গ্রামের সন্তান। ছোটবেলা হতে গ্রামে বেড়ে উঠা। এখন পর্যন্ত গ্রামের সঙ্গেই লেগে অাছি। গ্রাম কে সবসময় ভালো না লাগলেও ভেবে দেখা যায়, গ্রামের মতো শান্তি, কোলাহল মুক্ত অঞ্চল, নেই কোনো যানবাহন, নেই কোনো ব্যাস্ততা, প্রকৃতির যেনো খুব কাছাকাছি থাকা, মন সর্বদায় ভালো থাকার কথা। কিন্তু বিষয়টা উল্টো।
এখন গ্রামের মানুষের ব্যাস্ততা শুধু একটাই, কাকে ডেঙ্গিয়ে কে উপরে উঠতে পারবে। সে ভালো কাজ করতিছে, এগিয়ে যাচ্ছে, তাকে কিভাবে থামায়ি সেই কাজটা সে করবে, এগুলো নিয়ে চলে তৎপর গবেষণা। এই যে একটা অন্ধ প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে, যার ফলে শিক্ষিত সমাজ হলেও অাজ চরম মূর্খতার পরিচয় দেয়।
ভাবিয়ে তোলার বিষয় টা কি জানেন, অামাদের যে গ্রাম, অামাদের এই অঞ্চলের ভিতরে, এই ইউনিয়নের ভিতরে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষ, চাকুরীজীবি মানুষ, শহরে থাকা মানুষ। ভাবলে অবাক হতে হয়, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সম্পদ বিদ্যমান, গ্রামে কোনো গরীব মানুষ নেই। তারপরও সবার মন মানসিকতা টা যে এতো নিম্ন, এতো ছোট, সরাসরি লক্ষ না করলে বুঝাতে পারবো না। গ্রামে অামাদের গুষ্টিটি সবচেয়ে বড়, (মন্ডল গুষ্টি)। বাপ চাচাদের কে প্রশ্ন করলে জানা যায়, গ্রাম টা নাকি অামাদের দাদা এবং অারো এক দাদা পরিচালনা করতো। সেই সময় গ্রামের মাতা, গ্রামের লিডার, গ্রামের কর্তা বলতে ১-২ জনি ছিলো। যাদের অনুসরণ অনুকরণে সবাই চলতো। কিছু টা রাষ্ট্রীয় নিয়মে বলা যায়। যাই হোক, সেই সময় নাকি গ্রামটা সুন্দর এবং সাবলিন ভাবে চলতো। বর্তমানের যে অবস্থা সেটা সত্যিই দূঃখজনক এবং হতাশ জনক। গ্রামের প্রত্যেকটা মানুষ নিজেই নেতা, কে শুনে কার কথা।
এরপর যদি সুন্দর্যের দিক থেকে বলি তাহলে, অাসলে সবার বাবা মা যেমন পৃথিবীর সেরা মানুষ মনে হয়, জন্মকাল থেকে বেড়ে ওঠা যায়গাও ঠিক তেমনি মনে হয়। এলাকার প্রতি একটা মায়া, মহব্বত, অাকর্ষন সেটা নতুন করে কিছু নয়। বিশেষ করে, বাজারের পার্শে সেই পুকুর পাড়। যেখানে বিকেল হইলেই দৌড়ে যাই, বর্তমান যেটাকে পার্ক বানানো হয়েছে, ফুলপুকুরিয়া পার্ক এ্যান্ড রেস্ট হাউজ। এটি এক সময় পুকুর পাড় ছিলো, সেটাকে অামাদের এমপি মহদয় হালকা বিনোদনের জন্য পার্ক বানিয়ে দিয়েছেন। নিচে একটি পিকচার দেখুন, যেখানে বসে বা ঘুরে বিকেল টা কাটানো হয়।
চিরচেনা এই বিকেলের অাড্ডার যায়গাটা নাকি সুন্দর, সবাই বলে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে দেখে দেখে বড় হয়েছি এজন্য তেমন কিছু মনে হয়না।
বিকেলে কাটানো সময়গুলো থেকে নেওয়া ক্যাপচার। নিরিবিলি এবং শান্ত একটা পরিবেশ যার কারণে দূর দূরান্তর থেকে মানুষজন ঘুরতেও অাসেন। ২০ বিঘা জমির উপর এই পুকুরটি। তো যাই হোক, এছাড়াও পাড়া বা এলাকায় কাটানো অারেকটি সৃতিভর যায়গা হচ্ছে খেলার মাঠ, যেখানে ছোটবেলা হতেই খেলে খেলে বড় হয়েছি,
হাইস্কুল মাঠ। এখানে দূর দরান্ত থেকে পোলাপান খেলতে অাসে। মাঠটি সুন্দর এবং খেলার বেশ ভালো উপযোগী এজন্য। যাই হোক, এতোকিছু হয়তো ভালো লাগলেও এলাকার যে লোকজন, তা সত্যিই দূঃখজনক। টাকা ওয়ালা মানুষের অভাব নেই এলাকায়, কিন্তু জ্ঞানি এবং সু-শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের প্রচুর অভাব বলতে পারবেন।
সাম্রতি করোনা ভাইরাস এর কারণে, অামরা গ্রামের যুব সমাজ ভাইরাস মুক্ত এলাকা এবং সবার মাঝে জন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে কাজ শুরু করি, এখান কতিপয় কিছু গ্রামের লোকজন ভাবে যে অামরা নাকি নেতাদের থেকে টাকা খেয়ে এসে এগুলো করি, অামরা সবাইকে হাত ধোয়ার জন্য অনুরোধ করতেছিলাম, মাস্ক পরিধানের জন্য কথা বলতেছিলাম, জনসমাগম এড়িয়ে আলতে বলেছিলাম। কিন্তু এই ধরনের কিছু লোকজনের কারণে অবশেষে ১ মাস ১০ দিনের মতো কাজ করে, অবশেষে কর্মসূচি টা বাদ দিতে হয়। গ্রামে ২-৩ বার মিটিং ডেকেও বিষয়গুলো সমাধান করা যায়নি। কেউ কারো কথা শুনে না, অার ভালো বুদ্ধি অার ভালো পরামর্শ দিলে অাপনি হয়ে যাবেন তার শত্রু।।
অামরা নিজেরা সচেতন হয়ে এই কর্মকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন কথা শুনতে হয়েছে এবং বিভিন্ন বাধারও সম্মুখিন হয়েছে। এতে যেমন অামাদের সুনামের সৃষ্টি হয়েছিলো পাশাপাশি বদনামেরও নাম হয়েছিলো। যদিও মনে করি, ১% যদি কারো ভালো কাজ করে থাকি এতেই সন্তুষ্ট অামরা। অবশেষে পুলিশের কাধে বিষয়টা ছেড়ে দেওয়ায় সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে।
যাই হোক, বাবা মার থেকে যতোটুকু শিখেছি, সেটাই মেনে চলার চেষ্টা করি। যদি বলেন, এলাকা থেকে কি পেয়েছো? অামি বলবো এলাকা না যতোটুকু দিয়েছে বা পেয়েছি, এরথেকে হাইভ ব্লোগে কাজ করে বেশি পেয়েছি। সবাই শিক্ষা অর্জন করেছে বটে, কিন্তু সেই শিক্ষা কখনো ভাগাভাগি করে নিতে চায়না কেউ। কারো কাছে শিক্ষা বিষয়ে হেল্প চাইবেন তো হেরে যাবেন। কেউ কাউকে কোনোকিছু শিখাতে রাজি নয়। যাই হোক, নিজের এলাকা, এতো এতো বদনাম করাটা হয়তো ঠিক হচ্ছে না, তবে নেগিটিভ কিছু না ভেবে পজিটিভ ভেবেই এগিয়ে যাচ্ছি, নেগিটিভ ভাবলে হয়তো এতেদূর অবদি অাসতে পারতাম না। যাইহোক, বলতে গেলে পরিষ্কার যে, পাড়া বা এলাকা যথেষ্ট সুন্দর কিন্তু ৭০% মানুষ সুন্দর না।
যাই হোক, লিখলে অনেকদূর অনেককিছু লেখা যায়, লেখার শেষ হবেনা। তবে এতোটুকুই রাখতে চাই। পাড়া হিসেবে সুন্দর হলেও যাদের জন্য পাড়াটি, তারা অসুন্দর। এতোটুকু পরিষ্কার।
একটা মিথ আছে। গ্রামের মানুষকে সহজ সরল বলা হয়। আদতে তারা সহজ সরল না। যায় হোক, সুন্দর লিখেছেন।
That view by the river is absolutely beautiful! Thank you for participating in this week's contest!
সমাজের বেশিরভাগ মানুষ এখন খারাপ। এর মধ্যেই আমাদের চলতে হয়। যা-ই হোক, ভালো লিখেছেন।