একটি ভয়ংকর ভ্রমণ কাহিনী

in BDCommunity2 years ago

ঘুম থেকে উঠে এমার্জেন্সি কাজ গুলো সেরে ব্রাশ করে গোসল করছিলাম। তখন বেশ কয়েকবার ফোনটা বেজে উঠলো। ভাবলাম বাজুক এই সাদ সকালে কে ফোন দিচ্ছে। গোসলটা সেরে উঠতেই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। রিসিভ করে হ্যালো কে বলতেই বললো। স্যার আমি স্টেশন মাস্টার। আপনার আজকের রুপসা এক্সপ্রেসে একটি কেবিন বুকিং দেওয়া রয়েছে। আপনি কি আজকে খুলনা যাবেন? আমি জি অবশ্যই। ওপাশ থেকে ওকে স্যার ধন্যবাদ। এই রকম এর আগে কখনো স্টেশন মাস্টার ফোন দিয়ে কনফার্ম করে নিই। এবারেই প্রথম। একটু অবাক হলেও ওতোটা গায়ে লাগাই নিই।

বেশ কয়েকদিন ধরে মনটা মন মরা হয়ে আছে। কোন কিছুই ভালো লাগছে না। ভালো না লাগাটা প্রায় মাঝে মধ্যে এভাবেই জেকে বসে। কোথাও বেরাতে যাওয়ার দরকার একটু ঘুরে আসতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই পরশুদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটু খুলনা যাবো। খুলনা হয়ে সুন্দরবনে গিয়ে কয়টা দিন কাটিয়ে আসবো। নেটওয়ার্ক এর বাইরে থাকবো কিছুদিন। আজকে রাত ন'টায় ট্রেন সৈয়দপুর স্টেশন হতে ছাড়বে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা মোতাবেক একটু নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম।

দুপরের খাওয়া শেরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। রাতে আমার অবশ্য ভ্রমণের সময় ঘুম হয় না। অনেকেরই দেখি নাক ডেকে ঘুমায়। আমার এই নাক ডাকার অদ্ভূত শব্দে চরম এলার্জি আছে। যাই হোক বিশ্রাম নেওয়ার সময় অপরিচিত এক নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার ফোন আসলো। অপরিচিত নাম্বারে আমি অবশ্য ফোন রিসিভ করি না। তবে আজ কি মনে করে রিসিভ করতেই ফোনের অপাশ থেকে প্রিয় কেমন আছো। আনেকদিন ধরেই তোমার সাথে দেখা সাক্ষাৎ যোগাযোগ নাই। আমি একটু অবাকেই হলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বলে বললাম কে আপনি চিনতে পারলাম না তো।
-কি আমাকে চিনতে পারলেনা। ভালো করে মনে কর। এতো জলদি আমাকে ভুলে গেলে।
-আসলেই আমি চিনতে পারছি না।

  • ঠিক আছে, আমি আবার রাতে ফোন দিব। ততোখনে তুমি মনে কর।

আমি আসলেই চিনতে পারছিলাম না। আমি অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে আমার নাম যে প্রিয় এটা আমার পরিবার এবং একান্ত কাছের মানুষ ছাড়া কেউ জানতো না। কিন্তু ইনি কে যাকে আমি চিনতে পারছি না। কিছুক্ষন ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।

রাতে খুলনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বার হওয়ার সময় আবারো ফোন। রিসিভ করতেই কি হল আমাকে চিনতে পেরেছেন। না এখনো তো চিনতে পারছি না সত্যিই আমি চিনতে পারছি না আপনি আসলে কে। একটু দয়া করে নামটা বলুন। উনি কিছুতেই বলছেন না। আমি বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললাম আমি এখন খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দিব। পরে কথা হবে। উনি বললেন সমস্যা নেই সরাসরি দেখা হলেই চিনতে পারবেন। আমি কিছুটা রেগেই ফোনটা রেখে দিলাম।

ন'টার ট্রেন সাড়ে নয়টায় স্টেশন হতে ছারলো। আমি যথা রীতি কেবিনে গিয়ে বসে একটু আয়েশে পিনাকি ভট্টাচার্যের 'স্বাধীনত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ' বইটি পড়ছিলাম। আমার অবশ্য রাজনীতি নিয়ে খুবই আগ্রহ। ফেসবুকেও টুকটাক রাজনীতি নিয়ে লেখালিখি করি। এ নিয়ে সরকারী দলের লোক জন, প্রশাসনেরও কম হুমকি ধমকি খাই নিই। বর্তমান সময়টি একটু টানটান উত্তেজনা চলছে। বেশ কয়েকজন অনলাইন এক্টিভিটিস সহযোদ্ধাদের লেখালেখির কারনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা খেয়েছে। বেশ কয়েকজন জেলেও আছে। রিমান্ডের উপর রিমান্ড। জামিন ও হয় না সহজে এই মামলার। এই ভয়ে অনেকেই লেখালেখি ছেড়েই দিয়েছে। আমিও আগের মত এখন আর লেখি না। টুকটাক লেখি নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই। কবে যে আমাকেও তুলে নিয়ে গুম করে তার কোন ঠিক নাই।

যাই হোক বই পড়রার সময় কফি হলে একটু জমে যায়। তাই কফি আনতে বলেছিলাম। কেবিনে দরজায় নক করতেই ভিতরে ঢুকার অনুমতি দিলাম। বইয়ের দিকেই আমার মনোযোগ। ভিতরে প্রবেশ করতেই বলে উঠলো প্রিয় এইবার চিনতে পেরেছো কে আমি। আমি একচু অবাক হয়ে উঠে বসতেই আরো কয়েকজন ভিতরে প্রবেশ করলো। তারা এমন ভাবে চারদিকে ঘিরে দাড়িয়েছিল যে আমি এক কোনে ঠেসে দাড়িয়ে রইলাম। একজন কমর থেকে আর্মস বাহির করে আমার কপালে ঠেকে বললো চুপচাপ আমাদের সাথে চল। আরেকজন একটা ভেজা গামছা বাহির করে আমার চোখ বাধলো আরেকজন আমার দুই হাত পিছনের দিকে বেধে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি চিৎকার করে বলতে থাকলাম কই নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে। অন্যান্য যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললাম এরা আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই ভয়ে চুপ। একজন শুধু বললো ভাই এনাকে এইভাবে কেন নিয়ে যাচ্ছেন। তার কোথায় কেউ কর্নপাত করলো না। অতপর .......

20201029_131659.jpg

Sort:  

অসমাপ্ত মাসুদ রানার বইগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।কত বছর বইয়ে হাত দেইনা।খুব সুন্দর ভয়ংকর আপনার ট্রেন কাহিনী বাকি অংশটুকুর অপেক্ষায় রইলাম। যেন সেটা বাস্তব নয় স্বপ্ন হয়।

ধন্যবাদ ভাই কষ্ট করে পড়ার জন্য। পরের পর্ব আর লেখার ইচ্ছা নেই ভাই।