মানুষের জীবন সবসময় সুন্দর থাকে? নাকি মাঝে মাঝে জীবনে সুন্দর কিছু মুহুর্ত আসে, আর সেই সুন্দর মুহুর্তগুলোর স্মৃতি নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে? আমার কাছে অবশ্য দ্বিতীয়টাকেই সঠিক বলে মনে হয়। আমার জীবনেও মাঝে মাঝে এমন কিছু সুন্দর মুহুর্ত আসে। সেগুলোকে কেন্দ্র করেই আমার সমস্ত স্মৃতি আর গল্প রচিত হয়। আর আমি সেগুলোকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকি।
কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়েছিলাম। সেই লেখার লেখক বলেছিলেন জীবন যাপন না করে বরং জীবনটাকে উদযাপন করার চেষ্টা করা উচিত। আপাত দৃষ্টিতে এই দুইটার মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই মনে হলেও একটু গভীর ভাবে ভাবতে শুরু করলাম, তখন কিছুটা হলেও পার্থক্যটা ধরতে পেরেছিলাম। জীবন যাপন করা মানে আমরা সবাই স্বাভাবিক ভাবে যেভাবে জীবন পরিচালনা করি, সেটাকেই বুঝায়। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠা, নাস্তা করা, সারাদিন অফিস করা, রাতে বাসায় এসে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়া। প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ, প্রতি মাস এমনকি প্রতিটা বছর জুড়েই এই রুটিনটা রিপিট হতে থাকে।
একটানা একটা রুটিনের মাঝে থাকলে জীবনটা বোরিং হয়ে যায়। আর সেজন্য মাঝে মাঝে রুটিনের বাইরে এসে জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করা উচিত। এখন প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে রুটিনের বাইরে এসে জীবনটাকে উপভোগ করা যেতে পারে, তাই না?
একেক জনের ক্ষেত্রে এটা একেক রকম। কারণ আমাদের সবার দৈনন্দিন রুটিন তো আর সেইম না। কেউ হয়তো সারাদিন অফিসে থাকে, কেউ আবার সারাদিন বাসায় থাকে। আবার কেউ বা কাজের প্রয়োজনে সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে। পেশা অনুযায়ী একেক জনের একেক রকম ভাবে দিন পার করতে হয়। তো এইসব রুটিনের বাইরে মাঝে মাঝে ২-১ টা দিনের জন্য যেতে পারলে জীবনটাকে উপভোগ করা যায়। তা না হলে সবকিছু কেমন যেন পানসে হয়ে উঠে।
একসময় প্রচুর বই পড়া হতো। বই কেনার সামর্থ্য তো তখন ছিল না। ছোটবেলায় বান্দরবান হাই স্কুলের পাশের ছাত্রবন্ধু লাইব্রেরি থেকে ৫ টাকা দিয়ে আমরা বই ভাড়া দিয়ে নিয়ে এসে পড়তাম। এরপর আসলো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি। দেড়শো টাকা দিয়ে মেম্বারশিপ কেনার পর প্রতি সপ্তাহে ৩ বার করে বই চেইঞ্জ করতে পারতাম।
এরপর স্মার্টফোন আসার পর তো আমার কপাল যেন একেবারেই খুলে গেল। অনলাইনে ঘেটে ঘেটে নানা ধরনের বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়তাম। কলেজ লাইফের প্রায় পুরো সময়টা আমার দিন ও রাত কেটেছে শুধুমাত্র বই পড়ে। তবে বই পড়ার পাশাপাশি যখন ফেসবুকেও একটু একটু করে এক্টিভ হতে শুরু করলাম, তখন ধীরে ধীরে বই থেকেও দূরে সরতে শুরু করলাম।
কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমার ধৈর্য্য কমতে শুরু করলো তখন। বই পড়ার বদলে মুভি দেখতে শুরু করলাম। একটা বই পড়ে শেষ করতে হয়তো ক্ষেত্র বিশেষে ২-৩ দিনও লেগে যায়। কিন্তু একটা মুভি মাত্র ২ ঘন্টার মাঝেই দেখে শেষ করে ফেলা যেত। আর আমার মুভি দেখার নেশা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে এমনও দিন গিয়েছে যে আমি একদিনে ৪-৫ টা করে পর্যন্ত মুভি দেখেছি।
তবে একটা সময় পর মুভির প্রতি আগ্রহও কমে গিয়েছিল। কিন্তু একেবারেই যে কমে গিয়েছে, সেটা বলব না। মাঝে মাঝে একটা দুইটা করে মুভি দেখা হয়। পৃথিবীর নানা দেশের নানা জনরার মুভি দেখতে দেখতে কখনো ক্লান্ত হই নি। তবে এত এত ইন্ডাস্ট্রির মাঝে আমার কেন যেন শুধুমাত্র সাউথ কোরিয়া আর ভারতের মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রির মুভিগুলো সবচেয়ে বেশি ভাল লাগা শুরু করেছিল। পাশাপাশি স্পেনিশ মুভির প্রতিও আলাদা একটা টান কাজ করছিল।
যায় হোক, এই মুভি আর বই পড়ার বাইরে আমার আরো একটা নেশা আছে। আর তা হলে ব্যাগ প্যাক করে কাঁধে নিয়ে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানো। আমার ব্যাগের ভেতর সবসময় তোয়ালে, পেস্ট, ব্রাশ আর এটা সেটা টুকটাক কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস থাকতো। যখনি সুযোগ পেতাম, তখন বের হয়ে যেতাম। কিন্তু সেই জীবনটাও হারিয়ে ফেলেছি আমি। চাকরিতে জয়েন করার পর থেকে আর সুযোগ পাই নি তেমন একটা।
যায় হোক, নিজের কথা বাদ দিয়ে আজকের লেখার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কথা হচ্ছিল রুটিনের বাইরে গিয়ে কিভাবে জীবনটাকে উপভোগ করা যায়, তা নিয়ে। তো আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, কিভাবে রুটিনের বাইরে বের হওয়া যায়, তাহলে আমি চোখ বন্ধ করে বলব বাড়ি থেকে বের হয়ে ২-১ দিনের জন্য দূরে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য। তো সেটা হতে পারে একা কিংবা প্রিয় মানুষ অথবা পরিবারের সাথে।
কারণ বাড়ি থেকে একবার বের হওয়া মানে নিজেকে রুটিনের বাইরে নিয়ে যাওয়া। এদিক থেকে সেদিকে ঘুরে বেড়ানো, নতুন জায়গায় থাকা, নতুন ধরনের খাবার খাওয়া, নতুন নতুন জিনিস দেখা, নতুন সব মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া... সবমিলিয়ে নতুন সব অভিজ্ঞতা।
একটা সময় ছিল, যখন মানুষের অসুখ বিসুখ হলে ডাক্তাররা হাওয়া পরিবর্তনের জন্য উপদেশ দিতেন। মানে কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসার কথা বলতেন। কিন্তু এখনকার ডাক্তাররা এধরনের উপদেশ তেমন একটা দেন না। অবশ্য এর পেছনে বেশ কিছু কারণও আছে। তবে আমার কাছে যে কারণটা সবচেয়ে বেশি যৌক্তিক মনে হয়, তা হলো যে আমাদের দেশের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো মূলত পর্যটক বান্ধব না। আপনি যেখানেই যান না কেন, নতুন হলে নানা রকমের ঝামেলা ও হেনস্থার মাঝে পড়তে হবে। তার উপর আবার দীর্ঘ সময়ের জার্নির কারণে শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে।
তবে এটাও ঠিক যে, মানুষের মানসিক অসুস্থতার জন্য এই হাওয়া পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সুযোগ পেলে অবশ্যই বাড়ি থেকে বের হয়ে একটু দূর থেকে ঘুরে আসতে পারলে জীবনটাকে উপভোগ করা আরো সহজ হবে...
Yay! 🤗
Your content has been boosted with Ecency Points, by @reza-shamim.
Use Ecency daily to boost your growth on platform!
Support Ecency
Vote for new Proposal
Delegate HP and earn more