আমার মামাতো ভাই-বোন ছোটোমামার প্রতি একটা অভিযোগ করে,ওনি নাকি,কোনো জিনিস কিনার সময় বেশি দামে কিনেন,আর ঐ একি জিনিস বিক্রি করতে গেলে কম দামে বিক্রি করেন।আমি ক্রিপ্টোতে আসার পর দেখলাম, এই বেপারটা এখানেও আছে,এখানে সেটাকে বলে,"বায় হাই,সেল লো"বেশি দামে কোনো কয়েন কিনে,যখন সেটার দাম দ্রুত নামতে থাকে তারপর ভয়ে কম দামেই বিক্রি করে দেওয়া,আবার যখন বাড়তে থাকে তখন আবার বেশি দামে কিনা।আমার সাথেও এমনটা প্রায়ই ঘটেছে।বেশি দামে কোনো কয়েন কিনেছি,আবার কম দামে সেটা বিক্রি করে দিয়েছি।
এইবার বাড়িতে আসার পর আম্মা বললো,আম্মার একটা খাসি আছে বিক্রি করার মতো।বেশি বড় হয়নি,তবে আম্মা বিক্রি করে দিবেন।আম্মা একা মানুষ এতোগুলো একসাথে পালতে পারেন না।ছাগল মোট পাঁচটা হয়েছে।আরেকটা কারণ হচ্ছে, খাসি শুধু চুরি হয়ে যায়।ঘাস খাওয়ার জন্য যদি দড়ি থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়,তাহলে দেখা যায় সন্ধ্যার পর আর ফিরে আসে না।এসব ভয়ে আম্মা সিদ্ধান্ত নিলেন খাসিটা বিক্রি করে দিবেন।বাড়িতেতো আমি ব্যতিরেকে কেউ নেই,হাটের দিন আসলো।আম্মা পাশের বাড়ির এক বড় ভাইকে সাথে করে আমাকে পাঠালেন খাসিটাকে হাটে নেওয়ার জন্য।
খাসিটাকে নিয়ে গেলাম।গিয়ে ছাগলের হাটে দাঁড় করালাম।ক্রেতা আসছে দলে দলে।উপরে প্রচুর রোদ।আমি নিজে আমাদের খাসি নিয়ে দাঁড়িয়েছি এটাতো সমস্যা না,কিন্তু আমার সাথে যে ভাই এসেছে তার ঘাম দেখে, আমার শুধু কেমন জানি করছিলো,আমার জন্য অন্য কারো কোনো কষ্ট সহ্য করতে হলে আমার কাছে সেটা কখনই ভালো লাগে না।তাই আমি শুধু চাচ্ছিলাম তাড়াতাড়ি বিক্রি করে দিতে পারলেই ভালো হতো।এমন সময় এক ছাগলের বেপারি আসলো।সে এসে আমাদের খাসির দাম করলো ছয় হাজার।আম্মা বলে দিয়েছেন আট হাজারের কমে বিক্রি না করতে।কিন্তু বেপারি আমাদেরকে সহজ সরল দেখে,টান মেরে খাসির দড়ি নিয়ে গেলো।ছয় হাজারে আমরা বিক্রি করবো না,তবু সে খাসি নিয়ে নিচ্ছে জোর করে।তারপর খাসিটা নিয়ে নিজের ছাগলের দলের মধ্যে বেঁধে দিলো।তারপর আর জোর করে সাতশো টাকা বেশি দিলো।মানে মোট ছয় হাজার সাতশো টাকাতে বিক্রি করতে হলো।জোর করে নিয়ে নিলো।
এর দুইদিন পর,মামাতো ভাই পান্থ ফোন দিলো,সে নাকি খাসি কিনবে।কোরবানির গরু কিনা শেষ,কিন্তু হঠাৎ আবার মত হলো যে খাসিও কোরবানি দিবে।তাই আমাকে নিয়ে যাবে হাটে খাসি কিনার জন্য।আমি আরও বললাম যে আমার খাসির বাজার সম্পর্কে ধারণা আছে,কারণ সম্প্রতি আমি আমার খাসি বিক্রি করেছি।আমাদের গ্রামের নাম হোসেন্দী।প্রথমে কথা হয়েছিলো হোসেন্দী হাট থেকে কিনবো।পরবর্তী দূরের আরেকটা হাটের খবর পেলাম যেখানে নাকি আরও কম দামে পাওয়া যাবে।গিয়ে দেখি বারো হাজার টাকার নিচে কোনো খাসিই নাই।সবাই বলে,এগারো-বারো বিক্রি করবো না,এর উপরে হলে বলেন।আমি যে খাসি ছয়হাজার সাতশো টাকা বিক্রি করেছি সেটার মতো খাসি সাড়ে নয় হাজারের কমে দিবেনা।তো ঐদিন আর কিনলাম না।
এরপরের দিন হোসেন্দী হাটে গেলাম।আজই শেষ দিন,পরের দিন ঈদ।কিনতেই হবে যেকোনো মূল্যে।প্রথম গ্রামের হাটে দেখলাম মিল পড়লো না।শেষের দিন, দাম তাই আজ আরও চড়া।এরপর উপজেলা সদরে গিয়ে দেখি,সেখানে আরও রমরমা বাজার, মানে দাম আরও বেশি।পরে আবার গ্রামের হাটে ফিরে আসলাম,আর একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে,বেচাকেনা শেষ পর্যায়ে।মাথা গরম এখনও কিনতে পারলাম না।হুটহাট এসে একটা খাসি দাম করলাম,ওনি এগারো হাজার টাকা দাম চাইলো।পান্থ বললো সাড়ে নয়,দিচ্ছে না।আমি বলে ফেললাম দশ হাজার।দিয়ে দিলো।উত্তেজনায় কিনে ফেলার পর, খাসি নিয়ে আসার পথে ঠান্ডা মাথায় ভাবার পর দেখলাম,আরে আমি যেই বয়সের,সাইজের খাসি ছয়হাজার সাতশো টাকায় বিক্রি করলাম।সেটা থেকে অল্প একটু বড় খাসি দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনলাম।
আহারে এটাকেই হয়তো বলে,একি জিনিস বেশি দামে কিনা,আর কম দামে বিক্রি করা।