(বন্ধু....বুঝে অামাকে, বন্ধু অাছে অার কি লাগে) গানটি হয়তো অামার জন্যই বানানো হয়েছিলো, গানটি অামি না শুনলে হয়তো পূর্ণতা পেত না। কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে ভিন্ন। তাহলে শুনুন, অাসলে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুপ্রিয় একটা ছেলে বলতে পারেন। বন্ধুর জন্য যতোটুকু করেছি, পরিবারের জন্য এখনো অর্ধেক করতে পারিনি হয়তো। তখন ২০১৬ সাল, দিনটি ছিলো শুক্রবার। গতকালের পরিকল্পনা, শুক্রবার সকালে পিয়ারাপুরের সাথে ক্রিকেট খেলা ২০০ টাকা করে। খেলায় জিতলে ঐ টাকা দিয়ে গ্রামে পার্টি করবো, নয়তো নিজেরাই টাকা তুলে গ্রামে পার্টি দিবো। হ্যা, শুক্রবার হলো, সকাল ৯ টায় সবাই ব্যাট বল হাতে নিয়ে খেলার মাঠে হাজির, (ইসলামপুর হাইস্কুল মাঠ) । ২ পক্ষ টাকা জমা দেওয়া হলো অাম্পায়ারের কাছে। তারপর খেলা হলো, খুব সম্ভবত ৩ রানে জিতেছিলাম অামরা, শেষের ১ বলে ৪ রান লাগে ওদের, বোলিং এ বন্ধু রতন বোলার, ওরা ১ রান নিতে পারে সেই বলে, হেরে গেলো ওরা, জিতে গেলাম অামরা। সবাই দৌড়ে এক যায়গায় হই, অানন্দ উল্যাসে ফেটে পড়ি সবাই। খুব টানটান উত্তেজনা পূর্বক খেলাটি হয়েছিলো। মনে হয়েছিলো, ঐ সময় যতোকিছুই হোক, দুনিয়া উল্টে গেলেও খেলা ছেড়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। তখন খুব ভালো বল করতাম। বোলিং হিসেবেই টিমে গণ্য ছিলাম। যাই হোক, খেলা শেষ ১২ টায়। তারপর বন্ধুরা সবাই গ্রামের দিকে রওনা দেই। গ্রামের রাস্তার পাশে ছিলো একটা (ডিপ) অর্থাৎ গভীর নলকুপ যেটাকে বলে, সবাই ঝাপিয়ে পড়ি গোসলে। মাটি কে সাবান বানিয়ে গায়ে মেখে ঘষাঘষি করে পরিস্কার হয়ে নেই। সবাই অানন্দ করতে করতে গোসল করি, এরপর অাজান হলো সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিই। নামাজ পড়লাম সবাই, নামাজ শেষ করে, এরপর গ্রামের সেই চিরচেনা টং এ বসলাম, পার্টি নিয়ে অালাপ অালোচনা হয়। রাতে বক্স বাজিয়ে খিচুরী পার্টি হবে। বিকেলে সবাই বাজারে যাই, বাজার করে অানি। বাজার ব্যাতিত শুধু বন্ধুরা কিনেছিলাম (কার্ড খেলার তাস, ১ প্যাকেট সিগারেট, মুড়ি, চানাচুর)। রান্না হয় মিথেল নামের বন্ধুর বাড়িতে, ছবিতে শুয়ে অাছি অামার পিছনে যে জন। যাই হোক, অামাদের ভিতরেই ৩ জনকে গ্রুপ বানিয়ে ওদের রান্নায় পাঠিয়ে দেই। ওরা ভালো রান্না পারতো। অার মিথেলের বাড়িতে কেউ ছিলো না সেদিন, ওর অাব্বু-অাম্মু অাত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। অার অামাদের প্লান অামরা রাত ১১-১২ টার দিকে খাওয়া দাওয়া করবো। এরপর ওর বাড়িতেই সবাই গল্প করতে করতে শুয়ে পড়বো। হুমম প্লান অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা রান্না করে, অার অামরা ৬ জন মুড়ি মেখে কার্ড খেলি অপরদিকে বাকিগুলো বক্সে গান দিয়ে গান শুনে। সবাই সবার মতো করে বিনোদন নিতে থাকি। রাত বাজলো ১২ টা, ওরা রান্না করে ওরাও অাড্ডা দিচ্ছে, অামরাও গেম খেলতেছি। এরপর, সবাই হঠাৎ প্লান করা হলো, সূজা চাচার পিয়ারা চুরি করে খাবো, রাত গভীর, চুরি করতে সোজা হবে। লিমন নামের এক বন্ধু এগুলোতে এক্সপার্ট। সে গাছে উঠে পিয়ারা পেড়ে সেগুলো মেখে চটচটি করে খাওয়া হয়। এরপর খাওয়া দাওয়া করলাম সবাই, তারপর বিড়ি-সিগারেট খেলাম (মজা করে)। তারপর সবাই এক রুমে ঢালাও ভাবে শুয়ে পড়লাম, টিম হয়ে হয়ে গল্প শুরু। অতীতের সৃতিগুলো মনে পড়ে যায় সবার, অতীতে কে কি করেছিলাম সেগুলো নিয়ে। অতীতের সৃতিগুলো নিয়ে হাসাহাসিতে মসকুল সবাই। কতোই না অাম, তরমুজ, লিচু, ডাব, তাল, শষা চুড়ি করে খাওয়া হয়েছিলো। যাই হোক, ঘুম যেনো সেই রুমে ঢুকতে চেয়েও ঢুকতে পারেনি। কেউ যদি ঘুমাতে ধরতো তাকে ডিসটার্ব করে ঘুম ভেঙ্গে দেওয়া হতো। এর ভিতরে গল্প চলতেই থাকে, সবার মনের কথাগুলো একে অপরের সাথে শেয়ার করতে থাকে, অার বিনোদন নেওয়া হয়। এরপর রাত বাজলো ৩ টা অাস্তে অাস্তে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
গল্প এটুকুতেই থেমে থাকেনি, এরকম দিন মাঝে মাঝেই কাটাতাম। কিন্তু সেদিন একটু স্পেশাল ছিলো এজন্যই যে, গ্রামের সব বন্ধুরাই পার্টছিপেট করেছিলো এবং অতীতের সৃতিগুলো নিয়ে বন্ধুদের সাথে রাত জেগে কথোপকথোন হয়েছিলো। সবমিলে সকাল থেকে দিনটা বেশ ব্যাস্ততা অার উত্তেজনা নিয়ে কেটেছিলো। যদিও এর থেকেও হয়তো ভালো অাড্ডা দিয়েছিলাম কিন্তু এজন্যই এটাকে সেরা বলবো কারণ এর ভিতরেই দূজন বেস্ট ফ্রেন্ড, একজন সম্পর্কে অামার চাচাতো ভাই হয়, নাম রতন, যার নাম উপরেও বলেছি এবং অারেকজন নাম মিথেল সম্পর্কে ভাস্তে হয়। অামরা সমবয়সি সবাই। সেই ছোটবেলা হতে একসাথে ১৯ টা বছর পথচলা। এরা দূজন শুধুমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ডি নয়, এরা ২ জন ছিলো অামার কলিজার টুকরা। অাপদে বিপদে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, হাসি-কান্নায়, দূঃখ দূর্দশায়, মজা মাস্তি, ঘোড়াঘুড়ি, খেলাধুলা সবকিছুতেই অাটার মতো লেটে থাকতাম অামরা। যাই হোক, পাড়ার বন্ধু বুঝতেই পারতিছেন কতো সৃতি। বলতে কষ্ট হচ্ছে, তবুও বলতে চাই, সাম্প্রতি ৮ মাস এর ভিতরে ২ মাসের ব্যবধানে দূজন পৃথিবী থেকে চিরকালের মতো বিদায় নেয় 😰। রতন সে একটা মেয়ের জন্য বিশ খেয়ে মারা যায় এবং মিথেল সে বগুড়ায় বাইক এক্সিডেন্টে মারা যায়😖।
এরপর যেনো ওদের মতোই অামার জীবনটাও থেমে যায়। থেমে যায় জীবনের গতিপথ। সবকিছুই যেনো এলোমেলো লাগতে শুরু হয়। মন মানসিকতা নষ্ট হয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় কয়েকটা দিনের জন্য। সেই সাথে এলাকায় সব পোলাপানের ভিতরে শোকের ছায়া নেমে অাসে। একজনের কষ্ট মেনে না নিতে নিতেই অারেকজন মারা যায়। বিধাতার এমন নিষ্ঠুরতা কিনা জানিনা অামরা মেনে নিতে পারিনি। সবে মাত্র যুবক, রতনের বয়স হবে ২১ এর মতো এবং মিথেলের বয়স হবে ২০ এর মতো। অামার ১ ক্লাস উপরে ওরা, কিন্তু ছোটবেলা হতে এক স্কুল, এক প্রাইভেটে একই যায়গায় পড়াশুনা করেছি। যাইহোক, অাড্ডাপ্রিয় অামি, সেই অাড্ডা নামের বিষয়বস্তু কাকে বলে, কত প্রকার কি কি তা অার নতুন করে জানা হয়নি। তারপরেও জীবন তো অার থেকে থাকেনা, জীবনের গতিপথে জীবন চলতেই অাছে। এখন ছোটখাটো অাড্ডায় বসলেই ওদের কথা, ওদের রেখে যাওয়া সৃতিগুলো ভেসে উঠে। বড় কোনো অাড্ডা, খেলাধুলা কিছুই হয়না তাদের ব্যাতিত। যাই হোক তাই, অাজকের এই কন্টেস্ট টা তাদের কেই ডেডিকেটেড করতে চাই। অাসলে এলাকায়, এমন কোনো অাড্ডা, কন্টার্স, খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলা, ঘুড়াঘুড়ি নাই যেখানে অামরা কন্ট্রিবিউট করিনাই। যাই হোক, নিচে সেই দূজন সহ একটা পিক দেখাতে চাই অাপনাদের।
অনেকটা অাবেগ নিয়ে পোষ্ট টা লিখলাম। এতো অল্প বয়সে দূনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া এটা সারাজীবন অামাকে ভাবাবে। যাই হোক, অামার জীবনের সেরা অাড্ডা এটাই ছিলো, সেই দিনটাতে রতন, মিথেল বেচেঁ ছিলো, এবং সেইদিনের অাড্ডায় তারা ছিলো। তবে অামাদের মতো এমন কোনো ঘটনা যেনো কারো না ঘটে। সবার জীবনে বন্ধুত্বের দরকার অাছে, এবং কাছের মানুষের দরকার অাছে। প্রার্থনা করি, বেচেঁ থাকুক সবার বন্ধুত্ব, টিকে থাকুক সু-সম্পর্ক।
অার হ্যা, মেইন টপিকে যদি অাসি। সবার জীবনেই বেষ্ট অাড্ডা হয়েছে, বা হয়ে থাকে। কারো অতীতে ফেলা অাসা এবং কারো ঘটে যাওয়া বর্তমান। যাই হোক, সেইদিনটি খুব খুব মিস করি, জীবনের সেরা অাড্ডা অামি সেইটাকেই বলবো। বারবার ফিরে পেতে মন চায় সেই দিনটি, সেইসময় অাসলে মাথায় ছিলো না কোনো টেনশন, ছিলো না অন্য কোনো ব্যাস্ততা, বা কোনো শাষন-পিড়ন। স্বাধীনভাবে কাটিয়েছি দিনগুলো। Best Adda For Ever My Life.....
Onk sundor lekha, Best of luck!
আমার ভাই হিসাবে বলবো না ..!! সত্যিই তুই ভালো লিখেছিছ । যদিও এই ধরনের কনটেস্টে সবাই ভালো লেখবে , এটাই স্বাভাবিক। তবে তুই তোর লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখ , আশাকরি সামনের দিন গুলোতে তোর জন্য, ভালো কিছু অপেক্ষা করবে । well wish 😊
Congratulations @yeakub50! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!