নীল আকাশের হাতছানিতে...

in BDCommunity2 years ago

বহুরূপি আকাশ একেক সময় একেক রঙে নিজেকে সাজায়। কখনো নীল, কখনো বা সাদা কিংবা কালো মেঘের বাহারি রঙে নিজেকে রাঙায়৷ প্রতিটা রূপই অদ্ভুত সুন্দর। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আকাশের এই সব রূপে মুগ্ধ হয় নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আকাশের এসব রূপ নিয়ে কত শত গান, কবিতা, ছবি, গল্প রচিত হয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই। আমি অবশ্য আজ আকাশ নিয়ে কোনো রচনা লিখতে বসি নি।

কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তাটুকুর বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। এই রাস্তাটা দিয়ে অবশ্য সিলেট পর্যন্ত যাওয়া যায়৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডের পর থেকে সিলেট পর্যন্ত রাস্তা যথেষ্ট ভাল৷ সমস্যা শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত৷ তার উপর আবার পুরো রোডে রাস্তার কাজ চলছে। যে কারণে পরিবেশটাও তেমন একটা ভাল না। প্রচন্ড ধুলাবালিতে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

তবে রাস্তা ও পরিবেশ যতই খারাপ হোক না কেন, এখানটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কাছে সবকিছুই মলিন হয়ে যাবে। কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাস্তায় ঢুকার পর থেকেই অদ্ভুত এক সৌন্দর্য্য চোখে পড়বে। বিশেষ করে এদিককার আকাশ সারাক্ষণ নীল আর তুলোর মতো সাদা মেঘের সংমিশ্রনে অসাধারন এক রূপ ধারন করে থাকে। মাঝে মাঝে কখনো কখনো কালো মেঘ এসেও সেই সৌন্দর্য্যে হানা দিয়ে নতুন আরেক রূপ সৃষ্টি করে৷ কিন্তু এর সৌন্দর্য কখনো নষ্ট হয় না।

রাস্তার দু পাশে শুধু পানি আর পানি। যেহেতু আকাশের সুন্দর রূপ যখন সুবিশাল হাওর কিংবা জলরাশিতে প্রতিফলিত হয়, তখন এর সৌন্দর্য যেন দ্বিগুন বেড়ে যায়। আমি প্রতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবার সময় গাড়ির জানলা দিয়ে এই সৌন্দর্য্যগুলো উপভোগ করার চেষ্টা করি। বেশিরভাগ সময় আমাকে হতাশ হতে হয় না। আকাশ, পানি ও মানুষ দেখতে দেখতে ভয়ানক খারাপ রাস্তার জার্নিটাও আমার কাছে সুন্দর ও উপভোগ্য মনে হয়।

কাজিনের বিয়ে উপলক্ষে গত পরশুদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা হয়। সেদিনই ছবিগুলো তুলি। কিন্তু বিয়ে বাড়ির যত সব ঝামেলা ও ব্যাস্ততার কারণে এসব নিয়ে আর কিছু লেখা হয় নি। গত তিন দিন মোবাইলটা হাতে নেয়ারও পর্যাপ্ত সময় পাই নি। সে কারণেই গত তিন দিন ধরে হাইভে কোনো লেখা প্রকাশ করতে পারি নি। কিন্তু আজ কিছুটা সময় হাতে পেলাম। তাই গত তিন দিনের সমস্ত আবেগ অনুভূতিগুলো কিছুটা হলেও প্রকাশ করার চেষ্টা করছি৷

কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দূরত্ব খুব বেশ না। পাশাপাশি জেলা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যাবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সময়টা একটু বেশি লেগে যায়৷ প্রায় ৫ ঘন্টা হাতে নিয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। অবশ্য সাড়ে চার ঘন্টার মাঝেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌছে গিয়েছিলাম। সেদিনের তামপাত্রা ভালই গরম ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এইটাও একটা সমস্যা৷ অন্য যে কোনো জেলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তামপাত্রা আমার কাছে বেশি মনে হয়। এর পেছনে অবশ্য কোনো যুক্তি নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া যখন পৌছি, ঘড়িতে তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। বাস থেকে নেমেই মনে হচ্ছিল শরীরে যেন আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, এতটাই গরম ছিল। কিন্তু এই গরমটা বেশিক্ষণ থাকে নি। প্রকৃতি হয়তো আমার কষ্টটা বুঝতে পেরেছিল। আর সেজন্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো আকাশ অন্ধকার করে হুট করে কালো মেঘের আগমন। মুহুর্তের মাঝেই পুরো পরিবেশের চিত্র ভিন্ন। কিছুক্ষণ আগে রৌদ্রজ্বল আকাশ হুট করে কালো মেঘে ঢাকা পড়ল। এতে অবশ্য ভালই লাগছিল। কারণ এত গরম সহ্য হচ্ছিল না।

তবে এটাও সত্যি বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলাম। এরকম রৌদ্রজ্জ্বল একটা দিনে বৃষ্টির কথা চিন্তা করা যায় না। তাই সাথে ছাতাও আনিনি। ফলে বৃষ্টির মাঝেই একটা দোকানে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম বৃষ্টি থামার আশায়। কিন্তু এমন এক বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, যা থামার লক্ষণই দেখাচ্ছিল না। রাস্তাও একেবারে খালি ছিল। একটা সময় পর আর বৃষ্টি থামার অপেক্ষা না করে বৃষ্টির মাঝেই ভিজে ভিজে রাস্তায় নেমে পড়েছিলাম।

বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় গন্তব্যস্থলে একটু একটু করে এগিয়ে যাবার সময় খারাপ লাগছিল না। যদিও বৃষ্টিতে অনেকটা ভিজে যাওয়ায় ঠান্ডায় কাঁপুনি আসছিল৷ কী অদ্ভুত একটা অবস্থা, তাই না? একটু আগে যখন গরমে কাহিল অবস্থা ছিল, এখন তার বদলে শীতে শরীর কাঁপছিল। এইটাই পৃথিবী, যে ক্ষণে ক্ষণে নিজের চরিত্র পালটায়৷

Sort:  

শরৎকালের আকাশ সত্যিই অনেক সুন্দর।সেই ছোটবেলায় রচনায় পড়া,শরৎকালের আকাশে ভেসে বেড়ায় তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘ।