Describe Your Para: আমার শৈশব কৈশোরের স্মৃতিময় পাড়া

in BDCommunity4 years ago

হাই, সবাই কেমন আছেন?

এটা আমার প্রথম পোস্ট এই কমিউনিটিতে এবং সব মিলিয়ে আমার দ্বিতীয় পোস্ট। প্রথমে আমার পরিচয় দেই।

আমি কক্সবাজারের মেয়ে। এখন থাকি চট্টগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে। পারফেক্ট গৃহিণী। চেষ্টা করি সবাইকে খুশি রাখতে।


পাড়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমার বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল। এক বছর হল আমার বিয়ে হয়েছে। তারপর থেকে আমি আমার বাড়িতে অর্থাৎ আমার বাবার বাড়িতে মেহমান। এটা মেয়েদের একটা ভাগ্য। যে বাড়িতে তার জন্ম , যেখানে তার বেড়ে ওঠা, সেই বাড়িতে বিয়ের পরদিন থেকে হঠাৎ করে সে হয়ে যায় অতিথি। আর যে ঘরটা জন্মের পর থেকে সে কখনও দেখেনি সেই ঘরটা নাকি তার নিজের ঘর হয়ে যায়! যে মানুষটাকে হয়তো বিয়ের আগে একবার বা দুইবার দেখেছে সেই মানুষটা হয়ে যায় তার স্বামী। তার সবচেয়ে আপনজন। এটা বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারীর জীবনের সারমর্ম।

আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। তবে আমি বিষয়টাকে পজিটিভলি নেই। এই যে একটা পরিবেশ থেকে অন্য আরেকটা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন মানুষের সাথে জীবনের সূচনা করা এটা একটা মজার ব্যাপার হয় যদি মানুষগুলো ভালো হয়। আমার ক্ষেত্রে গত এক বছরে অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে আমার ভাগ্যটা ভালো। বাকি জীবনের কথা বলতে পারিনা।

তবে বাড়ির জন্য খারাপ লাগে। যেখানে আমার বেড়ে ওঠা। আমার শৈশব কৈশোরের স্মৃতি। সেই বাড়িটার কথা মনে পড়লে মাঝে মাঝে চোখে পানি চলে আসে। সেই পানি গুলো কেউ দেখেনা। আমাদের বাড়িটা ছিল যৌথ পরিবার টাইপের। আমাদের চাচা এবং জ্যাঠা মিলিয়ে একত্রে একটা পাড়া। তাই আমার কাছের প্রতিবেশী মূলত আমার আত্মীয়রাই।

IMG_20200628_234312.jpg

আমার বাড়ি ও উঠান, এখানেই আমার জন্ম, শৈশব, কৈশোরের বেড়ে উঠা

আমি যখন অনেক ছোট তখন পুরোটাই একটা পরিবার ছিল। অনেক বড় পরিবার। আমরা খেতে বসলে মনে হতো ছোটখাটো মেজবান। রান্না হতো অনেক বড় বড় ডেকচিতে। তারপর পরিবারের চাহিদায় এবং প্রয়োজনে আস্তে আস্তে চাচারা আলাদা হয়ে যায়। আলাদা হলেও যেহেতু একই পাড়ায় আমরা থাকি মনে হয় না যে আলাদা হয়েছে। শুধু রান্নাবান্না আলাদা হয়েছে। একই উঠোনে আমরা খেলা করতাম। গল্প করতাম। সময় কাটাতাম।

20191222_162203.jpg

বাড়ির পাশে ফুলের বাগান, একসময় আমি এগুলোর দেখাশোনা করতাম

এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস যারা এরকম যৌথ পরিবারের বড় হয় তাদের মাঝে সংকীর্ণতা কম থাকে। উদার মন-মানসিকতার হয়। সত্য কিনা জানিনা। ব্যতিক্রম থাকতে পারে। তবে আমি আমার যৌথ পরিবার থেকে বিভিন্নভাবে লাভবান হয়েছি। আমরা ছোটবেলায় একসাথে উঠানের মধ্যে দৌড়ঝাপ দিয়ে খেলতাম। পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। গাছে উঠে আম পারতাম। শৈশবের এই স্মৃতিগুলো তো এখনকার ইউনিট ফ্যামিলি বাচ্চারা পায়না। এখনো আমাদের যে কোনো বিপদ আপদে চাচা এবং চাচাতো ভাইরা ছুটে আসে মুহূর্তের মধ্যে। আমরাও তাদের বিপদাপদে ছুটে যাই। এই যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্ক এটাই আমাদেরকে শক্তি যোগায়।

আমরা পাঁচ ভাই দুই বোন। চার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। ভাই ভাবীরাসহ একসাথে থাকা হয়। প্রত্যেকটা ভাইয়ের একটি দুটি করে বাচ্চা আছে। তাদের কিচিরমিচিরে সারাক্ষণ মুখরিত থাকে আমাদের পরিবার। আমাদের বাড়ি পৌরসভার মধ্যে হলেও কিছুটা গ্রামীণ পরিবেশ পাওয়া যায়। উত্তর পাশে বিল। সেখানে বছরে অর্ধেক সময় ধান চাষ হয় বাকি অর্ধেক সময় পানি থাকে। আমরা বিকেলে গিয়ে বসি। সুন্দর বাতাসে শরীর জুড়িয়ে যায়। এখানে বসে গল্প করে মহিলারা। এখন আর পুকুরটা নেই। ছোট্ট একটা ডোবার মত হয়ে আছে।

20191223_150708.jpg

উত্তর দিকের এই সেই বিল, এটার পাশে পাড়ার মহিলাদের বৈকালিক আড্ডা বসে

এখন আমি গ্রামে আছি বাপের বাড়িতে। লকডাউনের আগেই এসেছিলাম। এসে আটকা পড়ে গেছি। আমার স্বামীও আমাকে অনুমতি দিয়েছেন এখানে থাকার। এটা আমার জন্য ভীষণ ভালো হয়েছে। নইলে লকডাউনে চার দেয়ালের মাঝে দমবন্ধ হয়ে মনে হয় মারাই যেতাম শহরে। আমি ছোটবেলা থেকে যেহেতু মুক্ত বাতাসে বড় হয়েছি তাই সময় ভালোই কাটছে এখানে।


পাড়া নিয়ে বলতে গিয়ে নিজের কথাই বেশি বলে ফেললাম। আশা করি পরবর্তীতে আরো কথা হবে। ভালো থাকবেন সবাই।