সৎ মানুষ গুলোর কি যন্ত্রণা বেশি?

in BDCommunity2 years ago

আমার কলেজ জীবন এর বন্ধু,নামটা ইচ্ছে করেই লিখলাম না।চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি তে অনার্স মাস্টার্স শেষ করছিল। সেই সময় একবার গিয়েছিলাম চিটাগং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস এ বেড়াতে। পাহাড়ে ঘেরা ক্যাম্পাস, ভালো লেগেছিলো। মনে নেই তেমন কিছুই। চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে বা ট্রেনে দুই ভাবেই যাওয়া যায় ক্যাম্পাসে।

Chittagong University.jpg

Pic Credit
বন্ধু আমায় ট্রেনে যেতে বলেছিলো, তাই ট্রেনেই গিয়েছিলাম। সে এক মজার অভিজ্ঞতা। এক একজন এক একজনের বন্ধু বা বান্ধবীর জন্য সিট দখল করে রাখে ব্যাগ বই খাতা দিয়ে। চাইলেও বসার উপায় থাকে না। রাজনৈতিক ঘরানা অনুসারে বগীও ছিলো নির্ধারিত।

suttle train for CU.jpg
Pic Credit
যারা ভারসিটির ক্যাম্পাসে থাকে না তারা প্রতিদিন ট্রেনের ছাদের উপর,ট্রেনের ইঞ্জিনে যে যেখানে পারে উঠে ক্যাম্পাসে যায় আবার ক্লাশ শেষে ফিরে আসে। জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে এভা বেই প্রতিদিন যুদ্ধ করে যেতে হয়।

suttle train for CU-.jpg
Pic Credit
সারাদিন ক্যাম্পাসে সময় কাটিয়েছি,বিভিন্ন হলে ঘুরে ঘুরে দেখেছি। যারা হলে সিট পেতো না তারা বিভিন্ন মেসে থাকতো,যেগুলো পাহাড়ের ঢালে সন আর বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো হতো সেগুলো ও দেখেছিলাম। আমরা কতো কস্ট করে লেখাপড়া করেছি। আর এখন প্রাইভেট পড়া ছাড়া পাশ করা বা ভালো রেজাল্ট করতে পারা যায় সেটা তো একটি অবাস্তব কল্পনা।
প্রতিটি সাব্জেক্ট এর জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক দিতে হয়। মনে আছে আমাদের সময় অংক,ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র,পদার্থ ও রসায়ন বিষয় গুলো ০৩ থেকে ০৬ মাস করে পড়লেই হতো তাও যারা খুব ভালো রেজাল্ট এর চিন্তা ভাবনা করতো তারাই পড়তো।
আর এখন শুধু পাশ করার জন্যই সকল বিষয় প্রাইভেট পড়তেই হয়। যাই হোক যে কথা বলতে বসেছিলাম। আমার বন্ধু আর আমি কলেজ একসাথেই বসতাম,আমাদের ক্লাশ শেষ করে বিকেলে একসাথে আড্ডা না দিয়ে থাকতে পারতাম না। আরো কিছু বন্ধুরা মিলে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে ঝিরি ঝিরি বাতাসে বসে আড্ডা দিয়ে ছোলা মুড়ি পিয়াজু খেতেই হবে যেনো একটা গদবাঁধা রুটিন ছিলো। সন্ধ্যার পর যে যার বাসায় ফিরে যাওয়া হতো। তখন আমার বন্ধুর ভালোবাসার মানুষ হয়ে গিয়েছে তার বাবা ছিলেন আমাদের জেলা শহরের ম্যাজিস্ট্রেট। ভেবেছিলাম পরীক্ষা শেষে হয়তো তার ইতি টানতে হবে।
ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে সবাই আলাদা হয়ে যায়,এটাই নিয়ম। খুব কম ছাত্রই একসাথে থাকতে পারে বা একই ইনিস্টিটিউটে চান্স পায়,পড়তে পারে। সবার পথা চলা আলাদা হয়ে যায়। যেমনটা আমাদেরও হয়েছিলো।
আমি জয়েন করলাম বাংলাদেশ নৌ বাহিনীতে। চলে গেলাম খুলনাতে, সেখান থেকে কাপ্তাইএ। তারপর নেভাল শীপ ফ্রিগেট বা নৌ জা আবু বকর এ। অনেকদিন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ নেই। তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিলো না,ফেইস বুক ছিলো না। সে লেখা পড়ার পাঠ চুকিয়ে বিসিএস করে খাদ্য অধিদপ্তরে চাকুরীতে জয়েন করে। পরে শুনলাম তার সেই বান্ধবীকেই সে বিয়ে করেছে।
ফুড এ চাকুরী করে এই জেলা থেকে ঐ জেলায় বছর বছর বদলিতেই তার চাকু্রী জীবন কেটে যাচ্ছে। যার কোন জমি,বাড়ি,গাড়ি বা ফ্লাট কিছুই নেই।অফিসের গাড়ি কোথাও পেয়েছে কোথাও পায়নি। বাসে করেই তার অফিসে যাওয়া আসা। তার সহকরমীদের সম্পদের অভাব নেই। আর এই অপারগতার জন্যই স্ত্রী সন্তানদের কাছে সে একজন ব্যর্থ মানুষ। আসলেই কি ব্যর্থ? ঘুষ না খাওয়া টি তার জন্য একটি অভিশাপ? স্ত্রী সন্তানদের সাথে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে একদিন তাকে তার নিজের বাসা থেকেও বের হয়ে আসতে হয়েছে। আশ্রয় নিতে হয়েছে ছোট ভাই এর বাসায়। হাটুতে ব্যথা,হাই প্রেশার,ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত একজন মানুষ আজ পরবাসে।
একজন সৎ মানুষের কি এটাই প্রাপ্য ছিলো? স্ত্রী সন্তানদের কাছে কি ভালোবাসার চাইতে টাকার দামই বেশি? যে যত বেশি টাকা দিতে পারবে সে ই ততো ভালো স্বামী, ততো ভালো বাবা? হীরো বাবা'রা কি টাকার জনই হীরো হয়? সংসারের এই অপার্থিব সুখের জন্যই কি স্বামীরা বা বাবারা ঘুষ নামক মিস্টি জিনিস টা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে অপারগ?
আমার বাসার পাশেই বন্ধুর ছোট ভাই এর বাসা। একদিন সন্ধ্যার পর সে কল দিয়ে পার্কার কাছে আসতে বললো। হাটতে হাটতে বন্ধুর তার কস্টের কথা গুলো শুনলাম। বিয়ে নামক এই সুন্দর বন্ধনটা আসলেই কি সুন্দর রইলো? সারা জীবনের কস্ট গুলোকে বয়ে বেড়ানোর পর যখন একটু একটু করে সুখ এর ছোঁয়ায় জীবনটাকে উপভোগ করার সময় আসে তখনই শুরু হয় মানুষের কঠিন কস্টের সময়। কেউ বৃদ্ধা আশ্রম এ বা কেউ কেউ একা একা ঘরে শেষ সময়ের অপেক্ষায় প্রহর গুনে।
এর নাম পরিবার?
এটাই কি আমাদের জীবন?
এর নাম ই কি সুখ?

আখতার উজ জামান
ডি এইচ এম এস
তারিখঃ ১০/১১/২০২২ ইং
সময়ঃ১১-০০ রাত

Sort:  

মনে হচ্ছে ভুলক্রমে আপনি একই লেখা পাঁচবার পোস্ট করেছেন, একটু সংশোধন করে নিবেন।