অনিচ্ছা

in BDCommunity2 years ago (edited)

আব্বা, ও আব্বা! আম্মা, আমারে এইখানে কেডায় নিয়া আইলো? এমন অদ্ভুত লাগতাছে কেন আমার।

দরজা হিরিম করে আওয়াজ করে ভিতরে আম্মা প্রবেশ করলো। কি হইলো এতো চিল্লাইশ কেন? তোর হুশ কখন ফিরলো। চম্পার বিয়ার কথা শুইনাই তো বেহুশ হয়া গেছিলি। আমি পুরাই থ। কি এইসব কইতাছে মা। আম্মার পিছে পিছে চম্পার বাবাও রুমে আসে আমাকে অন্য রুমে নিয়ে যায়। রুমের ভিতর ময় মুরুব্বিতে ভরপুর। মাঝখানে আবার মসজিদের ইমাম সাহেব কুতুব হুজরের সাথে আরেকজন সবুজ খাতা নিয়ে কি যেন লিখতাছে। এইসব কি হইতাছে জিগাইতেই মুরুব্বিরা কয়ে উঠলো বাবা নতুন জামাইয়ের কথা বলা যাইব না। ইমাম সাহেব কি যেন দোয়া দরুত পরলো। কলেমা পড়াইলো কেন আমারে। আমি কি হিন্দু ওই গেছিলাম? কিছুই বুঝতাছি না।

আমাকে জোর জবরদস্তি কবুল বলাইলো। একবার না তিন তিন বার। কবুল না বলা ছাড়া উপায় নাই। কবুল বলার সাথে সাথে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে মিষ্টি খাওয়া শুরু। আব্বা আজ বাইচা থাকলে কিছুতেই এই অন্যায়টা করবার পারতো না। আমি আব্বা ও আব্বা বলে কান্না শুরু করাতে আম্মায় বলে উঠলো কি হইছে বাপজান, আব্বায় মনে পরে? খানা পিনা কইরা আব্বার কবরে গোর জিয়ারত কইরা আইসিস মনটা শান্তি পাইবো। আশে পাশে সবাই বলে উঠলো। আহারে কত্ত ভালা পোলাডা, আব্বারে কত ভালোবাসে। এমন পোলা এই যুগে পাওয়াটা খুব কঠিন। আমি আর কিছু বলতেও পারি না। সব তো নাটের গুরু আম্মায়। আমি আল্লার কাছে কত বার কইছিলাম যে আমার বিয়াটা যেন একবারে যারে চিনি না তার সাথে হয়। কিন্তু কি হইলো লেংটা কাল থেইকা যার লগে বড় হইছি তার লগেই বিয়া হইলো। আভি কার কাছে বিচার দিমু।

এইদিক আমার জান যায় যায় অবস্থা ঐ দিক নাচ্চন কুদ্দন করতেছে পোলা পান। এলাকার দাদী নানীরা গিত গাওয়া শুরু করছে।

"গাছে আইলো নয়া ফুল
কইন্যার মুখে তিন কবুল
পাড়া পড়শি, জোয়ান বুড়া
বিয়ার নাচে হয় আকুল

সখি তোরা কই গেলি
শেষ হইয়া যায় জলকেলি
সারা অঙ্গ ভিজাইয়া চল
মনে খুশির দ্বার খুলি

কইন্যা সাজে রঙিন সাজ
জামাই মিয়ার মুখে লাজ
দুইটা ফুলের বাসর হইবো
কইছে প্রেমের কবিরাজ"

উহ! খুব আইছে বাসর? আইজ বুঝামু বাসর কারে কয়। মুই তো মরছি মরছি চম্পা তোরে লইয়ায় মরুম।

মা ও আঙ্গিনায় গিয়ে গীতের তালে নাচ শরু করে দিছে। এদিক ক্ষুধায় আমার পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়ায়।

কিছুক্ষণ পর মা চম্পাকে আমার ঘরে নিয়ে আসে। আমি বললাম এই পাগলীটারে আমার ঘরে কেন নিয়া আইলেন? আম্মায় আমার কথা কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই চম্পারে কইলো এইটা আজ থেইকা তুমার ঘর। তুমিই এই ঘরে সুইবা। তোমার ঘর মানে? তাইলে আমার ঘর কোনটা? ধুর পাগলা আজ থেইকা তোরা স্বামী স্ত্রী এক ছাদের নিচে ঘুমাবি বইলায় চলে গেলো।

চম্পা আমার গা ঘেঁষাঘেষি করে বসে পরলো। আমি একটু সরে গিয়ে এই তুই আমার কাছে থেকে দূর হো। আমার কাছে আসবি না। কোন পাগলিরে আমার সাথে বিয়া দিল। সে এইসব শুনেই মেঝেতে গিয়ে সুইলো।

আমার একটু খারাপ লাগাতে বললাম। উপরে আয় বিছানায় শুইয়া পর। ও বিছানায় শুইতেই বললাম আইজকায় কিন্তু ফাস্ট আইজকায় কিন্তু লাস্ট।

চম্পা বলল ঠিক আছে। তারপর কিছুক্ষন চুপ থাকে আমার দিকে ঘুরলো। তারপর বললো তোর একটু হাতটা ধইরা সুই? না, তোরে আমি চিনি না? কিছুক্ষন পর তুই ঠিকেই আমারে চুমা দিবি। তুই বদের বদ। দিব্যি কইতাছি আমি চুমা টুমা কিছু দিব না। ঠিক আছে ঠিক আছে কিন্তু আর কিছু আবদার করবি না। কিছুক্ষন পর দেখি ঠ্যাং আমার উপর উঠায়া দিয়া চাপায়া ধরছে। ঐ তোরেনা কইছি উল্টাপাল্টা কাজ করবি না, ঘুমা বলেই পা সরায় দিলাম।
-এই রাইতে কৈউ ঘুমায় নাকি?
-কে বললো তোরে এইরাইতে ঘুমায় না?
-আমি সব জানি।
-কেমনি জানোছ?
-আমার আগেও একটা বিয়া হইছিল। এই রাইতে কি কি হয় সব জানি।
ছিঃ ছিঃ বলে আম্মা বলে চিৎকার দিতেই চম্পা মুখ চেপে ধরে বলে এই তুই বলদ নাকি? বাসর রাইতে কেউ আম্মারে এই ভাবে ডাকে?
-তুই আরেকটা বিয়া করছস আর আমি আম্মারে কমু না?
-ধুর বলদ, তুই মজাও বুঝোস না? শুনো আর কথা কইও না।চলো দুজনে ঘুমাই।

images (3).jpeg

Source