নারীরা কি পরনির্ভরশীল!

in #shaonashraf9 months ago

কয়েকদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একটা পোস্ট দেখছি।পোস্টের কথা গুলো অনেকটা এমন ''নারীরা চায় তার স্বামীর টাকায় স্বাদ আহ্লাদ সব পূরণ করতে''।আবার এর কমেন্ট বক্স দেখলে বুঝা যায় এটা পুরুষ জাতির মনের কথা।বাহবা,হাততালির অভাব নাই।যাকে বলে হামলে পড়া। এমন একটা বিষয় দেখার পর আমরা যারা অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন নারী তাদের কিছুতো লিখা উচিত!

প্রথমে আমার একটা প্রশ্ন যদি নারীরা সেটা চাই তাহলে কি ভুল? যাদের কাছে ভুল মনে হয় তাদের জন্য আমার কিছু কথা।

বিয়ের মাধ্যমে একটি পবিত্র সম্পর্ক সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে আমরা সংসার জীবনে প্রবেশ করি। সেই সংসার কোনো যুদ্ধ ক্ষেত্র নয় যে দফা ঘোষণা করে অধিকার নির্ধারণ করা হবে।এরপরও কিছু কথা থেকে যায়। জীবনের প্রয়োজনে টাকার প্রয়োজন। টাকার প্রয়োজনে কাজ করতে হবে।সেটা হতে পারে চাকরি, ব্যবসা কিংবা কৃষি কাজ।এবার টাকা তো এসে গেলো, টাকা হলেই কি জীবন সুন্দর হয়ে গেলো?

সংসারে তো আরও একটা পাঠ আছে। সারাদিন কাজ করার পর একটা ঘর দরকার। আচ্ছা এসব বাদ দিলাম ঘর, খাবার, কাপড়চোপড় পরিস্কার, গুছানো টাকা দিয়ে করে নেওয়া যায়। কিন্তু সন্তান। সন্তান লালনপালনের জন্য মা অপরিহার্য। মা বাবা দুজন টাকার পিছনে ছুটলে সন্তান লালন পালন কে করবে?

এবার অনেকে বলতে পারে ডে কেয়ার আছে তো।হ্যাঁ ডে কেয়ার বলেন চাইল্ড কেয়ার বলেন সবই আছে। সেখানে বাচ্চাকে রেখে মা বাবা কতটুকু নিশ্চিন্ত।একটি শিশুই বা কতটুকু খুশি।এখন একজন নারী যখন নীরব সমাধানের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে হাসি মুখে সংসার সাজায় বাচ্চা পালন করে তখন স্বাদ আহ্লাদ নিশ্চয় মারা যায় না। তখন তার ভরসা তার স্বামী। এটা তার পরনির্ভলশীলতা কেনো হবে?এটাকে বলা যায় পারিবারিক সমঝোতা।

এখানে একে অন্যের পরিপূরক। কেউ কারো বুঝা কেনো হতে যাবে।গ্রামে অধিকাংশ নারী গৃহিণী, পুরুষরা করে কৃষি কাজ।কৃষি কাজ নিশ্চয় কঠিন। ওরা কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায়।মাঠে ফসল ফলিয়ে বাড়িতে আনার পর এটাকে ব্যবহার উপযোগী করতে প্রায় ফলানোর সমপরিমাণ কাজ করতে হয়।যা গৃহিণীরা করে থাকে।এছাড়াও গুরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী পালন সব গৃহিণীরাই করে।

গ্রামে অশিক্ষিত গৃহিণী হোক আর শহরের শিক্ষিত গৃহিণী সংসারে কারও অবদান কম নয়।এখন সমস্যাটা হচ্ছে পুরুষরা বুঝে তার স্ত্রী বাইরের কাজ করলে তার সংসারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হবে। তাই সে চায় তার স্ত্রী কাজ না করুক।কিন্তু সে আবার স্ত্রী কাজ করে টাকা ইনকাম করে না তাই তার উপর নির্ভরশীল ভেবে এধরনের মন্তব্য করতেও ছাড়ে না।এখন এসব মন্তব্য শুনে আমার মাথার পোকা নড়ে ওঠে।তখন আমি যদি প্রশ্ন করি গৃহিণী হলেই কি একজন স্ত্রী তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল? স্বামী যদি সংসারের জন্য কাজ করে স্ত্রীও সংসারের জন্য কাজ করে তাহলে পার্থক্য কোথায়?

নারীরা বাইরের কাজ করার চেয়ে সংসার গুছিয়ে, নিজকে গুছিয়ে রাখতে বেশি ভালোবাসে এটা সত্য।একজন বাইরে কাজ করে, অন্যজন ঘরে। এভাবে কত সুন্দর একটা সুখের স্বর্গ তৈরি হয়।এখানে কেউ কাউকে নির্ভরশীল না ভেবে পরিপূরক ভাবলেই কোনো সমস্যা থাকেনা।আর যদি সব সামলে দুইজন এক সাথে ঘরে বাইরে কাজ করে তাহলেতো আরও সুন্দর। একজন আরেক জনের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ার কি দরকার?

আমার লিখা পড়ে অনেকের মনে হতে পারে আমি নারীবাদী কিংবা নারী অধিকারে সোচ্চার এসব কিছু।আসলে বিষয়টা এমন না।আমি যা দেখি, আমার কাছে যা সত্য মনে হয়, তা দেখে আমি চুপ থাকতে পারি না।সত্য কথা সরাসরি বলে দিতে চেষ্টা করি।কোনো কিছুতে রং মাখিয়ে রঙিন করাটা আমার পছন্দ নয়।

এই ধরেন বর্তমান সময়ে মেয়েরা মেকআপ করে সেজেগুজে থাকে সব সময়, সেখানে আমি মুখে ক্রীমও মাখি না। কারণ আমি যেমন তেমনটাই আমার পছন্দ। রঙ মাখিয়ে রঙিন হওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।

two-birds-escaping-from-bird-cage.jpg