আমাদের পরিচয়ের কত বছর হলো? ইলা আমাকে প্রশ্ন করলো।
গুনে রাখি নাকি? বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিলাম। মোবাইলে গেম খেলছি তার মধ্যে যন্ত্রনা যতসব মনেমনে বলি।
মন খারাপ করে ইলা বললো, গুনে রাখতে হবে কেনো? মানুষ মনে রাখে না?
আমি মোবাইলটা পকেটে রাখতে রাখতে বললাম, কেন? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
ইলা বললো, তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমি কপট রাগ নিয়ে বললাম, তুমি তো দেখি ভারি নাছোড়বান্দা। কত আর হবে? এই তো দু-তিন বছর।
ইলা বললো, উহু! ঠিক করে বলো। দুই না তিন?
একটু চিন্তা করে বলি, কতো আর হবে দুই বছর।
আসলে উত্তর আমার শুরুতেই জানা। ইলার এই প্রশ্নের সম্মুখীন আমি আজ প্রথমবারের মতো হই নি। এই নিয়ে তিন-চার বার তো হবেই। কিন্তু প্রতিবারই আমি ইচ্ছা করে ভুল উত্তর দেই আর ইলা রেগে যায় কখনো কখনো তা কান্নাকাটি পর্যন্ত গড়ায়। রাগ করলে ইলাকে খুব মিষ্টি লাগে। তবে কান্নাকাটির পর্যায়টা একটু বেশি হয়ে যায়। তবে আজ ইলা রাগ করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো।
চলো উঠো হলে যাবো, বলে ইলা দাড়িয়ে যায়।
এটাও তার প্রতিদিনকার একটা প্রতিক্রিয়া। যদিও আমি খুব একটা পাত্তা দেই না। আমি ও তার সাথে হাটতে থাকি। এমন ভাব করি যে কিছু হয় নি। হাটতে হাটতে ইলার হলের কাছে চলে আসি। এই সময়টুকু ইলা কোনো কথা বলে না। শুধু হলের সামনে এসে ইলা বলে
থাকো,গেলাম।
আমিও উত্তর দেই, ঠিক আছে যাও। আমার উত্তর পাওয়া মাত্র ইলা হন্ হন্ করে চলে যায়।
আমিও হাটতে থাকি তবে এর মধ্যেই একটা শূন্যতা অনুভব করতে থাকি। দোকানের বেঞ্চে বসে মোবাইলে গেম খেলা শুরু করি। কিন্তু ভালো লাগে না। মেজাজ খারাপ করে মোবাইলটা পকেটে রেখে হাটতে থাকি। কিছুক্ষণ পর নিজেকে ইলার হলের সামনে আবিষ্কার করি। কিছু না ভেবে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ইলার নাম্বারে কল দেই। রিং হয় কিন্তু ধরে না। আবার কল দেই এবার রিসিভ করে। আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই ইলা বলে
কি হয়েছে? কল দিয়েছো কেনো?
আমি উত্তর না দিয়ে বলি, বাইরে আসো?
না। এখন নামতে পারবো না।
তুমি না নামলে আমি যাবো না।
তাহলে যেও না। দাড়িয়েই থাকো। আমি নামবো না।
আমি কিন্তু তোমার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করবো না নামলে।
আচ্ছা, দাড়াও। আসতেছি।
আমি জানতাম আমার কৌশল অব্যর্থ। কিছুক্ষণ পর ইলা নেমে আমার সামনে দাড়িয়ে বলে
বলো, কি বলবে?
আমি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।
ইলা আবার বলে উঠে, কি হলো বলো না। চুপ করে আছো কেনো?
চলো একটু হাটি বলেই ওর হাতটা ধরে হাটতে থাকি। ইলা বাধা দেয় না। আমি বলতে থাকি
আমাদের পরিচয় হয়েছে আজ চার বছর দুই মাস দশ দিন।
ইলা মুচকি হাসে। সে মুখ ফুলিয়ে প্রশ্ন করে
তুমি এমন কেনো?
আমি এমনই বলে ইলা কে আরেকটু কাছে টেনে নেই।
মনে মনে ভাবতে থাকি পাগলি টা না থাকলে যে কি হতো।