মাহে রমজানে যা করা প্রয়োজন

in BDCommunity3 years ago
Authored by @hanif

রমাদান মাস আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামাত। সওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমাত,বরকত ও নাজাতের মাস-রমাদান মাস। আলকুরআনে এসেছে,‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে [আল-বাকারাহ : ১৮৫]।
এটি বিজয়ের মাস। এমাসে আমাদের প্রিয় নবী বদর যুদ্ধ করে কুফর শক্তিকে পরাজিত করেছিলেন। এ মাসেই মক্কা বিজয় করেছিলেন। উমর বিন খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসূলের সাথে রমাদান মাসে দুটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি-বদর ও মক্কা বিজয়। এ উভয় যুদ্ধে আমরা পানাহার করেছি’’ [সুনান তিরমিযি :৭১৪]। হাদীসে এসেছে, ‘‘রমাদান-বরকতময় মাস-তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে এর কল্যাণ হতে বনচিত হল, সে বনঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)। [সুনান তিরমিযি :৬৮৩]

এত গুরুত্বপূর্ণ মাসটিতে আমাদের করণীয় কী রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১.সিয়াম পালন করা
ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর এ সিয়াম পালন করা হয় এ মাসেই। এ মাসটি যে পাবে তার জন্য সিয়াম পালন করা ফরয।

২. ইখলাছের সাথে ইবাদাত করা
একজন ঈমানদারের প্রতিটি ইবাদাত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য হতে হবে।

৩. সাহরী খাওয়া
সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহরী খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘‘তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে বরকত রয়েছে’’ [সহীহ বুখারী-১৯২৩ ]

৪. সালাতুত তারাবীহ পড়া
সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম কাজ। তারাবীহ এর সালাত বিতর সহ ২৩ রাকাআত, ২১ রাকাআত, ১৩ রাকাআত, অথবা ১১ রাকাআত পড়া যাবে। তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে জামায়াতের সাথে তা আদায় করেছেন।

৫. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশী বেশী তেলাওয়াত করা।
images.jpg

৬. কল্যাণকর কাজ বেশী বেশী করা
এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশী উত্তম । সেজন্য যথাসম্ভব বেশী বেশী ভাল কাজ করতে হবে।

৭ .সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া
রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশী ফাজিলাত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে।
092104namaj_kk.jpg

৮. বেশী বেশী দান-সদকাহ করা
এ মাসে বেশী বেশী দান-সদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশী বেশী দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম।

৯.উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা
রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকী মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে।

১০.সহীহভাবে কুরআন শেখা ও অপরকে শেখানো
কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন [সূরা আলাক :১]। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শিখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি ৯৮৯০] রমাদান মাস কুরআন শেখা ও শেখানোর উত্তম সময়। সেজন্য নিজে সহীহভাবে কুরআন শিখতে হবে। যারা আমরা সহীহভাবে কুরআন পড়তে জানি, তাদের দায়িত্ব হলো অপরকে শেখানো।

১১. ইতিকাফ করা
ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে একাকী-কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তার সাহাবীগণ ইতিকাফ করতেন।

১২. সামর্থ্য থাকলে ওমরা পালন করা
এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সাওয়াব হয় ।

১৩. লাইলাতুল কদর তালাশ করা
রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আলকুরআনের ভাষায়: ‘‘কদরের একরাতের ইবাদাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’। [সূরা কদর : ৪] হাদীসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [ সহীহ বুখারী ৩৫] এ রাত পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়।
1466937775.gif

১৪. বেশী বেশী দোয়া ও কান্নাকাটি করা
দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশী বেশী দোয়া করা ও আল্লাহর নিকট বেশী বেশী কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’।

১৫. ইফতার করা ও ইফতার করানো
সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা এবং অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’।

১৬.তাওবাহ করা
তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। কেননা তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আলকুরআনে এসেছে, হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’।

১৭. দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা
রমাদান মাস হচ্ছে দীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ । এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশী বেশী করা।

১৮. তাকওয়া অর্জন করা
তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তার আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জনকরার এক বিশেষ মৌসুম।

১৯.ফিতরাহ দেয়া
এ মাসের সিয়ামের ত্রুটি- বিচ্যুতির পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া ।

এ মাস হচ্ছে প্রশিক্ষনের মাস । এ এক মাসের প্রশিক্ষন নিয়ে মুমিন মুসলমানদের সারা বছর ঈমানের আলোকে জীবন চালাতে হবে। তাই প্রশিক্ষন যার যত বেশি পরিশুদ্ধ হবে তার জীবন ততই কুরআনের আলোয় আলোকিত হবে। তাই আসুন রমজানকে কাজে লাগিয়ে কুরআনের আলোকে জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Sort:  

Source of plagiarism 1
Source of plagiarism 2

Plagiarism is the copying & pasting of others' work without giving credit to the original author or artist. Plagiarized posts are considered fraud and violate the intellectual property rights of the original creator.

Fraud is discouraged by the community and may result in the account being Blacklisted.