''মা রে এইবারের মতো খেয়ে নে...."

in #shaonashraf9 months ago

আজ আমি যখন রান্না করছিলাম মানহা তখন খেলা করছিলো।হঠাৎ ওর মনে হলো আর খেলবে না।দৌড়ে চলে আসলো আমার কাছে। আমি কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম খিদে লেগেছে কিনা? হেসে আমাকে বুঝাচ্ছে তার খিদা লেগেছে। আমি ওকে কোলে নিয়ে পাশের চুলায় একটা ডিম সিদ্ধ দিলাম।এ পাশের চুলায় ইলিশ মাছ কষাচ্ছিলাম তরকারিতে দেবো বলে।

এটা হয়ে গেছে তাই মানহাকে কোলে নিয়ে উঠিয়ে রেখে তরকারি দিলাম।এরপর তরকারিতে ঝোল দিয়ে মানহাকে দাড়াতে বললাম, ওর ডিমের খোসা ছাড়াবো তাই।সেও দাঁড়ালো। আমি ডিমের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে সোফায় এসে বসলাম ওকে খাওয়াবো।কিন্তু সে কিচেনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ডাকি সে আসে না হাত তুলে কিছু একটা দেখাচ্ছে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম সে এখন ডিম খাবে না।আমি ইলিশ মাছ উঠাচ্ছিলাম সে এখন সেটা খাবে।

আমি একটি ইলিশ মাছে টুকরা নিয়ে ওকে খাইয়ে দিলাম সে খুব ভালোভাবে খেয়ে নিলো।অথচ প্রতিদিন কতো চেষ্টা করি সে খাবে না।এটা দেখে আজ আম্মার কথা একটু বেশি মনে পড়ছে। ছোট বেলায় আমি আম্মাকে খুব বিরক্ত করতাম খাওয়ার জন্য। কোনো ধরনের শাক সবজি আমি খাবো না।হাতে গুনা কয়েকটি মাছ খেতাম। আবার একবার একটা তরকারি খেয়েছি তো পরে আর খাবো না এই তরকারি।

তাই আম্মা আমার খাবার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতেন।আম্মা একবার আমার সামনে খাবার দিয়ে ভাবতে থাকতেন পরেরবার কি দিবেন।তাই আমি যেসব খাবার খেতে পছন্দ করতাম তা সবাইকে কম দিয়ে আমার জন্য সংরক্ষণ করতেন। আমি যেহেতু সবজি দিলে খাবো না তাই মাছ কষিয়ে আমার জন্য রেখে এরপর সবজি দিতেন।

আমি ছোট বেলা থেকে ঢেঁড়স খুব পছন্দ করি। তবে ঢেঁড়স সবাই ভাজি খায়।কিন্তু আমি ভাজি পছন্দ করি না।ঝোলের তরকারিতে ঢেঁড়স থাকলে আমি তৃপ্তি করে খেয়ে নিতাম।আম্মা আমাদের পুকুর পাড়ে ঢেঁড়সের চাষ করতেন।বছরের প্রায় অর্ধেক সময় আম্মার এই ঢেঁড়স থাকতো।কারণ আম্মা চেষ্টা করতেন যতটা বেশি সময় রাখা যায়।প্রতিদিন রান্নার আগে দুই-তিনটে ঢেঁড়স উঠিয়ে নিয়ে আসতেন।আর যেদিন যা রান্না করতেন তাতে ঢেঁড়স গুলো দিয়ে দিতেন।

বড় আপা এসব ব্যপারে কিছু বলে না চুপচাপ খেয়ে নিতো।আব্বা খাবার মুখে দিয়েই বলতেন আহা আজ তরকারিটা এতো মজা হয়েছে আমার মাথায় যদি কেউ বারিও মারে খাওয়া ছাড়বো না।যাতে আমি খেতে চলে আসি। কিন্তু আমার ছোটো মানে আমার মেজু আপা সে তরকারিতে ঢেঁড়স দেখার সাথে সাথে রেগে বলে উঠতো," সব তরকারিতে ঝোল আর ঢেড়ঁস, যার জন্য রান্না করছো সেই খাবে আমরা সবাই খাওয়া ছেড়ে দেই"।
আম্মা তাতে একটুও রাগ না করে বলতো, দেখিস না ও খেতে চাই না একটু ঢেঁড়স আর ঝোল দেখলে যদি খেয়ে নেয় তাহলে ভালো না।

আমি ছোট বেলা থেকে মাংস খেতে খুব ভালোবাসি। হালাল সব মাংসই আমি পছন্দ করে খাই।তাই যেদিন মাংস থাকতো সেদিন আম্মার কোনো চিন্তা থাকতো না।তাই আব্বা যদি এক কেজি মাংস নিয়ে আসতো আম্মা আধা কেজি রান্না করতো তা সবাইকে একবার খাইয়ে দিয়ে বাকী টুকু আমাকে দুই তিন বার খাওয়াতেন। আর বাকী যে আধা কেজি মাংস ছিলো তা লবণ হলুদ দিয়ে রান্না করে রেখে দিতেন। তা দিয়ে আমার পুরা সপ্তাহের খাবার করে নিতেন।

আলু ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় সবজি।আলু দিয়ে আম্মা আমাকে বিভিন্ন রেসেপি করে দিতেন। এরপরও আমি বেশি বেশি আলু খেতে চাইতাম। আমাদের কখনো আলু চাষ হতো না। আমি এতো আলু পছন্দ করি তাই আব্বা আলু চাষ শুরু করে। প্রথমবার যখন আলু চাষ করে আব্বা কোনো আলু বিক্রি না করে সব ঘর ভরে আলু রেখে দিলেন। আমি যত চাই তত খাবো।

আমি আমার মা বাবার তৃতীয় কণ্যা সন্তান। কিন্তু আমি তা কখনো বুঝিনি।আমার মা বাবা কখনো কম গুরুত্ব দেননি।আমার খাবারের জন্য আম্মা কি কি করেছেন আজ খুব মনে পড়ছে। এখন মা হয়ে বুঝতে পেরেছি সন্তানের খাবারের জন্য মায়ের দুশ্চিন্তা কতো।এজন্যই আম্মা এমন করতেন আমার খাবার নিয়ে। ভালো থাকুক সব মা।শান্তিতে বাঁচুক সন্তানদের নিয়ে।

IMG_20230818_010907_070.jpg