জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো কাটিয়েছি ছোটবেলায়। স্কুলজীবনকে ঘিরে আছে হাজারো স্মৃতি আর হাজারো গল্প। স্কুল জীবনের স্মৃতিময় দিনগুলোর দিকে যখন ফিরে তাকাই তখন আবেগপ্রবন হয়ে পড়ি। ইচ্ছে করে আবার চলে যাই সেই সেই সুন্দর সময়টাতে, যে সময়টাতে ছিলোনা কোন চাওয়া আর পাওয়া। এখন আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে অতীতের সবচেয়ে মধুর স্মৃতি কী? চোখ বন্ধ করে আমি বলবো, “ স্কুল জিবন ”। এর চেয়ে সুন্দর মূহুর্ত কি হতে পারে? আমি বলবো, কখনোই না!
সময় চলে গেছে বহুদূর! কিন্তু আমার মনে হয় এই তো কিছুদিন আগে ছোট ছিলাম। সারাদিন শুরু এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম। ভাইয়েরা মিলে ঝগরা করতাম একটা খেলনা নিয়ে। আমার ভাই আমার থেকে দুই বছরের ছোট ছিলো। দুই ভাই মিলে একি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম । দেখা যেতো প্রতিদিন দুষ্টুমি করে স্কুল ড্রেস ময়লা করে বাসায় ফিরতাম, আর আম্মু আমাদেরকে বকা দিতো। শেষমেষ তো আম্মু আমাদের ভয় দেখাতে একটি ব্যাত তৈরি করে রেখেছিলো। তারপরও কে শোনে কার কথা , একটা না একটা সমস্যা নিয়ে বাসায় ফিরতাম দুই ভাই। স্কুলে একটু সময় পেলেই বন্ধুরা মিলে ছোটাছুটি শুরু করতাম। একবারতো দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে রিকশার নিচে পড়ে গিয়েছিলাম। তারপরও আমার দুষ্টুমি এক বিন্দুও কমেনি।
কিছুদিন পর প্রাইমারি স্কুল জীবন শেষ করে ভর্তি হই হাই-স্কুলে। প্রাইমারি পেরিয়ে হাইস্কুলে যেতে যেতে দু ভাইয়ের পথ বদলে গেলো। স্কুলের দূরত্বটা আমার বাসা থেকে ১০ কি.মি এর মতো দূরে ছিলা। তাই বাবা আমাকে প্রতিদিন দিয়ে আসতো। সবকিছুর সাথে আমি মানিয়ে নিতে পারছিলাম না, সবকিছুর সাথে ছিলাম আমি অপরিচিত। কিছুদিন পর আমার একটা বন্ধু হয় । সেও আমার গ্রামের ছিলো, কিন্তু তার সাথে আগে কখনও আমার পরিচয় ছিলোনা। তারপর থেকে আমরা দুজন একসাথে স্কুলে যাওয়া আসা থেকে শুরু করে সবসময় একসাথে থাকতাম। মাঝে মাঝে আমরা দু-জন মিলে হেটে হেটে স্কুলে যেতাম। এভাবে কেটে যায় আমার আরো কয়েকটি বছর।
স্কুল ও বন্ধুত্বের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন আছে, যা এড়িয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। বন্ধুত্ব টিকে থাকে এক অদৃশ্য বন্ধনে। কারন এখানে থাকেনা কোন স্বার্থ আর চাওয়া পাওয়া। এখানে সবাই খেলার সাথি, পড়ার সাথি - এটাই আমাদের পরিচয় শুধু। শত বন্ধুর মধ্যে আমার স্কুল জীবনে সবচাইতে ভালো বন্ধু ছিলো ইমন। আমার কোন কথায় মানা করেনি সে । সবার জীবনেই এরোকম কিছু বন্ধু থাকে যে আপন ভাইয়ের থেকও বেশি দামি! আমার স্কুল জীবনটা কেটেছে বাবা-মায়ের কঠিন শাসনের মধ্য দিয়ে। আমার বাবা-মা দু-জনই শিক্ষক, তাই তারা চাইতো তার ছেলে ভালো কিছু করুক। আসলে সব বাবা-মাই চায় তার সন্তান মানুষের মত মানুষ হয়ে তাদের নাম উজ্জ্বল করুক। আমার বাবা-মাও তার ব্যতিক্রম ছিলোনা। স্কুল জীবনে কখনো তাদের কথার অবাদ্য হয়নি আমি।
সময় বহমান। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
স্কুল জীবনের গন্ডি পেড়িয়ে আজ আমি পদার্পন করেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। কিছুদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনও হয়তো শেষ হয়ে যাবে। জীবনের সবাচাইতে ভালো সময়গুলো চলে যাচ্ছে আপন গতিতে। একটা সময় খুব করে চাইতাম স্কুল জীবনটা শেষ হয়ে যাক, শুরু হোক বাকি জীবন। কিন্তু আজ খুব করে চাই স্কুল জীবনের সময়টাতে ফিরে যেতে। স্মৃতির পৃষ্ঠা ভাড়ি করে একে একে জীবনের ভালো সময়গুলো অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, যা আর কখনো ফিরবার নয়!
Congratulations @fa-him! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz: