আমরা মানুষের ভালোবাসা নিয়ে অনেক কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়েছি। মানুষের অন্য প্রানীর প্রতি ভালোবাসা নিয়েও অনেক সাহিত্য লেখা হয়েছে। যেমন শরৎচন্দ্রের মহেশ। সে তুলনায় অন্য প্রানীর ভালোবাসা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে লেখা খুবই কম।
আজ আমি এক জোড়া পাখির গল্প বলবো। আমার টিয়া পাখি। পাখিও যে মানুষকে কি পরিমান ভালোবাসতে পারে সেটা নিয়ে আল মাহমুদের একটা অসাধারণ কবিতা আছে। কবিতার নাম 'কবিতার কথা'। কবি সেখানে দেখিয়েছেন, এক ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে একটি ময়না পাখি পোষে। আদরে আব্দারে পাখিটার নাম রাখে কবিতা।
কেউ বাইরে থেকে বেড়াতে আসলেও পাখিটাকে যদি কবিতা বলে ডাকতো, পাখিটা খুশি হয়ে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে বলতঃ ভালোবাসি ভালোবাসি।
মেয়েটার বয়স্ক বাবা বিরক্ত। একে তো তিনি পশু পাখি পোষার বিরোধী, তার উপর পাখিটার এধরণের রোমান্টিক কথাবার্তা তার রক্ষনশীল মনে একধরনের বিরক্তির উদ্রেক করতো।
মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় একদিন। যাওয়ার সময় সে পাখিটাকে পিতার হাতে দিয়ে যায়। বলে যায় এর যত্ন নিতে। বধু সাজে সজ্জিত কন্যাকে তো আর পিতা বলতে পারেন না, একে সংগে করে নিয়ে যা।
কিছুদিন পর শশুরবাড়ি থেকে মেয়ে চিঠি লিখে পাখিটাকে উড়িয়ে দিতে। কারন তার ভয় হয়- ব্যস্ত বাবা হয়ত সময় মত দানাপানি দিতে ভুলে যাবে। চিঠি পেয়ে বাবাও খুশি হয়। তিনি খাঁচা খুলে দেন।
কিন্তু কি আশ্চর্য! পাখিটা উড়ে চলে যায় না। বরং খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে বলতে থাকে- ভালোবাসি, ভালোবাসি।
খাঁচা খুলে বৃদ্ধ পিতা ঘুমাতে যান। ঘুম থেকে উঠে দেখেন তখন পাখিটা খাঁচায়। চলে যেতে বললে পাখিটা বলে উঠে, ভালোবাসি। লোকটা ভাবতে থাকেন, তিনি এখন এই খাঁচাটির গোলাম। পাখিটাকে নিয়ে কি করবেন?
পাখি যে মানুষকে এভাবে ভালোবাসতে পারে, এরকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। অনেকেই পোষা পাখিকে উড়িয়ে দিয়ে অবাক হয়ে দেখেছেন, সেটি আবার ফিরে এসেছে। এটা একটু ব্যাখ্যাতীত টান।
তবে আজ আমি যে ভালোবাসার কথা বলবো, সেটা পাখির প্রতি পাখির ভালোবাসা। পাখি দুটি এনেছিলেন আমার সম্বন্ধী। তার এক বন্ধুর কাছ থেকে। তখন তারা সদ্য ডিম ফোটা ছানা। নিজে নিজে খেতেও পারে না।
আমরা পাইপ দিয়ে খাওয়াই। এভাবে যত্ন নিতে নিতে তারা বেড়ে উঠে। একসময় নিজে নিজে দাঁড়াতে শিখে যায়। তখন শুরু হয় বিপত্তি। একটা আরেকটাকে ঠোকরাতে শুরু করে।
তাদের ঝগড়া দেখে আলাদা খাঁচায় রাখার সীদ্ধান্ত নেই। রাখা হয়। আরো কিছুদিন যায়। ধীরে ধীরে তারা আরও বড় হয়ে উঠে। সপ্তাহ খানিক আলাদা থাকার পরে তাদেরকে একদিন গোসল করানোর পর একসাথে রোদে শুকানোর জন্য রাখা হয়।
একটা পাখি আরেকটা পাখির দিকে ঠোট বাড়িয়ে দেয়। আমরা ভেবেছি, আবার ঠোকরাবে। কিন্তু না। এই এক সপ্তাহ তারা একে অন্যকে মিস করেছে। তাই ঠোট দিয়ে পরস্পরকে আদর করতে থাকে।
এটা দেখে আমরা আপ্লুত হয়ে যাই। সীদ্ধান্ত নেই তাদেরকে আবার একসাথে রাখার। এখন তারা আবার এক খাঁচায় থাকে। কিন্তু এখন আর তার আগের মত ঝগড়া করে না।
তারা এখন আল মাহমুদের সেই ময়না পাখিটার মত ভালোবাসতে শিখে গেছে!
ওয়াও। সত্যিই পাখির ভালবাসা অসাধারণ। তাদের ভালোবাসা স্বার্থহীন। সুন্দর লিখেছেন।
ধন্যবাদ ভাই। এই লকডাউনে আপাতত ওদের সাথেই সময় কাটছে।
জি। এটাই ভালো।
অসাধারণ লিখেছেন ভাই। পাখিরাও অনেক বড় মনের অধিকারী। তাদেরকে যত্ন নিলে তারা এর প্রতিদান দিতে জানে
ধন্যবাদ ভাই। পাখিরা খুব ভালো বন্ধু হয়। তারা শুধু শুনে যায়। বলে না এবং খুব ভালো সঙ্গ দেয়।
Hi @tariqul.bibm, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Thanks a lot. Your upvote motivate us to do better.