কুড়িয়ে পাওয়া প্রেমপত্র

in BDCommunity4 years ago (edited)

এই মাঝরাতে যে আমার চোখে বিন্দু মাত্র ঘুমের আনাগোনা নেই তার সমস্ত দায়ভার আপনার।অবাক হচ্ছেন!কেনো আপনার উপর দায় দিচ্ছি।গত চারটি বৎসর যাবৎ প্রতিটি রাত্রে সমস্ত পৃথিবী যখন ঘুমের অতল গভীরে ডুবে থাকে,তখন আমি ডুবে থাকি আপনার মাঝে।তাই আপনাকে পাশ কাটিয়ে ঘুম আমার কাছে আসবে সেই সাধ্য ঘুমের নেই।

1*FJyUNbW62uaKo5a3mtxMYg.jpeg

শুধু রাত্রে কেনো,যতক্ষণ আমার এই মস্তিষ্ক সচল থাকে ততক্ষণ আমার চারপাশে শুধু আপনার আবহ্।কিভাবে না জানি আপনি আমার শিরা-উপশিরা রক্তে মিশে গেছেন।আমার প্রতিটা বইয়ের পৃষ্টা ও খাতায় শুধু আপনার নামের প্রতিচ্ছায়া।জীবনানন্দ দাশের ''বনলতা'' থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের ''অপরিচিতা'' সবার মাঝে আমি আপনাকেই খুঁজার নিরন্তর চেষ্টা করি।

দিন দিন আপনি আমার কাছে প্রানীর বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান "অক্সিজেন" হয়ে উঠছেন।কে বলতে পারে হয়তো কিছুদিনের মধ্যে আপনি আমার "প্রাণভোমরা" হয়ে উঠবেন।

সে যাই হোক,আপনাকে আমি প্রথম কবে দেখেছিলাম আপনি কি সেটা জানেন?
সেই বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে?

না, তারও অনেক আগে,আপনার সাথে আমার একবার সাক্ষাৎ হয়েছিলো।তখন আপনার বয়স হয়েছিলো মোটে চল্লিশটা দিন।আপনি খাটের উপর শুয়ে হাত পা নাড়াচ্ছিলেন,আর আমি দরজার সামনে উঁকি মেরে আপনাকে দেখছিলাম।কোনো কালেই কারো ঘরের ভিতর প্রবেশ করার সাহস বা অভিপ্রায় আমার হয়ে উঠে নি।

সেইসব থাক।সেদিনের পর থেকে প্রায় দশটি বৎসর আপনার সাথে আমার কোনো সাক্ষাৎ হয় নি।তা যে হয়নি,সেক্ষেত্রে বিধাতা উত্তম কাজই করেছেন।

নিয়মিত সাক্ষাৎ হলে হয়তোবা আপনি আমার কাছে বিশেষ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতেন না।

দিনটি ছিলো,নববর্ষের চতুর্থতম দিন।আমার জীবনে আপনাকে দ্বিতীয় বার দেখার দিন সেই দশ বছর পর।সেদিন আপনার পরনে ছিলো সাদা লাল রং এর একটা ফ্রক।পোশাকে নববর্ষের আবহ্ স্পষ্ট। চুলগুলো ছোট করে চাঁটা ঘাড় অবধি।আর আপনার সৌন্দর্যের বর্ণনা আমি করতে পারবোনা।সেই সামর্থ্য বা সাহস এই হতভাগার নেই।শুধু,এইটুকুই বলতে পারি,ঐ অজপাড়াগাঁয়ে আপনার মতো দেবী তুল্য রূপের অধিকারী বালিকাকে দেখে আমি শুধু বিমোহিতই হয়নি,অবাকও হয়েছিলাম বটে।বিধাতা যেন আপনাকে নিজের হাতে খুব যত্নসহকারে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রকৃতিমা যেন তার রূপের বেশ কানিকটা অংশ আশীর্বাদ স্বরুপ আপনাকে বিলিয়ে দিয়েছে এমনটাই মনে হচ্ছিল।

বলার অপেক্ষা রাখে না ঐ সময়ই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাই।বলা বাহুল্য এটাকে আমি প্রথম দেখাই প্রেম বলতাম,যদিনা আপনার সাথে আমার নাবালেগ বয়সে দেখা না হতো।তারপর, মাসখানেক আপনার পিছনে ঘুরে বেড়ালাম,দৌড়জাপ করলাম,শুধু দূর থেকে আপনার অস্তিত্ব অনুভব করার জন্য।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে,সেই বৈশাখের পর তিন বৎসর আমি আপনাকে একটিবারের জন্যও দেখিনি।শহর থেকে গ্রামে যখনি যেতাম চেষ্টা করতাম আপনাকে একটিবারের জন্য দেখার,কিন্তু উপরওয়ালা তা হতে দিলো না।বিধাতার কি খেলা দেখুন যাকে আমি আমার অস্তিত্ব থেকে এক মূহুর্তের জন্যও সড়াতে পারিনা,থাকেই তিনটি বৎসর চর্মচক্ষে দেখতে পাইনি।

সে যাই হোক,মাঝেমধ্যে শহরের রমণীগুলোর মধ্যে আপনাকে খুঁজার চেষ্টা করতাম।কিন্তু আপনার সৌন্দর্যের তুলনায় তাদের সৌন্দর্য বড়ই Artificial লাগে।এই কথাও থাক।

আবার সেই বৈশাখ এলো। তিন বৎসর কেটে গেলো।এইবার আপনাকে যেভাবেই হোক দেখবো বলে মনস্কামনা স্থির করলাম।প্রতিক্ষিত দিনটি অবশেষে এলো।আমি ভাবতে পারিনি আপনার চেহারার এতো বড় পরিবর্তন হবে।সেই দেবীতুল্য বালিকা, আজ সাক্ষাৎ দেবী।আপনার ছোট করে ছাঁটা চুল এখন পিঠ অবধি নেমেছে।কপালের দিক দিয়ে কয়েকটা চুল কুঁকড়ে পড়ে রয়েছে।যা আপনার মুখের শ্রী আরো বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।সেই তিন বৎসর আগে যে বালিকা ছিলো তার মধ্যে শিশুসূলভ দৌড়ঝাঁপ,চঞ্চলতা ছিলো,
সেই চঞ্চলতা দমিত হয়ে তার জায়গায় লজ্জা স্থান করে নিয়েছে।

কাকতালীয় ভাবে সেই বৈশাখ, সেই লালসাদা জামা, সেই সেগুন গাছ তলা।তবে এইবার আর ফ্রক পরিহিত নয়।পরনে এইবার সেলোয়ার-কামিজ, পায়জামা,ওড়না।"বালিকা বয়সের" আপনার সৌন্দর্য বর্ণনায় আমি অক্ষম হয়েছিলাম।আর এই "কিশোরী" আপনার সৌন্দর্য আমার কেনো আমার চৌদ্দ পুরুষের ক্ষমতা নেই বর্ণনা করার।এইবারও এইটুকু বলবো,স্বয়ং মা বিশালাক্ষী আপনার সৌন্দর্যতে ঈর্ষান্বিত হবে সেটা আমি নিশ্চিত।

আপনার উপস্থিতি আমার চারপাশে বেহেশতের বাগানের ঘ্রাণ ছড়ায়।আপনার "চিন্তা-ভাবনা" আমাকে যেমন স্বর্গীয় সুখের অনুভূতি দেয়,তেমনি আপনার বিচ্ছেদ "পটাসিয়াম সায়ানাইড" এর মতোই তীব্র বিষাক্ত মনে হয়।

এই যে আমি আপনাকে এতোটা ভালোবাসি তা আপনার কাছে প্রকাশ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।অথবা রাজলক্ষী শ্রীকান্তকে যেমন ভালোবাসে আপনি আমাকে তেমন ভালোবাসবেন, সেই আশা আমি কস্মিনকালেও করিনি,করবোওনা।তবে একটা কথা চিন্তা করে দেখলাম,আপনার অজান্তে আপনার অনুমতি ব্যতিত কেউ আপনাকে ভালোবেসে যাবে,এটাতো বিরাট অন্যায়।বেশি কিছু নয়, সামান্য একটু অনুমতি চাচ্ছি,আমি আপনাকে চিরকাল ভালোবাসতে চাই।এই দেহের হৃদপিন্ড যতদিন রক্ত পাম্প করবে,ফুসফুস অক্সিজেন-কার্বনডাইঅক্সাইড নিয়ে খেলা করবে,এই মগজ আপনাকে ততোদিন ভালোবাসতে চায়।

ওহে আমার রাই কিশোরী সেই অনুমতি কি দিবে আমায়!

ইতি,
অধম

ধন্যবাদ

Sort:  

Hi @shaonashraf, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @zayedsakib!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON

আপনার প্রতিটি লেখা অনেক সাহিত্যের সমৃদ্ধ এবং ভীষণ আবেগঘন হয়। যেমনটি এই লেখাটাও হয়েছে। পড়তে ভালো লাগে।

ধন্যবাদ❤❤❤

Congratulations!

This post has been upvoted as @SteemitBD curation support. Steemit Bangladesh is the first youth-run community organization from Bangladesh to empower youths on hive.


Curated by @sourov

Join us on Discord
steemitf.pngtwitterf.pngyoutubef.pngfacebookf.pnginstaf.pngdiscordf.png

A Youth Run Community Organization from Bangladesh
50SP100SP200SP500SP1000SP2000SP5000SP10000SP