এই জুলাই মাস আসলেই অনেক কিছু মনে পড়ে যায়, বছর দুয়েক আগে জুলাই মাসেই তার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল । দুজন দুই পৃথিবীর মানুষ, হুট করে একটা ছাদের নিচে কেমন করে যেন জানি মিশে গেলাম । ঐ যে জীবন চলা শুরু, তারপর থেকে এখনো চলছে ।
নামের সামনে হয়তো ডাক্তার লেখা দেখে ,তার বাবা মনে হয় আমার হাতে তার মেয়েকে তুলে দিয়ে ছিলেন। কিন্তু সত্য কথা বলতে কি, একজন সদ্য পাস করা ডাক্তারের জীবনে যে কতটা ঝড় ঝাপটার স্বীকার হতে হয়, তা কেবল এই প্রফেশনের মানুষরাই জানে । দুচোখ ভরা স্বপ্ন , রোজ মনে হয় স্বপ্নের জন্ম হচ্ছে।
বিয়ের পর থেকে আসলে তার বাড়ি আর আমার দাদু বাড়ি ছাড়া ,হয়তো কোন জায়গায় একসঙ্গে যাওয়া হয়নি । হবেই বা কি করে, সাধ আছে সাধ্য তো নাই । এদিক থেকে অবশ্য আমি ইউটিউব কে অনেক ধন্যবাদ জানাই, দাদু বাড়িতে তো নদী আছে তাই ইউটিউবে সাগরের ভিডিও দেখে দাদু বাড়ির নদীতে গিয়ে ঝাঁপাঝাঁপি করতাম দুজন মিলে প্রথম দিকে । এভাবেই কেটে গিয়েছিল বিয়ের পরের মাসটা, যাইহোক স্মৃতিগুলো কিন্তু সুখকর আছে এখনো ।
ওই যে বললাম রোজ স্বপ্ন দেখি ,স্বপ্নের জন্ম দেই । স্বপ্ন জন্ম দিতে তো আর পয়সা লাগে না, তাই মাগনা স্বপ্ন দেখি । মনে হয় উড়ে যাবো ঐ দূর নীলিমায় যেখানে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘ ধরবো, উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের লবণাক্ত পানি ছিটিয়ে দেবো তার গায়ে, আমি মনে করি প্রতিটি মানুষেরই এরকম অদ্ভুত কিছু কিছু স্বপ্ন থাকে ।
আচ্ছা স্বপ্ন যদি বাস্তবে রূপ হয়, তাহলে কেমন হবে ! ধরেন, পৃথিবী শান্ত হয়েছে । আমি আর সে বেঁচে আছি । পাখির ডানায় তো চড়তে পারবোনা , তাই ইঞ্জিন চালিত পাখির সাহায্য নিয়ে চলে গেলাম সেই উত্তাল সমুদ্রের কাছে । যখন ইঞ্জিনের পাখির উপর উঠে হাজার ফুট উচ্চ থেকে নীল আকাশের বুক চিড়ে সাদা মেঘের ভিতর দিয়ে দুজন যখন নিচের দিকে দেখছি , তখন মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আমরাই মনেহয় সুখী মানুষ।
অতঃপর নীল সমুদ্রের নোনা জলের একদম কাছাকাছি। ছাতার নিচে আমি ডাবের জলে নিজের ভেতরটাকে হালকা করছি , আর সে ঝিনুক কুড়োতে ব্যস্ত। আর এভাবেই কেটে গেল দুই দিন নোনা জলের ভিতরে গা ভাসিয়ে । সে আমার মেঘ ধরতে চায়, বাস্তবেও নাকি এই তল্লাটে মেঘ ধরা যায় । তাই মেঘের সন্ধানে আমরা আবার গন্তব্য শুরু করলাম । অতঃপর পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথে সেই উঠে গেলাম সুউচ্চ চূড়ায়।ছোট ছোট কিছু বাঁশের ঘর, ঘরগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমন আকর্ষণীয় । আপনার মনের হাজারো বিষাদ ভুলে দেওয়ার জন্য,ঐ ঘরগুলোর জানালা থেকে ওই দূরের আকাশের সৌন্দর্যটুকুই যথেষ্ট ।
ভোরবেলা নাকি এখানে ঘরগুলো থেকেই মেঘ ধরা যায়, তাই যদিও বর্ষাকাল তাই মেঘের আনাগোনা এখানে অনেক বেশি । অতপর পাহাড়ের চূড়ায় দুজন মিলে সেই ঘরে রাতে কিছু স্মৃতিচারণ করলাম । গুনগুন করে কেটে গেল রাত,মাহেন্দ্রক্ষণ আমাদের ডাকছে । জানালা খুলতেই দেখলাম শুধু সাদা আর সাদা চোখ যেন জুড়িয়ে গেল । কিছুটা বাদেই দেখলাম লাল রক্তিম আভা , একদম ডিমের কসুমের মতন । দেখলাম সূর্যোদয়, আহা কি সুন্দর। নিজের জন্মভূমি যে এত সুন্দর, তা হয়তো এই সৌন্দর্য না দেখলে অজানাই থেকে যেত।
যদিও ব্যপারগুলো পুরোটাই কাল্পনিক,তবে আমি চাই পৃথিবী শান্ত হোক আমার পদচারণ পড়ুক ঐসব সৌন্দর্যতম স্থানে ।
পৃথিবী খুব যলদিই শান্ত হবে।