বৃষ্টির পানিও যে রেখা ধরে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে তা লক্ষ করছিলাম ঝাপসা চশমার আড়াল থেকে।অনেকগুলো লাইন একসাথে, এমন যে অনেকগুলো রেললাইন পাশাপাশি চলে যাচ্ছে।দুই নাম্বার পাহাড়ের গায়ে একটা টং দোকান অবশ্য ছিলো, পাহাড়ি কলা মিষ্টি হয় প্রমান মিলেছে সেখানেই! বাপরে, আবার এনার্জি ড্রিংকস ও ছিলো! সাথে সোনার পাতা (গোল্ডলিফ)। মনে হচ্ছিলো গতো শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে দৌড়ে আসছি, এমন ক্লান্তি শরীরে!
সামনেই ঝরনা, নাম ধূপপানির ঝরনা। কল কল শব্দের আওয়াজে মুখরিত পরিবেশ, সাথে বৃষ্টির আদরে নরম হয়ে আছে মাটি; বেজায় পিচ্ছিল!আগাতে আগাতে শেষ খাঁড়া ঢাল; প্রায় বিশ ফুট!দাঁড়িয়ে ছিলাম, ভয় ঢুকে গিয়েছিলো যে, আর পারবো নাহ!নামনাজানা লোকটি বললো, "আরে পারবেন, এতোদূর যেহেতু এসেছেন।"
খুব ঠান্ডা পানি, এতো ঠান্ডা যে শরীরের মাঝে ঢুকে যাচ্ছে, ফ্রিজের পানির মতন অবশ লাগছে নাহ, শরীর জেগে জেগে উঠছিলো, সাথে প্রানশক্তিও। অনেক উঁচু থেকে পানি পড়ার ধরুন, বিভশক্তি গতিশক্তিতে, এর পর তা স্থীর বিদ্যুত শক্তিতে রুপান্তরিত !বিদ্যুৎ যে এতো মিহি আমের রসের মতন ঘন আর মিষ্টি হতে পারে! আহা! ওরগাজমিক আনন্দ প্রত্যেকটা কোষে!!
ফিরছিলাম, নামার পথটা কঠিন; বেজায় কঠিন! কখন যাত্রা শেষ হবে, কখন নৌকায় ফিরবো এর মাঝেই আবার পায়ে জোঁক ধরেছিলো দুইবার, রক্তখেকো জোঁক!এরা তাদের বৈশিষ্ট্যসুলভই আচরণ করছিলো অন্তত মানুষের মতন নয় জোঁক না হয়েও রক্ত খায়!
সামনের ঝুম চাষের জন্য খাড়া ঢালু জমি! একটা সরু রাস্তা, খুবই সরু; যা একজোড়া পা ধারন করতে পারে শুধু! পুরো রাস্তা বাচ্চাদের স্লাইডের মতন পিচ্ছিল।মনে হচ্ছিলো শেষ বুঝি এখানেই! লাশ কি খুজে পাওয়া যাবে! আমার মা টা, আমার বাবা আর আমার বুড়ি(বোন)!কি হবে!আরো অনেক সময় কাটাতে চেয়েছিলাম যে তাদের সাথে!এমন লাগছে ক্যানো যে দম বন্ধ হয়ে আসবে?
নৌকায় ফিরে গোসল, নদীর পানি দিয়েই। বন্ধুদের সাথে কথা বলবার মানুসিক অবস্থা নেই। মাকে ফোন দিলাম
-মামুনি
-হুম
আব্বু, তোমাকে রিচ করতে পারছিলাম নাহ, কতো ভিতরে গিয়েছো!যে নেটওয়ার্ক নেই!
-আমি ঠিক আছি আম্মু, ফিরছি আমি বাসায়।
তীব্র ঘুম পাচ্ছিলো, মাত্র আমার জন্ম হলো এমন! তীব্র ক্লান্তি সাথে বেঁচে আছি এই ভেবে আনন্দ! কখন যে নৌকার পাটাতনে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম উঠে দেখি, চোখের নিচে চোখের পানির লবনে শক্ত হয়ে আছে গালের বাঁ অংশ।আমার দ্বিতীয় জন্ম, জন্ম নেবার পর মায়ের সাথে কথা হয় নি! হবেই বা কি করে এই মায়ের সাথে কথা বলার ভাষা ভিন্ন!তবুও কি সে আমার আকুতি টের পাচ্ছে! আমি জানি নাহ, আমার ভয় হচ্ছে! মহাকাল আমাকে গ্রাস করছে, আমি ডুবে যাচ্চি, তলিয়ে যাচ্ছি কিন্তু নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে নাহ!
বন্ধুরা ডাকছিলো এই ওঠ! আর কতো ঘুমাবি জলদি ব্যাগ গুছিয়ে নে বাস ধরতে হবে যে।মামা, বাসের নাম শুনবি, ডলফিন! হা হা হা…
তারপর বছর দুয়েক হয়ে গেছে!ইদানীং আমার মধ্যে খালিখালি ভাব হয়! আমি আমার দ্বিতীয় মাকে মনে করে করে গোমড়া হয়ে থাকি! আমার প্রথম মা বুঝলেন হয়তো ব্যাপারটা!
-আব্বু, চড়ুইদের আমি নিয়মিত ভাত দেই জানো তো?
-জানি আম্মু
-ক্যানো দেই তা জানো?
-পশুপাখি ভালোবাসো তাই!
-দূর বোকা পর করসিস ক্যানো ওদের!?
-তাহলে
-ওরা আমার সন্তান তাই!
-আম্মু আমি বুঝি নি কথাটা!
-বুঝবা আব্বু, ডাক পেলে ঠিকই বুঝবা…
ফুল মুন ছিলো সেদিন, এক পা দু পা করে সিড়িঁ ভাংছিলাম।ছাদের দরজা খুলে দিলাম, চশমা নেই নি আজ! চাঁদটা অসম্ভব বড়ো লাগছে, আলোটাও এতো পরিষ্কার।হঠাৎ মনে হলো আমি নিজেকে দেখছি নাহ! অনেক দূরের গোয়াল ঘরের গরুটা ডাকছে, এতটা স্পষ্ট আসছে শব্দটা! সাথে ঝিঝিপোকার ডাক। আমি চোখ বুঝলাম! কি শান্তি আমার শরীরে! কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, আমার আম্মুর শরীরে গন্ধ উষ্ণতা! আমি কিছুই ভাবতে পারছি নাহ! আবার সেদিনের মতন মহাকাল আমাকে গ্রাস করছে!........
পিচ্চি, চমকিয়য়ে চোখ খুলি!দি ডাকছে!
-এই তুউ দুই ঘন্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে কি ধ্যান করছিলি"
-না বুড়ি এমনি ভাবছিলাম
-ঘুমাতে যা
-যাচ্ছি
আমার মুখে হাসি, আমার দ্বিতীয় মা আজ এসেছিলো!আমাকে আদর করে গিয়েছে! আমি ছোট্ট শিশুর মতন হাত পা ছুড়ছিলাম।কেনো জানি মনে হচ্ছিলো এই মা বোঝে নাহ আমার চিন্তা করার ক্ষমতা আছে! তার কাছে গেলে আমি চিন্তা করতে পারি নাহ শূন্যে হারিয়ে যাই!
Congratulations @nirupom.azad! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Do not miss the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!
Nice writing up
শুভ সকাল ভাই
ধন্যবাদ ভাই লিখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
সুন্দর
শুভ সকাল ভাই।
ধন্যবাদ লিখাটা পড়বার জন্য
Another chance to win the first prize brother. Excellent one. Best of luck.
শুভ দ্বিপ্রহর ভাই
ধন্যবাদ লেখাটা পড়বার জন্য আর শুভকামনার জন্য