সংশয় না কি বিশ্বাস - আপনার আস্থা কোনটায়?

in BDCommunity2 years ago

দার্শনিক পিরোর মতো সংশয়বাদী হতে বলছি না। কেবল নিজের বুদ্ধি-বিবেচনায় যা মনে হয় বলুন। নিচের কথাগুলো বিশ্বাস করেন?

১) পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।
২) মানুষ চাঁদে গিয়েছিলো।
৩। পারমাণবিক বোমা দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস করা সম্ভব।

এবার নিচের এই কথাগুলোও কি বিশ্বাস করেন?

১) এই মহাবিশ্ব কোনো সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ছাড়া তৈরি হয়েছে।
২) বিবর্তনবাদ যৌক্তিক।
৩) সমকামিতা স্বাভাবিক।

আমি জানি এখানে তিনটি দল তৈরি হবে। একদল উপরের পয়েন্টগুলোতে একমত হবে (ধার্মিক বা বিশ্বাসী)। আরেকদল প্রায় সবগুলো পয়েন্টে একমত হবে (নাস্তিক বা অবিশ্বাসী)। অন্য দলটি দ্বিতীয় পয়েন্টগুলোতে একমত বা দ্বিমত কোনোটাই করবে না (অ্যাগনস্টিক)। আরেকদলও থাকতে পারে যারা প্রথম পয়েন্ট এর কথাগুলো মেনে নিতে পারে না। তবে হাইভে তারা আছে কিনা আমি ঠিক নিশ্চিত না। আমি কাউকে কোনো কিছু মানাতে এই পোস্ট করি নাই। আমি কেবল চিন্তার বৈচিত্র্য তুলে ধরছি।

বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী-অজ্ঞেয়বাদী বা যা-ই হই না কেন, প্রত্যেকেই আমরা মানুষ। আমাদের প্রায় সকলেরই যাত্রা একই জায়গা থেকে শুরু হয়েছে। অনেকে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে এসে দিক পরিবর্তন করেছেন, অনেকে করেন নি। কেউ করবেন নাকি করবেন না সেটা নিয়ে কনফিউজড। আমি মাঝে মাঝে ভাবি এদের মধ্যে এই ভিন্নতা এর কারন কী? অনেক জ্ঞানী মানুষ ধর্ম মানেন, আবার অনেক জ্ঞানী মানেন না। মানে আমি বলতে চাচ্ছি যদি বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীদের মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষার বিরাট কোনো পার্থক্য থাকতো তাহলে নাহয় একটা দিক পছন্দ করা যেতো। কিন্তু এমন এমন মানুষ বিশ্বাসী আবার এমন মানুষ অবিশ্বাসী যে কাকে রেখে কার কথা ঠিক মনে করবো বোঝা যায় না। তাহলে একজন সাধারণ মানুষ যিনি বিজ্ঞান বা ধর্ম সম্পর্কে খুব একটা ভালো জানেন না তিনি কোন পথ অবলম্বন করবেন? নিজের বিচার-বিবেচনাও তো তেমন উন্নত না যে সেটার উপর ভরসা করে একদিকে চলে যাবে।

সাধারণত যারা বিশ্বাসী তারা বিশ্বাসী পরিবারেই জন্মে থাকেন বলেই আমার ধারনা। অবিশ্বাসী পরিবারে জন্মেও পরবর্তীতে বিশ্বাসী হতে পারেন, তবে এদের সংখ্যা খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না।

অন্যদিকে যারা বিশ্বাসী পরিবারে বা সমাজে জন্মে পরবর্তীতে অবিশ্বাসী হয়ে যান তাদের কিন্তু এক বিশাল মানসিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শৈশবকাল থেকে গড়ে ওঠা একটা বিশ্বাসকে ছুড়ে ফেলে দেয়া চাট্টিখানি কথা না।

আর এই দুই দলের মধ্যবর্তী স্থানে যারা আছে তারা আছে গ্যাঁড়াকলে। এরা না পারেন ভালো করে বিশ্বাস করতে আর না পারেন সব কিছু অবিশ্বাসের সাথে উড়িয়ে দিতে। এরা সত্যিই দুখী।

বাংলাদেশে আস্তিক-নাস্তিক দুটো দল তৈরি হয়ে আছে। দুদলেরই একটাই কাজঃ অন্যকে পচানি দেয়া। একদল বিভিন্নভাবে ধর্মের ভুল খুঁজে খুঁজে এর অসাড়তা প্রমাণ করতে ব্যস্ত। আরেকদল যৌক্তিকভাবে লেখা/কথার জবাব লেখা/কথা দিয়ে না দিয়ে ছুরি/চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দিতে আগ্রহী। নিদেনপক্ষে রাস্তায় মিছিল নিয়ে বের হওয়া আছেই।

যারা ধর্মে বিশ্বাসী না তাদের প্রতি আমি বলবো আপনারা তো জেনে বুঝেই ধর্ম ছেড়েছেন। তাহলে আর কেন এর অসাড়তা প্রমাণের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন? হ্যাঁ, আপনার বাক-স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে আপনি একজন বিশ্বাসী মানুষের অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গাটায় আঘাত না করলেই পারেন। একইভাবে, যারা বিশ্বাসী তাদেরকে বলবো, আপনারা কেন সমালোচকদের কথায় এতো বিচলিত হন? কারো কথায় কি আপনার ধর্মের ভিত নড়ে যাবে? পারলে কথার জবাব কথা দিয়ে দিন। না পারলে ইগনোর করুন। ওদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ করুন। সহিংসতা কোনো সমাধান না। সহাবস্থান বজায় রাখুন। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই যেন একই ছাদের নিচে বসবাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। আপনি যদি অবিশ্বাসী হন, তাহলে আপনার বিশ্বাসী বন্ধুটি যেন কোনভাবেই আপনার কথা দ্বারা তার বিশ্বাসে আঘাত না পায়। আবার আপনি যদি বিশ্বাসী হন, তাহলে অযাচিতভাবে একজনকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করবেন না। দল ভারী করে আপনার ধর্মের বা সৃষ্টিকর্তার কোনো উপকার হবে না।

সকলের কাছে সকলে নিরাপদ থাকুক।

Zahed_religious_peace_in_the_world_902dff96-59f6-4562-bc1e-f718089ca7d8.png

Image is created with the help of Midjourney AI

Sort: