নিজেকে নিজে ভালোবেসে ভালো রাখা

in BDCommunity3 years ago

নিজেকে নিজে ভালোবেসে ভালো রাখা

woman-570883_960_720.jpg

পা দুইটা দেয়ালের গায়ে ঠেস দিয়ে বাকিটা শরীর বিছানায় ,যখন মাথার ভেতরটা এলোমেলো লাগে তখন এইভাবেই শুয়ে থাকি। কিছু একটা নিয়ে ভাবছি কিন্তু কি সেটা আমার জানা নাই। ইদানীং এমন একটা অবস্থা আমার....যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমি কেমন আছি, কি করি বা কি করছি... আমার উত্তর টা হয় অনেকটা এমন যে " ঐযে সেদিন যেমন ছিলাম তেমনটাই আছি, আর আমি ভাই একদম বেকার একটা মানুষ, ঘরে সারাদিন বসে থাকি, কিছুই করি না, আকাশ দেখি, বাতাস খাই আর ঝিমাই। " হ্যাঁ, এটাই বলি উত্তরে। আর কি বলবো..... বলার কিছু থাকলে তো। তার মধ্যে একা আমি, কথা বলার মানুষ নাই। এইসব মনে ধরিও না যে কথা বলতে পারছি না, কেউ নাই, কি হবে। এত ভেবে কাজ নাই....হবেই একটা । থেমে তো আর থাকবে না কিছু। বাঁকের ভাইয়ের একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমার যে "কোনো জিনিসই বুকের মধ্যে পুষতে নাই। মনটারে করতে হবে পানির মতো। হাজার দাগ দিলেও দাগ পড়বে না, পানিতে দাগ পড়ে না।"

আচ্ছা এইযে একা থাকার যে সুবিধা বা একা থাকার যে ব্যাপারটা....এটা কত ভালো না? আমার কাছে তো দারুন লাগে। এই যেমন ধরো....সকাল বেলায় জানালার সামনে বসে চুপচাপ কফিতে চুমুক দিবে, হুট করে এসে কারও বিরক্ত করার ঝামেলা নাই, দুপুরের নাওয়া খাওয়া সেরে ভাতঘুম দিবে একটা মনের মত, কোনো এক বিকেলে জানালার পাশের সিটটায় বসে গুনগুন করে সুর তুলবে...অন্য কারোর সেখানে দখলদারি থাকবে না,যখন ইচ্ছা হবে তখন কাধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়া যাবে, লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়া যাবে, চুপচাপ একটা কোনায় বসে লিখালিখি করা যাবে, সব রঙ তুলি মেঝেতে ছড়িয়ে নিয়ে ছবি আঁকা যাবে....কেউ এসে বকবে না, এলোমেলো অগোছালো ঘরে বসে ল্যাপটপে নাটক দেখবো... কেউ এসে কানের কাছে ঘেনঘেন করবে না। যখন তখন ফ্রীজ খুলে আইসক্রিম নিয়ে মেঝেতে বসে পা ছড়িয়ে ইচ্ছেমত খাবো.... কেউ শাসন করতে আসবে না। নিজের সাথে বনভোজনে যাবো, অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করার ঝামেলা থাকবে না। যখন কিছুই ভালো লাগবে না তখন রান্নাঘরের তাকের সব মশলা সামনে সাজিয়ে রেসিপির বই খুলে যা ইচ্ছা বানাবো, কাউকে কৈফিয়ত দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

এই একা ভালো থাকার পেছনে অনেক কারণ আছে। এই একাকিত্ব ভালো লাগার পেছনে অনেক গল্প জমে আছে। একা মানুষগুলো কখনও নিজেকে অন্যের সাথে শেয়ার করে না। কারণ দিনশেষে ওই একাই... আমিই আমার। তাই এতসব নাটকের মধ্যে নিজের চরিত্র খোঁজার চাইতে একাই ভালো। শুধু শুধু মানুষের কাছে ঠকে গিয়ে অনুভূতি প্রকাশের ইচ্ছেটা মরে যাওয়া, সব এক্সপেক্টেশন হারিয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নেয়া, মানুষের কোনো সাড়া নেই তাও বেহায়ার মত পড়ে থাকা, একাই দিয়ে যাওয়া কিন্তু ওপর পাশ থেকে কিছুই না পাওয়া, ভেতর থেকে ভেঙেচুরে একদম গুঁড়িয়ে যাওয়া, আস্তে আস্তে সবকিছুর প্রতি ঘৃণা জন্মে যাওয়া, নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যাওয়া, মানসিক আঘাত পেতে পেতে অনুভূতিশূন্য, সাদামাটা একটা মানুষ হয়ে যাওয়া, কান্নার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা যে কাদতে না পারা সেটা অনুভব করা, ওই এক মায়ায় আটকে থেকে মিথ্যা সম্পর্কে অভিনয় করে যাওয়া, ধীরে ধীরে ভেতরে মানসিক অসুখ বাঁধিয়ে মরার আগেই মরে যাওয়া.......এইসব অনর্থক না? কি দরকার? এর চেয়ে একাই ভালো।

আমি বুঝি না আজকালকার মানুষদের সমস্যাটা কোথায়। ওরা কি শান্তি কি বোঝে না? বয়স আঠারো উনিশ না হতেই প্রেম করার জন্য মরিয়া হয়ে যায়। আর এই অ্যাডভান্স যুগে তো ছোট্ট ছোট্ট পোলাপান দেখি পার্কে হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়! বলি, প্রেমটা এখনই কেনো করা লাগবে? নিজের ব্যাপারে দুই তিনটা লাইন বলতে দিলে তো হাঁ করে তাকায়া থাকবা। আবার চাও প্রেম করতে! প্রেম করার জন্য, আরেকটা মানুষের সাথে থাকার জন্য তো পুরা জীবনই পড়ে আছে এখনো।

আগে নিজের সাথে থাকো, নিজেকে একটু ভালোবাসো, নিজের প্রেমে পড় আগে, নিজেকে সময় দাও, নিজেকে প্রস্তুত করে যাতে সামনে যে ভালোবাসাটা আসবে তোমার কাছে সারাজীবনের জন্য সেটাকে যাতে খুব করে আগলে রাখতে পারো। আর তার আগে.....কি করবা? সকাল বেলা ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে কোচিং এ যাবা পড়তে, পড়ালেখা করতে করতে ঐযে মাথা ভারী বিজ্ঞানিগুলা ওদের দুইটা গালি দিবা, ক্লাস ফাঁকি দিবা, সারাদিন ঘুরে ফিরে কাটায় দিয়ে সারারাত জেগে এসাইনমেন্ট আর বাড়ির কাজ করবা, ডিম
ভাজি - ভর্তা এইসব রেখে অসময়ে মায়ের কাছে মাংস খাওয়ার জন্য বায়না ধরবা, সুন্দর সুন্দর শাড়ী, চুড়ি কিনে দেয়ার জন্য বাবার কাছে গিয়ে হাত পাতবা, রাত এগারোটায় তেলের বোতল নিয়ে মায়ের সামনে বসে পড়বা মাথায় যাতে তেল দিয়ে দেয়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবা, পকেটে জমানো টাকা খরচ করতে ইচ্ছে হলে বড় একটা পিজ্জা অর্ডার করে ঘরে বসে পায়ের উপর পা তুলে খাও, সারারাত জেগে থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে ঘুমাতে যাবা নবাবের মত, রুটিন ছাড়া চলবা, রাস্তায় রাস্তায় হাটবা, মানুষের সাথে মিশবা, মানুষের জীবনের গল্প শুনবা, যখন যেখানে ইচ্ছা হয় ঘুরতে চলে যাবা, মানুষ যা করে তার উল্টোটা করবা, একা একা কথা বলবা, নিজের সাথে নিজে গল্প করতে করতে হাসবা, কেউ যদি পাগলও বলে গায়ে মাখার দরকার নাই কারন তোমার মনটা তো হবে পানির মতো, তাতে কিচ্ছু পড়বে না.....আরো কত কাজ তোমার। এইগুলা করেই তো সময় পাওয়ার কথা না! নিজেকে ভালো না বেসে আরেকজনকে ভালোবাসতে যায় বোকারা....

কিন্তু কিছু সময় এমন আসে যে আমরা তখন আমাদের ভালোবাসতে পারি না। তখন আমাদের একটা মানুষের দরকার পরে। যে আপনার পুরোটা সামলে নিতে পারে, আপনাকে আগলে রাখতে পারে, যার কাছে নিজেকে ব্যাখ্যা করার মতো উটকো ঝামেলাটা পোহানো লাগবে না, যাকে বুঝিয়ে বলা লাগবে যে আমাদের মন খারাপ, যে নিজেই বুঝতে পারবে পুরোটা। এমন মানুষ হয়? হয় তবে খুব কম। কিছু এমন বন্ধু থাকবে যারা তোমার সাথে তোমার কান্নায় ভাসিয়ে দেয়ার সময়টায় তোমার পাশে কোনো প্রশ্ন করা ছাড়া চুপচাপ বসে থাকবে, তোমাকে ইচ্ছামত কান্না করতে দিবে, তারা তোমার বলা ছাড়াই কষ্ট টা বুঝতে পারবে, মুনাজাতে তোমার জন্য দোয়া করবে, তোমার সব ভালো খারাপ মেশানো তুমি টাকে ওরা খুব করে সামলে নিতে জানে। সবার এমন থাকে না আর যাদের থাকে.....রত্ন হাতছাড়া করিস না, চলে গেলে আর পাবি না। তাদের সাথে যোগাযোগ না থাকুক, কথা না হোক কিন্তু তারা মনে রাখবে, নিজেদের দোয়া'তে তোমাকে শামিল করবে। এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে? তুমি তার কাছে কতটা ইম্পর্ট্যানট হলে সে তোমাকে দোয়ায় রাখবে, একটু ভেবো। ভাগ্য লাগে ভাগ্য এমন মানুষ পেতে।

এই কথাগুলা ভাবলে মনে হয় না কত কিছু বুঝি আমি! কিন্তু আমি এখনও আমার ফ্যামিলি, বন্ধুদের কাছে অবুঝ একটা বাচ্চা। কারণ আমি ওইভাবেই থাকি। আমি জানি যে এই একটা জীবনে মানুষের সবকিছু জেনে ফেলাটা ভীষণ খারাপ। এতে বেচেঁ থাকার ইচ্ছে ছোটো হতে থাকে। মানুষ যখন তার সব চাওয়া পাওয়ার আর অবস্থানের হিসেব মিলাতে বসে যায় তখন সে বুঝতে পারে কিছুই তার এক্সপেক্টেশন মত হবে না। তারপর আস্তে আস্তে তার নতুন করে কিছু চাওয়ার ইচ্ছাটাও মরে যাবে। অবশ্য সে নিজেই নিজের হাতে মেরে ফেলে ইচ্ছেগুলো। কিন্তু আমার এমন কোনো ইচ্ছা নাই। আমি আরো অনেক অনেক বছর বাচতে চাই, আমার ইচ্ছেগুলো পূরণ হওয়া অবধি। একা থাকলে যে কষ্ট পেতে হয় না ব্যাপারটা এমন না। মানুষের মাঝেই তো থাকি আমরা, কষ্ট পেতে হয়। মানসিক আঘাত পেতে হয়। এই মানসিক আঘাত গুলো না কেমন জানি, যেদিন সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাই আমরা, অনেকদিন পর ঠিক একইরকম কষ্টটা ভেতরে কাজ করতে শুরু করে হঠাৎ করেই। যাদের নিজেদের উপর কন্ট্রোল থাকে ভালো তারা কাটিয়ে উঠতে পারে। আর যাদের থাকে না...তারা? মানসিক অসুখে ভোগে রোজ। কিন্তু চাইলে এর একটা সমাধান করাই যায়। ভালো একটা মনের ডাক্তার দেখলেই হয় তবে এটাকে অনেকে সহজভাবে নিতে পারে না, ভাবে মানুষ তাকে পাগল বলবে। পাগল কি জানে যে সে পাগল? তাহলে তুমি যদি ভাবতে পারো যে মানুষ তোমাকে নিয়ে কি ভাববে তার মানে তুমি পাগল না, শুধু একটু মনটা অসুস্থ। চাইলেই সারিয়ে তোলা যাবে। মানসিক অসুখের জন্য ডাক্তার দেখানোটা খুব নরমাল একটা ব্যাপার।

এখন যদি এটা কারো কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় তাহলে যেভাবে ভালো হয় সেভাবেই করতে পারে। আমি বলবো যেটা সবার আগে দরকার সেটা হলো নিজেকে ভালোবাসা। নিজের ভালোর জন্য না বলতে শেখা, সবকিছুর উপরে গিয়ে নিজেকে প্রায়োরিটি দেয়া, নিজের পছন্দের কাজগুলোতে নিজেকে ব্যাস্ত রাখা এই সবকিছুই নিজেকে ভালোবাসার মধ্যেই হিসেব করা হয়। আর তার পাশাপাশি যত বদভ্যাস আছে সেগুলো ছেড়ে দেয়া, ভালো খাবার খাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, ডায়েরি লিখা....অনেক উপায় আছে মনকে ভালো রাখার, সুস্থ রাখার। এইভাবে পারলে একাই অনেক ভালো থাকা যায় আসলে। নিজেকে কখনো ঘৃণা না করাটাও একটা বড়ো বিষয় এক্ষেত্রে। অন্তত নিজেকে ভালোবাসতে পারলে কোনো বড় মনের রোগে ভোগার ঝামেলা থাকবে না আমি মনে করি।

তো সবশেষে বলতে ইচ্ছে করছে যে যদি একা নিজেকে ভালোবেসে থাকতে পারো তাহলে তো কথাই নেই আর মানুষের সাথে মিশে চলতে পারলে সেটাও ভালো। হাসতে থাকো, নিজেকে ভালোবাসতে থাকো, মন ভরে চারপাশটা উপভোগ করতে থাকো। জীবনটা তো ছোটো, যতটা পারো ইচ্ছে জমাও আর পূরণ করতে থাকো।

Image score