
আব্দুল আলিম : সেদিন বিকেলে আকাশে রোদ ছিল। তবে ছিল না রোদের প্রখরতা। সাথে ছিল প্রশান্তিদায়ক বাতাস। তাইতো একদল প্রাণোচ্ছ্বল শিক্ষক, শিক্ষার্থী মেতেছিল ক্লান্তিহীন নৌভ্রমণ, আনন্দ আড্ডা আর গান-গল্পে। এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়। কী বলা যায়? সেই বলাটা হয়তো অব্যক্তই থেকে যাবে। কৃতিত্বটা অবশ্যই বর্ষার। শীতের আঁচ অনুভব করে প্রাক শীত প্রস্তুতি নেয়ার কথা সেখানে ভরা বর্ষণ আর নদীর দীর্ঘায়িত যৌবন লাভ বার বার নৌভ্রমণের কথাই মনে করিয়ে দেয় আমাদের।
সেদিনের সে সময়টা বিকেল সোয়া তিনটা। আমরা, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের তারুণ্যে ভরপুর একদল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী, বিরুলিয়া ব্রিজের নিচ থেকে বেরিয়ে পড়ি নৌভ্রমণে। স্রষ্ঠা ও সৃষ্টির কি বিচিত্র লীলা! দিনভর কাঠফাটা তপ্ত রোদ। ঠিক বিকেলে আবার হালকা রোদের সাথে আদুরে বাতাস। মর্নিং হয়তো সব সময় সত্য কথা বলে না! শম্ভুক গতিতে এগিয়ে চলছে নৌকা। খরগোশ গতিতেও ভ্রমণ হয়; তবে ঘুরাঘুরির আনন্দতো তাতে আর মিলবে না!
প্রায় দুই কিলোমিটারের মতো ভ্রমণের পর নৌকার বাম পাশে চোখে পড়ল একটা পুরাতন, জরাজীর্ণ, বিলীয়মান অস্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি ভবন। ভাবি অনুসন্ধিৎসু কলম সৈনিকদের চোখ এড়িয়ে যায় কিভাবে? ছোট্ট একটা ঘাটের পাশে নৌকাটা নোঙর করে সবাই রওনা দিলাম সেই ভবনের দিকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী’র সেই ‘দেখে যে মনে হয় চিনি উহারে’র মতো। সবাই যা ভেবেছিলাম তাই। জমিদার বাড়ি। তিনজন জমিদারে বাড়ি ছিল এখানে। শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মহল, তারক চন্দ্র শাহা মহল এবং অপর আরেকজন। ভবনগুলো শত বছরেরও আগের। বর্তমানে সংস্কার অযোগ্য এ সমস্ত ভবন যথাসময়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাবের নজরে আসলে নদীর বুকে একটা ঐতিহ্যের অংশও হয়ে যেতে পারতো হয়তো। সেখানে এখন কারো পরবর্তী প্রজন্ম, কেউ কেউ ভাড়া দিয়ে বাস করছে। কেউ কেউ আবার দেশ বিভাগের পর ভারতেও পাড়ি জমান।
ক্লিকিং পর্ব শেষে সেখান থেকে রওনা দিলাম। একটু পরেই দেখা পেলাম বটবৃক্ষের ন্যায় শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত অদ্ভুত সুন্দর এক হিজল গাছের। ঠিক যেন ক্লান্ত-শ্রান্ত পথিককে একটু প্রশান্তি দেয়ার জন্য কোমর ডুবিয়ে সবকটি ডানা মেলে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। গাছটির সাথে নৌকা আটকে আমরাও আসন পেতে নিলাম তার প্রতিটি শাখা-প্রশাখায়। প্রিয় শিক্ষার্থীদের সাথে ক্ষণিকের তরে গাছের ডালে বসে আনন্দ আড্ডা, খুঁনসুটি সেই সাথে সবাইকে ক্যামেরাবন্দী করার জন্য পাপারাজ্জোদের চেষ্টা! ভ্রমণের মজাটা বেড়ে গেল বহুগুণে। মনে পড়ে গেল জীবনানন্দ দাসের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় আকুল প্রার্থনায় ভরা সেই কথাগুলো। তবে অবশ্যই মানুষ হয়ে।
গাছ থেকে একটু দূরেই এবার শুরু হলো মূল পর্বের আনুষাঙ্গিকতা। নৌকা থামিয়ে শুরু হলো প্রতিভা অন্বেষণ কার্য। পর্বটি কারো জন্য অনেকটা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ কারো জন্য ‘নদী তুমি দুভাগ হও, আমি তাতে প্রবেশ করি’র মতো মনে হলো। রুমান স্যার, রেহানা ম্যাডাম, অপু, আদররা ছিল প্রথম দলে। অপরদিকে ফারজানা রুমি’র সুরেলা কণ্ঠের বাংলা, হিন্দি আর ইংরেজি গান, সদ্য ভর্তি হওয়া আরফানের সুরেলা কণ্ঠের মন মাতানো সব ভয়ঙ্কর সুন্দর পরিবেশনা সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিল অসাধারণ সুরের মূর্ছনায়। সাথে ছিল মুয়াজ, জোবায়ের, আহসান হাবিবের দরাজ কণ্ঠের ওরে নীল দরিয়া আমাই দেরে দে ছাড়িয়া, আমার একটা নদী ছিল’ ‘চল না ঘুরে আসি’র মতো বিমোহিত করা সব যৌথ গান। নিতান্ত প্রয়োজনে হাসা আবু সুফিয়ান স্যারও সেদিন হেসেছিলেন প্রাণ খুলে। জাফর ভাই আর সুফিয়ান স্যার গেয়েছিলেন উদীয়মান শিল্পী ড. মাহফুজুর রহমানের সুরে উদাম কণ্ঠে। শুধু গানই নয়; কৌতুক, ধাঁধা, গল্প কী ছিল না সেদিনের পরিবেশনায়!
এবার নৌকা চলল বেশকিছু সময় ধরে। ধীর লয়ে নৌকা চলে। সন্ধ্যার পূর্ববর্তী রঙিন আলোর সাথে স্নিগ্ধতায় ভরা হিমেল বাতাস। নবাবের বাগের কাছাকাছি নৌকা। চোখে পড়ল নদীর মাঝে গজিয়ে উঠা চরের মতো এক টুকরো জায়গা। পুরো জায়গাটা ছেয়ে আছে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর কাশফুলে। চোখ শীতলকারী হেমন্তের কাশফুলের এ সময়টা বৈকালিক ভ্রমণের অসাধারণ জায়গা হতে পারে। প্রিয় কাশফুল দুদণ্ড শান্তিও এনে দিনে পারে ক্লান্ত পথিকের প্রাণে। ভ্রমণে একাকার হওয়া একঝাঁক তরুণ প্রাণ স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ হলাম আবারো। বার বার মনে হলো, ‘তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর না জানি তাহলে তুমি কতো সুন্দর কতো সুন্দর’!
অবশেষে রওনা দিলাম বেরিবাঁধ ঘাটের দিকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বর্ণালী আকাশ তার বর্ণ হারাচ্ছে। সূর্যও দিগন্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে পরের ভোরে জেগে উঠবে বলে। মনে হলো শ্রীকান্তের সেই গানটি ‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো, যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো’?
Very nice post bro. Please upvote back me
nice post
bro ami apnar post a like comment dichi
apni o amar post a like comment den pliz
https://steemit.com/@mdtusher123
Congratulations @bmalim77! You have completed some achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
Click on any badge to view your own Board of Honor on SteemitBoard.
For more information about SteemitBoard, click here
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOPvai ami vote dilam apni ki amake dieasen ? please rat 6:00 ta theke 10 tar modday post korte admin rihhan vai bolse, tahola sobai vote and post korte sobidha hobe. please don't mind. My link https://steemit.com/@habib1978
Ha via diasito