দীর্ঘশ্বাসের জীবনপ্রবাহ... [প্রবন্ধ ]

in BDCommunity3 years ago

কিছু অনুভূতিতে মনটা সবসময় ভারী হয়ে থাকে। আমি ভেবে দেখেছি, সুখের চেয়ে অনুভূতিতে দুঃখের প্রগাঢ়তা বেশি।জীবন সায়াহ্নে যে জিনিসটি আমাদের প্রত্যেককে ভাবিয়ে তোলে, অতীতের সুখ ও দুঃখের স্মৃতি গুলো যে চিরাচরিত নিয়মে মনে রেখাপাত করে, তার সাবলীল রূপকাশ্রয়ী বর্ণনা দেয়ার এই সামান্য প্রয়াস আমার।
কিছুটা মানবদর্শন, জীবন ভাবনা আর জন্ম মৃত্যুর নিত্যতা ও সামান্য তুচ্ছতা নিয়ে জীবন প্রবাহের এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে লিখব।

photo-1494797262163-102fae527c62.jpeg
Unsplash
ঝরে পড়া পাতার মতো জীবন সাহিত্যের অমীয় দিকগুলোর নিরিখে কিছু বলার থাকে না, তবু কিছু কথা নিরিবিলি মনের অন্তরালে বলি, ভাবার বিষয় আছে, এ জীবন, এ জগৎ, তার বসবাস নিয়ে। তাই, আপনমনে লিখে যাই।

দেখুন, মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়ার মর্ম সবাই বুঝতে পারে না,এ জীবন নাট্যে কতকাল ধরে যে মঞ্চস্থ হচ্ছে জীবনের গল্পগুলো তার ইয়ত্তা নেই তেমন। এ ধরনীতে এসে অনাবিল আনন্দে লুটোপুটি খেয়ে মানবজাতক একসময় বিদায় নেয়, আসা যাওয়ার এ খেলায় কোন বিরতি নেই, কোনো থামাথামি নেই, এক ঘূর্ণায়মান চক্রে সবাই আবদ্ধ।

কারো এ পৃথিবীতে আগমনে যেমন ঘন্টাধ্বনি বেজে অভিষিক্ত করে, ঠিক তারই মতো নিজের চরিত্রের পূর্ণতা পেলে এক দৈবযোগের ডাক আসে, জীবন নদীর ওপারেতে ভেলায় ভেসে সে চলে যায় ওপারে.. কারো জন্যে থেমে থাকে না এ জীবন, না কারো জন্য থমকে যায় এ পৃথিবী, পৃথিবীর অফুরান আয়োজনে মিশে যায় চরিত্রগুলো।

photo-1593240637899-5fc06c754c2b.jpeg
Unsplash
নাটকের উপমায় সব চরিত্রগুলো বিলীন হয়ে থাকে, এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যায় না, বোঝা যায় না। একটি রঙ্গশালার চরিত্রগুলো আপন নাট্যের উপাদানে ভরপুর থাকে,

শৈশবের ছোট গন্ডির ভেতরের চরিত্রগুলো মা -বাবা, আত্নীয় পরিজন, ধূলোয় কাটিয়ে দেয়া বাল্যবন্ধু।
ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি, রাক্ষস খোক্কসের গপ্পো, রুপকথার ঐ বাঁশি,সুয়োরানী- দুয়োরাণীর গল্প শোনা , খাওয়া দাওয়া আর ঘুমের মাঝেই শিশুর চরিত্রের ফুটে ওঠা, একটু বড় হয়ে পাড়ার বন্ধুদের সাথে ডাঙুলি খেলা, দলবেঁধে নদীতে সাঁতরানো, আম কুড়োতে বের হওয়া, ঝড়ের দিনে হেঁটে যাওয়ার মাঝে কৈশোরের চরিত্রের দুরন্তপনা,
যৌবনে কলেজে উঠে আধুনিক গানের বিহব্বলতায় সেতারের সুর ছড়ানো, এ দিক ওদিক ঘুরতে যাওয়া, মোটরসাইকেল রাইড,প্রেম কুড়োনো, পৃথিবীকে বুঝতে শেখা, রূড় বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া, আবেগের খেয়ায় উঠে উচ্ছাস, এই চরিত্রের দিনগুলো চলে যায় নিমিষেই।

যৌবন চরিত্রে বেশিদিন থাকে না কেউ, সংসার ধর্ম বুঝতে বুঝতে, জীবিকার কোলাহলী অন্বেষণে এ পাড় থেকে ও পাড়ে, নগর থেকে বন্দরে চলে যাওয়া, একটা নতুন গড়ে ওঠা পরিবারের স্বপ্ন গড়ে তোলা,
তেজদীপ্ত শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সমাজ সভ্যতায় টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মাঝে আছে গৌরব, এ তো আমার তোমার সে যৌবন, কতটুকু সময়স্থায়ী তার বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিছু দূর পেরোতে নিকষা কালো চুলে পাক ধরে, শুভ্রতায় চুলের রং গড়ালে আর সে আবেগের লেশ চোখে পড়ে না, দারুন স্বেচ্ছাচারী আর রাগ, অভিমান অনুরাগ কোথায় যেনো মিলিয়ে যায়।
প্রৌড়ত্ব্য হয়তো এসেই পড়লো, সেই শৈশবের নতুন দিনের নতুন ভোরের ঝিলিক ফুটে, কৈশোরের সকালটার সোনালী আভা, যৌবনের তেজোদ্দীপ্ত দুপুরের গৌরব কোথায় গিয়ে ঠেকলো, কোথায় হারিয়ে গেল ঐ শক্তিসামর্থ্য, চুলের পাক ধরায় তো এখন, দুপুর বেলা পেরিয়ে বিকেলের হালকা রোদ গায়ে মেখে গেছে, কাঠফাটা তেজে জ্বলন্ত যৌবনটা কি করে আমাকে পর করে তুললো, এত আলো! এত আলো, কিভাবে ধোঁয়ায় মিশিয়ে গেল, এখন তো শুধুই মিহি রোদের ক্ষীয়মান সূর্য।

photo-1454418747937-bd95bb945625.jpeg
Unsplash
এ সময় এসে চালসে বয়সে, সব ফুরিয়ে যায়, অনুভবের এ সময়,পুরো যৌবনের ছায়া এসে পড়ে এ বয়সে, তারপর পন্চাশ পেরোলে তো পড়ন্ত বিকেল, রোদের আলো কমে গিয়ে প্রজাপতির ঘুরে বেড়ানোর সময়, সমাজের নিগড়ে প্রতিষ্ঠিত এক বয়স যেথায় শুধু সম্মান আর প্রতিপত্তি, কিন্তু শরীরে দানা বাঁধে রোগ ব্যারাম, বার্ধক্য আর জীর্ণতা ছুটে আসে কোথা হতে, এরই মাঝে ছেলেমেয়ের বয়স বেড়ে যায়। সংসারের নতুন রুপ চোখে এসে পড়ে।

এভাবে, পুরো জীবনটাই একটা দিনের মতো, দিনের বিভিন্ন ভাগের মতো রূপ বদলায়।

আমি প্রবন্ধটির শুরুতে বলেছিলাম, মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়ার মর্ম সবাই বুঝে উঠতে পারে না, সবার হয়তো অনুভবের সেই বিশাল শক্তি থাকে না, কিন্তু, কীভাবে যেন আমি পৃথিবীর অনেক জিনিসের মধ্যে মানুষের জীবনের নানা দিকের মিল দেখতে পাই।
সেই মিলগুলো খুঁজে বের করে উপস্থাপন করে মজা পাই, তাই আপনাদের সামনে তা তুলে ধরি।

লেখার ব্যন্জনাময় ভাষার জন্য দুঃখিত। কিন্তু, অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে যে নান্দনিকতা আর ভাব আছে তাকে উপেক্ষা করা যায়না।
লেখার মাধ্যমে যে ভাবসাগরে ডুব দিয়ে মুক্তা কুড়োনোর মধ্যে যে অনুভূতি আছে, তাকে সাধু ঢংয়ের ছাঁচে না ফেলে প্রকাশ করলে, সাহিত্যের মূল সৌন্দর্য আর অবশিষ্ট থাকে না। তাই, এভাবে লিখি৷

সবার জীবনের মধ্যেই রয়েছে সেই একই চিরাচরিত কাব্য, যেটা দেখে দেখে আপ্লুত হই বারবার৷ কি আছে, জীবনের ক্যানভাসে, সেই তো একই রঙে রাঙানো তুলি আর জলরঙের ছাপ দিয়ে আঁকা ছবি, সেই একই নৌকার নাবিক আমরা, বিশাল সমুদ্রের বুকে একটু একটু করে এগুচ্ছি।

মানুষের পুরো জীবনে সুখ দুঃখের সেই একই প্রকাশ, কারো জীবনে সুখের পরিধি হয়তো বাহির থেকে আকাশচুম্বি মনে হয়, কারো জীবনের দুঃখের সীমা ছাড়িয়ে প্রবাহমান নদীর কান্নার মতো মনে হয়,
কিন্তু এখানে একটি অনুভূতির ভুল আছে।
পুরো জীবনটার মধ্যে নৈরাশ্যবাদী ভাবটা সবার জীবনে একইভাবে বয়ে যাচ্ছে।

photo-1499209974431-9dddcece7f88.jpeg
Unsplash
সুখের সাগরে, কিংবা দুঃখের অসীম সীমানায়, পড়ে রয় যারা, তাদের সবার জীবনেই একটা চরম নৈরাশ্যবাদী চিন্তা এসে গ্রাস করে।
মানুষের মন সে পৃথিবীর বিরাজমানতার জন্য চিরদুখী হয়ে রয়৷
অকূল পাথারের এ নিঠুর পারাবারের রহস্য হয়তো, তুমি আমি কেউই জানি না,
সে চেষ্টা না করি, একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
আজকের মতো লেখা শেষ করি।

আবার দেখা হবে, অন্য কোন গল্প নিয়ে, অন্য কোন প্রবন্ধ অথবা জীবনঘনিষ্ঠ লেখা নিয়ে, ভালো থাকুন সবাই,
বিদায়।
👍🙂💖

Sort:  

Congratulations @asif15! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You published more than 40 posts.
Your next target is to reach 50 posts.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Check out the last post from @hivebuzz:

Feedback from the July 1st Hive Power Up Day - ATH Volume record!