এক নক্ষত্রের পতন .......

in BDCommunity3 years ago

man-5640540_1280.jpg
Pic

সাধারণত সব বাবা-ই সন্তানদের সুপার হিরো হয়ে থাকেন। বাবা-র ঠিক পড়েই যার স্থান তিনি হচ্ছেন শিক্ষক বা শিক্ষা গুরু। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। বাবা-র পর-ই কাওকে যদি আমার সুপারহিরো বলতে হয় তিনি শ্রদ্ধেয় হযরত স্যার। স্যারের সাথে আমার জার্নি শুরু হয় হাই স্কুল লাইফ থেকে। স্যার ছিলেন আমাদের প্রধান শিক্ষক। ক্লাস সিক্স এবং সেভেনে যদিও স্যারকে প্রচন্ড ভয় পেতাম কিন্তু এইটে উঠার পর আমার আর স্যারের বন্ডিং টা সব থেকে স্ট্রং হয়। স্যার আমাদের ম্যাথ করাতেন। কি অসম্ভব বিচক্ষণ ছিলেন তিনি। নিমিষেই সব প্রশ্নের সমাধান করে দিতেন। আমরা মজা করে বলতাম স্যার আপনার ব্রেইন তো কম্পিউটারের গতিতে চলে। স্যার মুচকি মুচকি হাসতেন আর বলতেন, অনুশীলন করলে তোমরা আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে।


ক্লাস এইট থেকে এসএসসি পর্যন্ত স্যার আমাকে বাসায় এসে টিউশন দিতেন। অবাক হয়ে ভাবতাম একজন মানুষ একই সাথে ম্যাথ, ফিজিক্স ,ক্যামিস্ট্রি, বায়োলজি – এতো গুলো সাবজেক্টে কি করে পারদর্শী হতে পারে। তার বোঝানোর ক্ষমতা ছিলো অমায়িক। সব সাবজেক্ট হাতে ধরে বুঝিয়ে দিতেন। সব থেকে মজার বিষয় ছিলো একটা থিওরি বোঝানোর পর স্যার বই থেকে উদাহরণ দিতেন না। আমার পড়ার টেবিলে বা আমার রুমে যা থাকতো তাই দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। মোট কথা বইয়ের ভাষাকে আরো বেশী বাস্তবধর্মী করে তুলতেন।


স্যার আমার বাসায় আসতেন সপ্তাহে তিন দিন। এই তিনদিনের প্রতিটাদিন-ই ধবধবে সাদা আইরন করা শার্ট পড়তেন। কোনদিন দেখিনি স্যারের শার্ট হালকা কুচকানো বা রিংকেল আছে। সবসময় নতুনের মতো। স্যার সবথেকে বেশী যত্ন নিতেন তার চুলের। ছেলেদের চুল কি যে অসম্ভব সিল্কি হতে পারে আমার জানা ছিলো না। কালো কুচকুচে সিল্কি সাইনি চুলগুলো স্যার সবসময় আচড়ে রাখতেন। এজন্য তার পকেটে মিনি কোম্ব রাখতে হতো। আমি দুষ্টুমি করে স্যারকে হেয়ার টিপস দিতে বললে স্যার বলতেন, আমার মায়ের চুলগুলো তো আমার মতোই। টিপসের কি দরকার!


বিগত ২ বছর ধরে স্যার মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু হার মানেন নি একটা দিনের জন্য-ও। লড়াই করে গেছেন। শত অসুস্থতার মাঝেও স্কুলে আসতেন। কেমোথেরাপি দেয়ার জন্য স্যারের সখের চুলগুলো পড়ে গিয়েছিলো। তবুও ক্যাপ পড়ে বের হতেন, পড়াতে যেতেন। রাস্তায় দেখা হলে আগের মতোই মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, কেমন আছো মা? রোদে আমার সুন্দর মেয়েটা কালো হয়ে যাচ্ছে..... স্যারকে যখন জিজ্ঞেস করতাম আপনি কেমন আছেন? শরীর কেমন?.... উত্তরে মুচকি হাসতো।।

স্যার আর নেই। শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হলো তাকে। আপনার জন্যই আজকের এই আমি। আমার শিক্ষাগুরু আপনি। অসুস্থ জেনেও আপনার খোঁজ নিতে পারিনি স্বার্থপরের মতো এড়িয়ে গেছি। আমাকে মাফ করবেন স্যার। শেষবারের মতোন আপনাকে ছুয়ে দেখা হলো না। আপনার নিথর দেহ দেখার জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই। ওপারে ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। আমীন।।

Sort:  

Hi @asfekatisha, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON