"একসাথে পাওয়া অনেক কষ্ট মানুষকে অনুভূতি হীন করে দেয়"

in Praise India3 years ago

IMG20210423135035.jpg

প্রিয়,
পাঠকগণ,

কেমন আছেন আপনারা সবাই?
আপনাদের কে জানাই good morning. আমার না হোক, অন্তত আপনাদের সারাটা দিন ভালো কাটুক এই কামনা করি।

এমন কথা কেন বললাম? কারণ আজকের দিনটা খুব খারাপ যাবে আমার।বলতে পারেন এমন একটা সকালের জন্য আমি তৈরী ছিলাম না।কোনোদিন ভাবিনি সকালে উঠে এমন খবরও পেতে হবে।

আমার আগের লেখা পোস্টে আপনারা পড়ে থাকবেন আমার বান্ধবী দীপার বাবা - মায়ের কথা।কাল ওকে ফোন করেছিলাম খবর নেওয়ার জন্য। ওকে কি বলবো,কি বলতে হয় এই সবকিছু ভেবে ভেবে শেষ পর্যন্ত ফোন করেই ফেললাম। ফোন টা বেজে গেলো কিন্তু কেউ তুললো না। আমিও দ্বিতীয়বার করলাম না।কারণ কে কি পরিস্থিতিতে আছে ফোনের এপার থেকে বোঝা সম্ভব নয়।

আজ সকালে দেখি ও ফোন করেছিল, তখন আবার আমি ব্যস্ত ছিলাম। একটু পরে আমি ফোন করলাম।কিন্তু করে যে খবর শুনলাম,সেটা শুনে মনে হলো ফোন না করলেই ভালো হত। আমি ভেবেছিলাম দীপা প্রথমে ফোন ধরেই খুব কান্না করবে বাবার জন্য কারণ,বাবাকে হারানো তো অত সহজ নয়, কিন্তু কি অদ্ভুত ভাবে ওর কোনো রিয়াকশন পেলাম না।ভাবলাম নিশ্চয় মায়ের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত করেছে।

ওর বাবার কথা শুনে ওকে ফোন করেছি শুনতেই ও যা বললো,তাতে আমার নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। ওর শশুরবাড়িতে একই সাথে পরপর ওর শশুর মশাই,শাশুড়ি মা, আর ওর ভাসুর মারা গেছেন। আর বাপের বাড়িতে বাবা।

স্তব্ধ হয় রইলাম কিছুক্ষণ। এবার সত্যিই বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো। এইবার স্পষ্ট হচ্ছিলো কি কারণে ওর কোনো রিয়াকশন পাচ্ছিলাম না।একটা মানুষ যে পরপর এতো গুলো কাছের মানুষের মৃত্যু সংবাদ পায় তার কি সত্যিই আর কোনো কিছু বলার থাকে?

যদিও বা ওর শ্বশুর শাশুড়ির মৃত্যুটা মেনে নেওয়া সম্ভব।কারণ তাদের বয়েস হয়েছে, তবে ওর ভাসুরের টা একদমই মেনে নেওয়া যায়না। মাত্র ৪১ বছর বয়েস মানুষটার। দুটো বাচ্চা মেয়ে আছে।ছোট মেয়েটার ৪ মাস বয়স।দীপার সাথে লাস্ট যেদিন কথা হয়েছিল সেদিনই বাচ্চাটাকে নিয়ে ওর মা বাড়ি ফিরলো।

বেশ কিছুক্ষন কথা বলে জানতে পারলাম।ওর শাশুড়ি মায়ের brain stroke হয়েছিল, ওর শশুর মশাই accident করেছিলেন। আর ওর ভাসুর এবং বাবা করোনা তে মারা গেছেন।ওর মা ICU তে ছিলো,এখন অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল।

বিশ্বাস করুন, সত্যিই কোনো ভাষা ছিল না ওকে স্বান্তনা দেওয়ার। পাশ থেকে ছোট্ট বাচ্চাটার কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।বেশিরভাগ সময় দীপার কাছে থাকে। ওর মা খুব ভেঙ্গে পড়েছে। সেটাই স্বাভাবিক।স্বামীর মৃত্যুসংবাদ যেকোনো মেয়ের জন্যই কষ্টের। তার উপর যদি শেষবার তাকে দেখাও না যায়। তাহলে কেমন লাগতে পারে,বোধহয় আন্দাজও করতে পারিনা।

স্বামী সন্তানদের নিয়ে জীবনটা সবে পূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু এক মুহূর্তে সবটা শেষ। ছোট বাচ্চাটাও বুঝলো না বাবা কেমন হয়। শুনে অবাক লাগলো মানুষটা ১ ঘণ্টা আগেও নাকি বাড়িতে ফোন করে জামাকাপড় আর বিছানার চাদর নিয়ে যেতে বলেছে, ১ ঘণ্টা পরে নার্সিংহোম থেকে ফোন করে বলেছিল আপনাদের বাড়ির লোক অসুস্থ, ICU তে শিফ্ট করেছি।দীপার husband যখন গেল তখন সব শেষ।

বডি কোথায় নিয়ে গেছে কেউ জানে না। কেউ দেখতে পারেনি। দীপা নিজেও ওর বাবাকে দেখতে পায়নি।আমার সাথে কথা বলতে বলতে ও বললো - "এখন আর কান্না পায় না সম্পা।"

বুঝলাম ওর কথার গভীরতা। আর এটাই স্বাভাবিক। এত গুলো মানুষকে হারানোর পরেও আর বোধহয় কোনো অনুভূতি কাজ করে না।ওর একটা কথা কানে বাজছে আমার - "জানিস সম্পা আমার মনে হয়, আমাদের বাড়িটা কোনো কাঁচের ঘরের মত ছিলো, ওপর থেকে কেউ কিছু ছুঁড়ে মারলো আর আমাদের বাড়িটা চুরমার হয়ে ভেঙে পড়লো।"

সত্যিই তো তাই,আমাদের জীবনে যা ঘটে বা ঘটবে সবটাই তো ওপরে বসে থাকা একজন ঠিক করে, আর তার ইচ্ছে মতোই চলে আমাদের জীবন।

যাইহোক, ওর কষ্টের ভাগ আমি নিতে পারিনি হয়ত, তবে বান্ধবী হিসাবে পাশে আছি।এখন যা পরিস্থিতি ওর বাড়ি গিয়ে দেখাও করতে পারবো না,ফোনেই খবর নিতে হবে।ভগবান সবটা সহ্য করার শক্তি দিক ওকে।

সামনে কি দিন আসতে চলেছে আমরা কেউ জানিনা।কখন কার আপনজন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে কেউ জানি না। তাই বলছি যতটা সম্ভব সাবধানে থাকুন।

দিনটা ভালো কাটুক আপনাদের সবার।