হলগেট...

in BDCommunity2 years ago

সূর্যসেনের হলগেটের সাথে নিউইয়র্ক শহরের তুলনা করা চলে। নিউইয়র্ক এর মত যে ঝকমকে আর সুন্দর ঠিক তা নয়। নিউইয়র্ক নাকি কখনো ঘুমায় না। হলগেটও তাই।
একদিন রাত সাড়ে ৩ টার সময় হলে এসেও রব নিজে দেখেছে যে হলগেটে চা নিয়ে সিগারেট ওয়ালা জোড়া বাদামী রঙের কুকুর এর পাশে বসে আছে আর কাছে দাড়িয়ে তিনটা ছেলে সিগারেট খাচ্ছে।
সিগারেট টানতে টানতে জাহিদ এগিয়ে চললো আর রব তার পাশে পাশে হেটে চললো।
দুজনে দুটো সিগারেট টানতে পারলে ভালো হতো কিন্তু একেকটা বেনসন আবার ১৫ টাকা করে। রব ভাবে সামান্য হিসেব করে না চললে এই দুনিয়ায় টিকে থাকা খুব কঠিন।
কিন্তু বেনসন না নিয়ে হলিউড কিনলে যে হিসেব তাদের দুজনের জন্যই সহজ হতো সেটা রব বা জাহিদ কারোরই মাথায় আসে না।
রব যে অবশ্য একেবারে চেষ্টা করেনি তা নয়। একবার মাসের শেষে খুব হিসেব করে চলতে গিয়ে ডারবি কিনে খেতে হয়েছিলো দুই দিন। সেবার তার হাত থেকে নিয়ে দুটো টান দিয়েই জাহিদ সেটা মাটিতে ফেলে দিয়ে জুতোর তলা দিয়ে এমন ডলা দিয়েছিল যে সিগারেটটার মুখ থাকলে বেশ ভালো কিছু অভিশাপ শোনা যেতো।
"আরে আরে, আরো দুই টান হতো ওটাতে" রব প্রায় চেচিয়ে উঠেছিলো কিন্তু জাহিদ কোন কথা শোনেনি।
"বাডা টানিস কেমনে। মনে হচ্ছে কাগজ পুড়িয়ে ধোয়া খাচ্ছি। নিজের প্রতি সামান্য দয়া করা শেখ। ফইন্নির মত এরকম করস ক্যান? ফুসফুসের গোয়াটা যখন মারবি তখন ভালো জিনিস দিয়ে মারবি না হয় এক্কেবারে ভালো হয়ে যাবি। ডারবি দিয়ে নাটক চোইবার তো কিছু নাই"- জাহিদের এই কথার পর বলার কিছু খুজে পায়নি রব। যদিও জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছিলো ফুসফুসের আবার গোয়া হয় কেমনে বা সেটা কি জিনিস কিন্তু এক রকম ভয়েই সেটা আর কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি।
বেনসনে লম্বা টান দিতে দিতে জাহিদ এগিয়ে যাচ্ছে হলের সামনে মাঠের দিকে আর রব তার সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। জাহিদ অসম্ভব জোরে হাটে সবসময়। মনে হয় যেন তাড়া আছে। হাটতে নাকি তার ভালো লাগে। তা বেশতো, ভালো কথা। কত মানুষের কত জিনিসই তো ভালো লাগে, জাহিদের নাহয় হাটতে ভালো লাগে। কিন্তু তাই বলে কি বাসর রাতে প্রথমবার সংগমের চেয়েও দ্রুত হাটতে হবে? জাহিদের পাশে হাটতে হাটতে সেকথাই ভাবতে ভাবতে পরম আগ্রহ নিয়ে সিগারেটটার দিকে তাকিয়ে আছে রব। জাহিদের টানা শেষ হলে শেষের অর্ধেক সে টানবে। তারপর পরের দিন দুপুরে আবার সে কিনবে সিগারেট, আবার সেট দুজনে ভাগ করে টানবে। এভাবে চলতে থাকবে।
জাহিদ সবসময় সিগারেটটা ধরায়। এর দুটো কারন আছে। সিগারেট ধরাতে তার ভালো লাগে আর শেষের দিকে তার নাকি সিগারেটের আচে বিরক্ত লাগে। এসব শুনে জাহিদের সামনেই নাক সিটকায় রব।
"যত্তসব নাটক। সিগারেট খাইতে পারলে পুরোটাই খাবি, না পারলে এত্ত ন্যাকা করার কি দরকার?" -সুযোগ পেয়ে সে ঠিকই জাহিদের উপর ঝাড়িটা মেরেছিলো। এরকম সুযোগ খুব বেশি আসে না তাই সুযোগ গুলো হাতছাড়া হলে রব একরকম বিলাপ-ই করে বলা যায়। এসব ভাবতে ভাবতেই দুই বন্ধু এগিয়ে চলেছে মাঠের দিকে। রবের চোখ সিগারেটের ওপর থেকে সরে না। সরবেই বা কেন? জাহিদ যে সুযোগ পেলে নিজের ভাগের চেয়ে দুই টান বেশি দিতে দেরী করবে না।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এভারেজ সিগারেটে নাকি ৩২টা পাফ দেয়া যায়। সে হিসেবে জাহিদের ভাগের টান শেষ হতে আরো ৮/১০ টা টান বাকি। এমন সময় জাহিদের ফোন বেজে ওঠে। তু চিজ বাড়ি হ্যায় মাস্তু মাস্ত তু চিজ বাড়ি হ্যা.......
"তোরে না বলছিলাম রিংটোনটা চেঞ্জ করতে?" রব জিজ্ঞেস করে। এই টোনটা শুনলে কেন জানি তার লজ্জা লাগে।
"থাকনা, মজার গান তো"- দাত বের করে জাহিদ হাসে। এক হাতে বেনসন ধরা আর অন্য হাতে সে পকেটে বরশি দিয়ে মাছ ধরার মত করে হাতাতে হাতাতে ফোনটা বের করে আনে। ফোনের দিকে একপলক তাকিয়েই রবের দিকে সিগারেটটা বাড়িয়ে দেয়।
"ধরতো, কথা বলে নেই" সে রবের দিকে না তাকিয়েই বলে।
কিছুটা অবাক হলেও বিনা বাক্যে রব সিগারেটটা নেয় আর সিগারেট মুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই জাহিদ উল্টোদিকে ঘুরে গট গট করে হেটে এগিয়ে যায় শ্রবণসীমার বাইরে।
অলস ভংগিতে রব সিগারেটটাতে লম্বা একটা টান দেয়। যেন বুক ভরে শ্বাস নেয়ার ব্যর্থ এক প্রচেষ্টা। গলার কাছে কেমন যেন করে ওঠে।
তবে কি বেনসন বাদ দিয়ে গোল্ডলিফে ফেরত যেতে হবে?
(চলুক গল্পটা)

IMG_20190529_175420.jpg

Sort:  

Beautiful photograph 😍

I love this picture. Though this one may not be relatable with this topic but it certainly holds some meaning.
Thank you so much :)

Best wishes for hive brother

Thank you so much Sis .....

Lots of love and best wishes brother

Very beautiful writing of jahangir nagar University, that's true a hall gate never off. One can enter and get out from the area anytime.

Masterda Surjasen is a boys hall of University of Dhaka. But as you have said every boys hall of any public universities has the same scenario. Everyone who lives there has some stories like this one.
Thank you so much brother :)

হলের ওই রাতজাগা মানুষগুলোর কাছে অনেকেই ঋণী। অনেক ক্ষেত্রে রাতে পেটভর্তি খাবার নিয়ে ঘুমানোর সৌভাগ্যটা এদের উপস্থিতির কারণেই সম্ভব হয়ে ওঠে। ভালোবাসা তাদের প্রতি।

হলের অনেকেই আছে যাদের অনেক সময় রাতজাগার স্বভাব থাকে অথবা প্রয়োজনে রাত জাগতে হয়। তাদের কাছে এই রাত জাগা মানুষগুলোই ভরসা। আপনার মত আমিও বলতে চাই, "ভালোবাসা তাদের প্রতি"।
ধন্যবাদ ভাই :)

The story is good. But it would have been better if the two places had used some other analogy.

You are absolutely right brother. Thank you so much for your nice feedback.