শেখা একটি নিয়ত চলমান পক্রিয়া, যেখানে নতুন কিছু শেখার জন্য কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীর রূপ বদলায়। সাথে বদলায় অনেক কিছু। প্রযুক্তি, পরিবেশ, মানুষের রুচি, ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি অনেক কিছু। সবচেয়ে দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হয় বিজ্ঞান ও অর্থনীতি। আজ থেকে দেড়শ বছর আগের কোন মানুষই পাখির মতো পাখা মেলে আকাশে উড়ার কথা চিন্তাও করতে পারতো না। কিন্তু আজ এই পৃথিবীরি মানুষের হাতে তৈরী রোবট মঙ্গল গ্রহে প্রাণ অথবা পানির সন্ধান করে বেড়াচ্ছে। স্পেস এক্স এখন মহাকাশে পাঠানো রকেটগুলো পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরিয়ে আনছে অক্ষত অবস্থায়। এইসব কিছুই আগে ভাবা যেত না। তবে এখন সেগুলো ঘটছে। পৃথিবীর সব কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। আর তাই আমাদের মধ্যেও এইসব পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর একটা তাড়া থাকে। আর এর জন্য নতুন জিনিসগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
শুরুটা করেছিলাম “শেখা” নিয়ে। “শেখা” আর “শিক্ষা” এই দুটি শব্দের মধ্যে অনেকটা অর্থগত মিল থাকলেও ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা এদের ভিন্নতা দেখতে পাই। ছোট বেলায় প্রথম হাটতে পারা, প্রথম সাইকেল চালানো, প্রথম সাঁতার কাঁটা এইসব কিছুই শেখার বিষয়। আর শিক্ষা শব্দটার পরিধি অনেক বেশি।
নতুন কিছু শেখার জন্য আসলে নির্দিষ্ট কোন বয়স নেই। তেমনি শিখতে চাইলে যে কোন কিছু থেকেই শেখা যায়। আজকে আমার লিখাটির পেছনে একটি ঘটনার অবদান রয়েছে।
এইতো কদিন আগে আমি বাসা সাভারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হই। বাসে করে যাচ্ছি একা একা। তাই ভাবলাম ফেসবুকে একটু ঢুঁ মেরে আসি। তো স্ক্রলিং করতে করতে আমার খুব কাছের এক বন্ধুর শেয়ার করা একটি ভিডিওতে চোখ আটকে যায় আমার। ভিডিওটির শিরোনামটি ছিল অনেকটা এরকম, “রিজিকের যত্ন নিতে শিখুন।“ প্রথমে একটু অবাক হই। চিন্তা ঢুকে গেল মাথায়। রিজিকেরও যত্ন নেয়া যায়! আমি ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখি এবং প্রথম বুঝতে পারলাম যে রিজিক কিন্তু শুধুমাত্র খাবার বা টাকা, এমনটা না। যেমন আমার ল্যাপটপও কিন্তু আমার রিজিক অথবা রিজিকের অংশ, যেটাতে কাজ করে আমি আমার আয়ের একটা পথ তৈরী করতে পারছি। এই রিজিকের প্রতিও আমাকে যত্নবান হতে হবে। এই ঘটনার কিছুদিন আগেও আমার খুব বন্ধু সাকিবও এরকম একটা কথা আমাকে বলেছিল। তাই রিজিক নিয়ে একটু গবেষণা করতে ইচ্ছে হল। রিজিক সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারি আমি। এত বছর পর হয়তো রিজিক নিয়ে কিছু নতুন তথ্য জানতে পারছি, ফেসবুক থেকে কিছু শিখছি ব্যাপারটি আমার কাছে ভালোই লাগছে। তখনই, শেখার যে আসলে কোন বয়স নেই কথাটির গুরুত্ব আরো ভালোভাবে মনে ধরে যায়।
রিজিক নিয়ে নতুন করে জানার আগ্রহ থেকে যা জানলাম তা আমি কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। রিজিক খুব গভীর একটি বিষয় যদি আমরা বুঝতে পারি। মআমি পুরো জীবনে কত টাকা আয় করবো সেটা লিখিত, কে আমার জীবনসঙ্গী হবে সেটা লিখিত, কবে কোথায় মারা যাবো সেটাও লিখিত। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আমি কতগুলো দানা ভাত দুনিয়াতে খেয়ে তারপর মারা যাবো সেটা লিখিত। একটি দানাও কম না, একটিও বেশি না। দান করি, এটা লিখিত যে আমি সারাজীবনে ১ কোটি টাকা আয় করবো, এই সিদ্ধান্ত আল্লাহ্ তায়ালা নিয়েছেন। আমি হালাল উপায়ে আয় করবো না হারাম উপায়ে আয় করবো সেই সিদ্ধান্ত আমার।
যদি ধৈর্য ধারণ করি, আল্লাহ্ তায়ালার কাছে চাই, তাহলে হালাল উপায়ে ওই ১ কোটি আয় করেই আমি মারা যাবো, হারাম উপায়ে হলেও ওই ১ কোটিই... নাথিং মোর, নাথিং লেস! আমি যেই ফলটি আজকে দেশে বসে খাচ্ছি, সেটা হয়ত বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করা। ওই গাছে যখন মুকুল হয়েছে তখনই এটা নির্ধারিত যে সেটি আমার কাছে পৌঁছাবে। এর মধ্যে কত পাখি ওই ফলের উপর বসেছে, কত মানুষ এই ফলটি পাড়তে গেছে, দোকানে অনেকে এই ফলটি নেড়েচেড়ে রেখে গেছে, পছন্দ হয় নি, কিনে নি। এই সব ঘটনার কারণ একটাই, ফলটি আমার রিজিকে লিখিত। যতক্ষণ না আমি কিনতে যাচ্ছি, ততক্ষণ সেটা ওখানেই থাকবে।
এর মধ্যে আমি মারা যেতে পারতাম, অন্য কোথাও চলে যেতে পারতাম, কিন্তু না। রিজিকে যেহেতু লিখিত আমি এই ফলটি না খেয়ে মারা যাবো না।
রিজিক জিনিসটা এতোটাই শক্তিশালী!
ভালো লাগলো আপনার কথা গুলো।।
ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া করবেন ভাই।
Inshallah
মাঝে মাঝে কোনোকিছু নিয়ে যখন অধৈর্য হয়ে পড়ি তখন এই রিজিকের কথাগুলো ভেবে একটু প্রশান্তি খুঁজে নেই। যে হয়তো এটা আমার জন্য আল্লাহ়্ তায়ালা নির্ধারিত করেন নি, হয়তো এর চেয়ে ভালোকিছু আমার রিজিকে লিখা আছে।
আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনার কথা আমরা কেউ জানি না। তবে তিনি তাঁর বান্দাকে যথেষ্ট সুযোগও দিয়ে থাকেন। সুযোগ গুলোই আমাদের রিজিক। মাঝে মাঝে বা বেশিরভাগ সময় আমরা হয়তো সুযোগগুলো হাতের কাছে পেয়েও অবহেলা করে থাকি। পরে আফসোস করি কেন আমি এটা পেলাম না। এতো কিছুর পরও মহান রবের নিয়ামত প্রদান কখনো থেমে থাকে না। আরো ভাল কিছু আমাদের রিজিকে লিখে রাখেন তিনি। শুধুমাত্র আমাদেরকে খুঁজে নিতে হবে সেটা।