ভ্রমণের নেশা তো সেই স্কুল পালানো থেকেই শুরু। প্রতি সপ্তাহে নতুন কোনো যায়গায় গিয়ে নতুন মানুষদের সাথে পরিচয় হয়ে চা বিস্কুট খেয়ে, ক্যামেরায় ছবি তুলে ঘুড়াঘুড়ি করাটাই এক প্রকার নেশা লাগে। ছোটবেলা হতে সেই ক্লাস সিক্স থেকে একটা বিষয়ে খুব এক্সপার্ট আমি, সেটা হলো ছবি তোলা। কাকার দোকানের সেই ডিজিটাল ক্যামেরার প্রত্যেকটা অংশে যেনো এই হাতে ছোয়া লাগিয়ে আছে। ছবি তুলতে সবাই পছন্দ করে কিন্তু ছবি তোলা এটা আমার কাছে একপ্রকার নেশার মতো। ফেসবুক কিংবা ইন্সট্রাগ্রাম যেখানেই বলেন, দিনে না হইলেও সপ্তাহে ১-২ টা ছবি আপলোড দিতেই হবে। আসলে ছবি তোলা থেকেই ভ্রমনের নেশাটার উৎপত্তি। একটা যায়গায় থেকে তো আর সব সময় ফটো আপলোড দেওয়া যায়না। নতুন নতুন এলাকায় গিয়ে নতুন নতুন যায়গায় ছবি তোলা এবং সেখানে কোথাও রেস্ট নিয়ে দুপুরে লান্স করা আবার ঘুড়াঘুড়ি করে ফটো তোলা, এক অন্যরকম অনুভূতি।
আমার সর্বশেষ দূরের ভ্রমণ ছিলো কক্সবাজার। ২০১৯ সালের ২৮ শে মার্চ আমরা বগুড়া হতে একদল বন্ধুবান্ধব ভ্রমনের উদ্দেশ্য কক্সবাজারের পথে। (যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে, চাদ উঠেছিলো গগণে) গানের তালে তালে রওনা দেই। ১৭ ঘন্টা জার্নির যে একটা আনন্দ, তা কখনো ভুলার নয়। কক্সবাজার ভ্রমণটি ছিলো খুবই আনন্দদায়ক এবং পেরেশানমুক্ত ভ্রমণ। খুব ভালো এনজয় করেছি। এরপর আমরা সেই গ্রুপের বন্ধুরাই পরিকল্পনা করেছিলাম, এবছর বান্দরবন ট্যূর দিবো। কিন্তু যাই হোক, করোনার কারণে সেটা সম্ভব হলো না। আসলে সত্যি বলতে ভ্রমণ প্রিয় মানুষ মানে বাঙ্গালি কেই বুঝায়। আমি দেখিনি কখনো কোনো সুস্থ মানুষ সে ভ্রমণ করতে পছন্দ অপছন্দ করে। কোথাও যাওয়ার কথা শুনলেই, সুন্দর সার্ট প্যান্ট জুতা, মুখে মুচকি হাসি, মাথায় চুল হাছরিয়ে একদম রেডি।
এছাড়াও আমি অামার এই ছোট্ট জীবনে ভ্রমণ করেছি, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, মহাস্থানগড়, জয়পুরহাট, পাহাড়পুর সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সব দর্শনীয় স্থান। উত্তরবঙ্গ ব্যতিত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার একটা সৃতি আছে। আসলে ছোটবেলা হতেই এক ভ্রমন প্রেমি ছেলে হয়ে বড় উঠেছি। বাহিরে ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝে নিজেই ক্লান্ত হয়ে যাই। একদিন অামরা পাড়ার তিনজন, রতন, ইমন আর অামি। যদিও রতন এখন আমাদের মাঝে বেঁচে নাই। আমরা হঠাৎ পরিকল্পনা করি, মাত্রাই ঘুরতে যাবো, ওখানে নাকি প্রাচীন ঘরবাড়ি আর জিনিসপত্র আছে, সেগুলো দেখতে। দিনটি চিলো শুক্রবার, বেশ গেলাম, দেখলাম এরপর ওখান থেকেই আরেকটা প্লান হইলো ২০ কি.মি উত্তরে একটা বাজারের চা খাবো, খুব বিখ্যাত চা পাওয়া যায়। চায়ের নাম মালাই চা। মকবুল চাচার মালাই চা। হ্যা মোটরসাইকেল টানমেরে চা খেতে গেলাম। এখন তো নামাজের সময় কাছাকাছি, আমারাও তো দেশ হতে অনেকদূর। তাৎক্ষণিক আরেকটা পরিকল্পনা হয়ে গেলো সেখান থেকে ১৫ কি.মি উত্তর-পূর্বে একটি পুরোতন মসজিদ রয়েছে, যেটার প্রচুর ডাক নাম(ঐতিহাসিক সৌর মসজিদ) নামে পরিচিত। হ্যা টান মেরে সেখানে গিয়ে নামাজ পড়লাম, মসজিদ এরিয়া ঘুড়েবেড়ে দেখলাম। নামাজ শেষে ওখানেই পোলা খাইলাম তিনজন। এরপরেও বাড়িতে আসতে মন চায়না। মন চায় শুধু নতুন নতুন যায়গা ঘুরতে।
এরপর ঐ মসজিদ থেকে সরাসরি গেলাম ঘোড়াঘাট। ঘোড়াঘাটের পৌরপার্ক দেখতে অনেক সুন্দর। ওখানে বসে চা কফি খেয়ে গাড়ি টান মেরে বাড়ির পথে আসতেই চাকার প্রেক নষ্ট হয়ে যায়। সেখানে ১ ঘন্টা লেট করে ঠিকঠাক করে নিয়ে অবশেষে আরও কিছু যায়গা ঘুরে বাড়িতে। দিনটি খুব মিস করি সেইসাথে সেইদিনে সাথে থাকা আমার চাচাতো ভাই রতন কে। আমরা ফ্রি হইলেই বাইক নিয়ে এলাকার কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। কখনো বাড়িতে থেমে থাকিনা। অলসতা পছন্দ করিনা। আমরা ঘুরতে ভালোবাসি। এভাবেই অামরা হাজারও ছোটখাটো ভ্রমণ করেছি, আমার ইচ্ছা একটাই, আমি প্রতি বছর দেশের কোন এক জেলায় ঘুরতে যাবো। এভাবেই দক্ষিনাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলের সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার ইচ্ছা।
সেইসাথে আরেকটা প্রবল ইচ্ছা তো আছেই, সেটা হচ্ছে বাইক নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ টা জেলার সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার। আর যদি দেশের বাহিরের কথা বলি, তাহলে ইন্দোনেশিয়ার বালি, চায়নার মহাপ্রাচীর, এবং ভারতের কিছু কিছু যায়গা ঘুরে দেখার খুব ইচ্ছা। তবে নিজের দেশ বাপের দেশ দাদার দেশ মানুষের দেশ। এদেশ ঘুড়ে দেখার ইচ্ছাটা সবার উর্ধ্বে। যাই হোক, ভ্রমণ নিয়ে তেমন কোনো ইতিহাস নাই, তবে ঘুরেছি, অাড্ডা দিয়েছি, মজা নিয়েছি, মনটা ফ্রেশ করেছি এই। যাইহোক, কথাগুলো হয়তো সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। আর আমি কোনো লেখক ও না, শুধুমাত্র নিজের অভিঙ্গতাগুলো নিজের ভাষায় লিখার চেষ্টা করি। ধন্যবাদ সবাইকে।