কাঁটামাড়ি হলো জমির ধান ঘরে তোলা। এটা একটা বিশাল প্রক্রিয়া। আমাদের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষক। এখানের অধিকাংশ জমি কৃষি জমি। বছরে দুইবার-তিনবার তিনবার তারা চাষাবাদ করে থাকে। এর মধ্যে অধিকাংশই ধান চাষ করে থাকে। এ ধান চাষ করা খুবই কষ্টকর এবং অনেক বড় একটি প্রক্রিয়া। আবার ধান চাষ করার পরেই শেষ নয় ,এই ধানটাকে ঘরে তোলায় আবারো অনেক সময় লাগে। আবার ঘরে তোলার পর এগুলোকে ধান থেকে চাল বানাতেও কিছু নিয়ম কারণ রয়েছে। সবদিক মিলিয়ে আমাদের উত্তরাঞ্চলের মানুষ এটাকে "কাটামাড়ি" বলে থাকে। অনেকে আবার "মাড়াকাটি" বলে। আমি এত বছর ধরে মাড়াকাটি বলতাম, এতদিন পর আমি সঠিক টা জানতে পেরেছি অর্থাৎ কাঁটামারী হবে এটার সঠিক নাম। প্রায় প্রতি বছর দুইবার আমরা কাঁটামারী করে থাকি। ্ এই কাঁটামারী শেষে আমরা যেসব ধান পাই,সেগুলো থেকে চাল বানিয়ে সেই চাল আমরা খেয়ে থাকি।
যারা শহরে থাকে কিংবা চাকরি করে তারা নিজেরা চাষাবাদ করতে পারে না। তারা তাদের জমি অন্যদেরকে চাষ করতে দেয় এবং সেই থেকে অংশ নিয়ে থাকে। আমার পরিবারও শহরে থাকে তাই সকল জমি নিজেরা চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। তবে এবার আমরা একটি জমি নিজেরা চাষাবাদ করেছিলাম। কিন্তু কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। এই চাষাবাদের সময় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে পানি দেয়া,ওষুধ দেয়া, সার দেয়া,বিচ বিছানো নানান কিছু। সবদিক মিলিয়ে সব কাজ শেষ করে যখন ধান হয়ে যায়, তখন ধান কাটতে হয়। অনেকে মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করে থাকে। তবে আমাদের গ্রামে কৃষকরা নিজেরাই ধান মাড়াই করে থাকে। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর সবকিছুর দাম অত্যাধিক বেশি ছিল। হয়তোবা বাংলাদেশ অন্যান্য জেলার তুলনায় আমাদের কুড়িগ্রাম জেলায় এগুলো একটু খরচ কম। তবে আমাদের কুড়িগ্রামের মানুষের জন্য এগুলো অনেক বেশি। কারণ আমাদের ৮১% লোক দরিদ্র সীমারেখায় বসবাস করে।
এই ধান মাড়াই থেকেই কাজ শুরু হয় আমাদের। পুরুষরা তাদের নিজস্ব কাজ করে, আর মহিলারা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় মহিলা সংকট ছিল। তাই আমাদেরই এই কাজগুলো করতে হয়েছিল। এখানে ধান মাড়াই করার সময় খড় গুলো আলাদা করতে হয়।
ধানগুলো খড় থেকে আলাদা করার পর সে গুলোকে রোদে শুকাতে হয়। তবে আমরা যখন ধান মাড়াই করেছিলাম তখন রোদের দেখা পাওয়া যায়নি। প্রায় তিন দিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে পুকুর জমি পদ্মায় পানি জমে গিয়েছিল। এ জন্য কৃষকদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে অবশেষে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমরা রোদের দেখা পাই। এবং দুই দিনের মধ্যে আমাদের ধান গুলো শুকিয়ে ফেলে। এই ধানগুলো দুই দিন রোদে শুকাতে হয়, এরপর এগুলো বস্তায় করে রাখলেও তিন মাস পরে পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে যদি রোদে শুকানো না হয় ধানগুলো সেখানেই গাছ হয়ে যায়। যেটা কখনো প্রত্যাশা করা হয় না। যার ফলে রোদ না উঠলেও, আমরা ফ্যানের তলে বাতাস করে, বারবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নড়াচড়া করেছিলাম ধানগুলো। এ সময় মানুষের ঘরে শুধু ধান আর ধান। শুধুমাত্র নিজের শোয়ার জায়গা টা বাদে চারিদিকে ধান।
আবার রোদে শুকানোর জায়গায় সংকট। কারণ সবার ঘরে ঘরে ধান মানুষ কিভাবে এগুলো শুকাবে। আমাদের যৌথ পরিবার আমাদের আঙ্গিনা টা মোটামুটি,তবে সকলে একদিনে ধান রোদে দিতে পারেনা। যাইহোক ভাগ ভাগ করে আমরা ধান শুকাতে পেরেছিলাম।
এটা আমাদের নরপশু বিদ্যালয়ের মাঠের দুই দিকের দৃশ্য। একদিকে খড় অন্যদিকে ধান। কিছু বলার নেই কারণ দরিদ্রদের নিজস্ব জায়গা থাকে না ধান শুকানোর। বৃষ্টির কারণে মানুষের যা জায়গা ছিল সেগুলো একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই মানুষ যেখানে জায়গা বার ছিল সেখানেই শুকাতে দিয়েছিলো।
এরপর আমরা সেই ধান থেকে চাল বানাবো জন্য সে গুলোকে সিদ্ধ করেছিলাম।
সিদ্ধ করার পর এই ধানগুলো আবার কড়া রোদে দুইদিন শুকাতে হয়। নানান প্রতিকূলতার পরেও আমরা সেটাও সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিলাম। এরপর সে গুলোকে ধান ভাঙ্গা মেশিন এর মাধ্যমে চাল বানানোর পরে আমি আমার শহরের বাসায় চলে আসি। আশা করি এই জাল দিয়ে আমাদের আগামী ছয় মাস খুবই ভালো ভাবে চলবে। এই ধান দিয়ে যে শুধু চাল হয় তা নয়। এই ধান দিয়েই চিড়া ,মুড়ী ,আটা প্রভৃতি তৈরি করা যায়। আমরা সেগুলোও করেছিলাম। আমার আম্মু অনেক সৌখিন এবং ভালো রান্না করতে পারে। ধরনের রান্না উপকরণ আমরা নিজেরাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি।
সবদিক মিলিয়ে এসব কাজ করতে আমাদের সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় দিন লাগার কথা ছিল। কিন্তু রোদের সংকট,জায়গার সংকট প্রভৃতি প্রতিকূলতার জন্য আমাদের 12 দিন সময় চলে যায়। এসময় আমি গ্রামে গিয়েছিলাম, আমার গ্রামে নেটওয়ার্ক পায়না, যার ফলে আমি অনলাইনে বেশি থাকতে পারেনি। পাশাপাশি এসব কাজ করার জন্য মহিলা পাওয়া যাচ্ছিল না। আর পুরুষরা তো কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এমতাবস্তায় আমার আম্মু নিজেই সব কাজ করতেছিল। যার ফলে আমি তাকে সাহায্য না করে পারতেছিলাম না। আমার আব্বু একটু বয়স্ক তিনি এগুলো করতে পারেন না, তবুও তিনি চেষ্টা করেছিলেন। সত্যি বলতে আমিও অনেক কাজ করেছিলাম। আমার মনে হয় না আমি এর আগে এত কাজ কখনো করেছি। আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে আমরা সব কাজ শেষ করে বাসায় পৌঁছাতে পেরেছি। কৃষকরা আসলে অনেক কষ্ট করে। কৃষকদের কষ্টের মূল্য তারা পায় না। হয়তোবা আমরা তাদের কষ্টের মূল্য দিতে পারব না তবে আমাদের উচিত কৃষকদের সম্মান করা। যে করে ,সেই বুঝে কৃষিকাজ কত কঠিন।
Congratulations @minhaz007! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 44000 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!