম্মারা মাংসের যে কিমা বানায়, আমার কাছে মনে হয় এর চেয়ে মজার খাবার আর দুনিয়াতে নেই।
পুঁঠি মাছের ভাজি। আসলে আম্মার রান্না এসব খাবার যেটার নাম বলবো প্রত্যেকটা সেরা। এর কোনো টার সাথে কোনো টা তুলনা করার দৃষ্টতা আমার নেই।বেপারটা এমন নয় যে,আম্মার হাতের রান্না বলেই সেরা।এসব আমাদের গ্রামের খাবার,অন্য যে এটা রান্না করতে পারে তারটাও আমার কাছে সেরাই মনে হবে।
এরপর আসেন ভাষায়। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা এ কথা সত্যি। কিন্তু আমরা মায়ের মুখ থেকে শিখি মায়ের আঞ্চলিক ভাষা। এটাই প্রকৃত পক্ষে আমাদের মায়ের ভাষা।ইংরেজি, ফার্সি,উর্দু, হিন্দি যতো ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করি না কেনো।সে মায়ের মুখের ভাষায় চিরচেনা এক সুখ যা অন্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা কিছু সামাজিক রীতির সাথে পরিচিত।এগুলো কে সামাজিক রীতি বললে ভুল হবে।এগুলো আসলে কুসংস্কার। এখন শিক্ষিত হয়েছি বুঝি এগুলো কুসংস্কার তাও অনেক সময় পাশ কাটিয়ে যেতে পারিনা।যেমন ছোটবেলা থেকে আমরা বিশ্বাস করতাম রাতে সাপের নাম নেওয়া যাবে না।কিন্তু কেনো কখনো তা জানতাম না।এখনো রাতের বেলায় সাপের নাম মুখে নিলে বুকের ভিতর ধপ করে ওঠে।শিস বাজানো যাবে না,শিষ বাজালে সাপ চলে আসবে।এখনও এই শহরে বসে রাতের বেলা শিষ বাজালে হঠাৎ মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে।
এছাড়াও ছোট বড় কত অভ্যাস গড়ে ওঠে আমাদের তার কোন হিসেব নেই। আমরা যতোই স্থান পাল্টাই আর যতোই সময় অতিবাহিত হোক এসব অভ্যাস আমরা বহন করে চলি। ইচ্ছে করে আমরা জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না।দিনে দিনে এসব অভ্যাস বাস্তবজীবনে কিছুটা ম্লান হলেও হৃদয়ের মাঝে থেকে যায় অম্লান।
মায়ের হাতের রান্নার কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না ,ভাই শৈশবের অভ্যাসগুলো অনেক সময় পরিস্থিতির কারণে নিজের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যায় তারপরও আপনি একদম ঠিক বলেছেন এগুলা মনের ভিতর থেকে যায় মাঝে মাঝে মনে পড়লে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে
এই স্মৃতিগুলোই মনের শান্তির খোরাক...
Hi @shaonashraf, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON