কেটে- ছেঁটে বলতে গেলে আমার ডাকনাম “নয়ন”। জন্মের পর আমার চোখগুলো নাকি মেয়েদের মতো বেশ মায়াবি ছিলো। আমার মা ছোটোবেলায় আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে চোখে কাজল পড়িয়ে পাড়া-প্রতিবেশীদের বাসায় আমায় নিয়ে ঘুরতে বেরোতেন। এই হচ্ছে আমার এরকম মেয়েলী নামের রহস্য। আর এখন সেই (মায়াবি মেয়েলী) নয়নজোড়া ঢেকে গিয়েছে মোটা ফ্রেমের একজোড়া পাওয়ার গ্লাসের আবরণে! চশমা কেউ দুষ্টামী করে খুলে ফেললে পুরো পৃথিবী ধুলোর রাজ্যের ঘোলাটে মনে হয়। অনেকটা অঞ্জন দা’র “চশমাটা খসে গেলে মুশকিলে পরি, দাদা আমি এখোনো যে ইস্কুলে পড়ি, কব্জির জোড়ে আমি পারবো না”- টাইপের অন্ধ।
তবে স্কুল, কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে আমি এখন ভারসিটির ছাত্র, যদিও নিজের কাছে এখোনো আগের মতই লাগে। বুকশেলফ জুড়ে আছে “সিডনি শেল্ডন”, “ড্যান ব্রাউন”, “জুল ভারন”-এর ধুলো। রাতে এরাই আমার সঙ্গী একান্ত কফির হাতে। গানের প্ল্যালিস্টের কোনো বাছ-বিছার নেই।”One Direction”, “Coldplay”, “Imagine Dragons” সব-ই খাদ্যের মতো গিলি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এরকম ঘরানার ছেলেদের বাংলা সাহিত্যে ‘হ্যাব্লা’ বা ‘বলদ’- এই টাইপের কিছু একটা সম্বোধন করে। নিজের ক্যাম্পাসের বন্ধুরাও সেরকম-ই আমাকে ভাবে যদিও আমার তাতে বেশী কিছু যায় আসে না। তাদের সাথে টঙ্গে বসলে আমার এক কাপ চা অথবা এক প্যাক জ্যুসে দিব্যি চলে যায়, আর সিগ্রেটের অপকারিতা বিষয়ে আমি খুব ভালো বক্তা যদিও বন্ধুরা সেটা কানে নেয় বলে মনে হয় না। সেটা আমি আমার বাসার পোষা বিড়াল পিকু-কে বোঝালেও সে বুঝে। :-p যাই হোক, এসব ছাই-পাশ লিখে মূল ঘটনার থেকে সরে যাচ্ছি।
গতোবছর ভারসিটির থেকে পিকনিকে সব ডিপার্টমেন্ট যাচ্ছে। গন্তব্যঃ নীলগিরি, বান্দরবন; সেখানের পাহাড়ে নাকি মেঘ ভেসে বেড়ায়। ভাবলাম যাক, পাহাড়ের উপর নিজের পাশে মেঘের একটা ছবি দেয়ালে ঝুলালে বেশ হবে।যাই হোক, গন্তব্যের দিন বাস সাড়ি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে চশমার গ্লাস মোছা হয় নি তাই চশমা খুলে মুছতে মুছতে সেদিক যাচ্ছি, আর ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই। ‘লিনেন’ কাপড়ে গ্লাস ঘষতে ঘষতে অনেকটা দৌড়াচ্ছিলাম প্রায় এমন সময় তুমুল বেগে কেউ একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত থেকে গ্লাসটা গেলো পড়ে। চুলের ঝাপ্টায় মনে হলো ধাক্কাটা বোধ হয় কোনো মেয়ের সাথেই খেয়েছি। ইতোমধ্যে, গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ-ও পেয়েছি। যাহ শালার এবার মেঘের পাশে সেলফী তোলা তো দূরের কথা, মেয়েকে ‘স্যরি’ বলতে গেলে গালে থাপ্পর একটা নিশ্চিত! তার চেয়ে বরং রাস্তায় হাতরিয়ে গ্লাসের ভাঙ্গা অংশের পরিমাপ করাটাই ভালো। নাহ, চশমা হাতে পেয়েই বুঝলাম সেটা অক্ষত-ই আছে! ঈদের চাঁদ দেখার মতোই মনে মনে খুশি হয়ে চশমা নাকে সেটে ভয়ে ভয়ে ধাক্কা খাওয়া মানবীর দিকে তাকালাম। ওমা! দেখি সে তার দু হাতের মুঠোয় কিছু একটা ধরে কাঁদছে। লক্ষ্য করে দেখলাম তার হাতেও চশমা, তবে কাঁচ-ভাঙ্গা! এবার বুঝলাম কাঁচ ভাঙ্গা শব্দের রহস্য।যাহ বাবা, এবার থাপ্পর আমার চক্রবৃদ্ধির হারে কোন গালে কয়টা পড়বে সেটার হিসেব কষতে লাগলাম!
Sort: Trending