সাইফুলের প্যাডেল আর ঘুরে না

in #bdc4 years ago (edited)

সাইফুল ছেলেটার মুখে সব সময় বাঁকা ঠোঁটের হাসি লেগেই থাকে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার ঠোঁট দুটো বাঁকায় তৈরী করেছেন। নরম স্বভাবের। তার মুখ দিয়ে প্রথম শব্দ থাকে ভাইজান। ভাইজান দিয়েই তার কথা শুরু হয় আবার ভাইজান দিয়েই শেষ হয়।

তিন চাক্কার ড্রাইভার। পেডেল মারে খুব ফূর্তির সাথে। এক কোথায় তার পেশাতে নিজেকে সেরা মনে করে। নিজেকে পাইলট বলাতেই সাচ্ছন্দ বোধ করে।

সবে মাত্র ২০/২২ বছর হবে। এতেই বউয়ের সংখ্যা একটি। এক সন্তানের বাপ ও বনে গেছে ইতিমধ্যে। ছেলের নাম মুসা। নামে একটা আভিজাত্য আছে, তাই না। মুসাকে নিয়ে সাইফুলের অনেক স্বপ্ন। তাকে অনেক পড়াশুনা করাবে। কত গল্প ওর মুসাকে নিয়ে। ওর মুসাকে নিয়ে গল্প করলে আর নিঃশ্বাস নিতে চায় না সন্তানকে নিয়ে কার না স্বপ্ন থাকে।

ওর রিক্সায় উঠলেই বলতাম জীবনে কি করলাম রে সাইফুল, একটা বিয়া ও করতে পারলাম না। সে কি হাসি। হাসি দেখলেই বুঝা যায় পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ।

বাড়ির সামনে মোড়টাতে সব সময় আট দশটা রিক্সা ওয়ালা থাকে। কাউকে চাচা কাউকে ভাই আবার কাউকে নাম ধরে ডাকতাম। তো এই সাইফুল ছিল সবার টপ লিস্টে। যেই আসুক সাইফুল কই রে। সাইফুল এটা করতো, সাইফুল ওটা করতো। আর সেও সবার কথাই রাখার চেষ্টা করতো।

হঠাৎ এলাকার পাতি নেতা তার রিক্সায় বাজার যায় আবার আসে। এসে ৫ টাকা কম ভাড়া দেয়। পাঁচ টাকা তো আর কম না। পাঁচ টাকা আয় করতে রিক্সার কত প্যাডেল যে মারতে হয় সেই হিসেব করেছেন কখনো? সেই হিসেব করতে হবে না। একটা বার প্যাডেল মারলেই হিসেবের খাতা বন্ধ করে দিবেন।

যাই হোক সেই পাঁচ টাকা কম দেওয়ায় সাইফুল বলে উঠে ভাইজান আরো পাঁচ টাকা দেন। এতেই নেতা নামের খ্যাতার টিক্কি গরম হয়ে যায়। রীতি মত তেলে বেগুনে অবস্থা। সেখানে কিছু কথা কাটাকাটি করে। স্পষ্টভাষী সাইফুল কি আর চুপ থাকে। পাতি নেতার মুখে লেগেছে পাদ, সরি দাগ। যাক সবার উপস্তিতিতে পরিবেশ ঠান্ডা হয়েছিল।

হঠাৎ করেই সাইফুল নেই। দুদিন তিনদিন এভাভে সপ্তাহ খানেক হল। ওর ফোন নাম্বার টাও বন্ধ। পরে মনে পরলো আমাকেই তো বলেছিল ভালো কোন মোবাইল মেকার আছে নাকি ওর ফোন নেটওয়ার্ক পাচ্ছিল না, ঠিক করাবে ফোন।

পরে অন্য রিক্সা ওয়ালাদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো। আবার ঐ পাতি নেতার সাথে মারামারি লেগেছিল। তার মোটর সাইকেলে নাকি সাইফুলের রিক্সার ধাক্কা লেগেছিল। তাই আগের ক্ষোভ টা সুযোগ পেয়ে সুদে আসলে উছুল করে নিয়েছে। সজরো নাকি পেটে লাথ্থি মেরে ছিল। ছিটকে পরেছে দুরে গিয়ে। সেই থেকে আর আসে না সাইফুল।

সেই থেকে পরে গিয়ে সাইফুলের কমরে ব্যাথা। ভেবেছিল হালকা ব্যথা দুই একদিনে ঠিক হয়ে যাবে। এদিক তার প্যাডেল মাড়াও হয় না সংসারের চাকাও ঘুরে না। ব্যথার তীব্রতা বারতে থাকে। নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে পাঁচ টাকার টিকেটে ডাক্তার দেখায়। এ-ক্সে সহ বিভিন্ন টেস্ট করতে বলে। সংসারের চাকায় ঘুরে না আবার এ-ক্সে আর টেস্ট। ওভাবেই চালিয়ে দেয় সপ্তাহ খানেক। সাইফুলের বউ সাবানা মানুষের বাসায় কাজ করে অন্নের রোজগারের জন্য । দুচারটা চাল ডালের ব্যবস্থা করেই ফেলে। নিজে না খেয়ে থাকতে পারতো কিন্তু ছোট্ট ছেলে আদরের মুসা। তাকে কি না খাইয়ে রাখতে পারে।

শুক্রবার রাতে সাইফুলের কোমরের অসহ্য ব্যথা। পাশের বাড়ির চাচী আসে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করলেন। অসহ্য ব্যথা সহ্য করতে না পারে গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে চলে গেছে পরপারে। সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিতে। তার ছেলের স্বপ্ন গুলো হত্যাকারীর বিচার দিতে। মুখের হাসি কেড়ে নেওয়ার বিচার দিতে।

images 10.jpeg
source