‘আয়না’ এই শব্দটির সাথে মানবজাতি অতপ্রতভাবে জড়িত। যেমন কাজের ক্ষেত্রে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, কোনো কিছু আদান প্রদানের ক্ষেত্রে অর্থাৎ মানব জীবনের সর্বস্তরে আয়নার মতাে সচ্ছ প্রতিচ্ছবি পাই। তবুও আমরা অনেকেই ভাবতে পাড়ি আয়না আমাদের দেখতে হয় না, আয়নার দরকার পড়েনা অথবা যারা সাজ-গোজ করেন তাদের আয়না লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও মজার কথা হলো অধিকাংশ মানুষই কাঁচের আয়না নিয়েই মেতে আছে, যা বাস্তবে শুধুমাত্র একজন মানুষের চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা কম আর শরীরের আবরণকে দেখতে সাহায্য করে।
হ্যাঁ আর বেশিরভাগ মানুষই আয়নার এতোটুকু ব্যবহারটাই জানে। আমরা চাইলেই একজন মানুষের জীবনকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমগ্র জীবন পদ্ধতিকে আয়নার মেতো করে দেখতে পাড়ি। আমরা মানুষ যতো কিছু করি ও ফলাফলসরূপ যা যা অর্জন করি বা জীবন থেকে ত্যাগ করি সবকিছুকেই আমরা আয়নার মতো করে পেয়ে থাকি।
আয়নার সামনে একজন মানুষ যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে আয়নাতে ঠিক সেভাবেই নিজেকে দেখতে পাবে। বাস্তব জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় আয়না হলো তার বিবেক ও এই ঐশ্বরিক সৌন্দর্যময়ি সারা পৃথিবীটা বা দুনিয়াটা। অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীটাই একজন মানুষের জন্য বাস্তবিক আয়না। আর তা আমরা মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে যেভাবে উপস্থাপন করবো পৃথিবীও আমাদের সেভাবেই পৃথিবীর মঞ্চে উপস্থাপিত করবে।
আমরা মানুষ হয়ে একটা কথা ভুলে যাই যে, আমরা ঠিক যেমনটা ব্যবহার করি প্রকৃতির সাথে ঠিক তেমনটাই প্রকৃতি আমাদেরকে বহুগুণে ফিরিয়ে দেয় সঠিক সময়ে যখন মানবজাতি ক্ষমতার অহংকারে অমানুষ হয়ে যাই।
আচ্ছা এই সহজ কথাটা নিশ্চয়ই সবাই বুঝেন যে, কোনো কাজ যদি আপনি ভালোভাবে শেষ করেন, তাহলে কাজের লাভ বা মূল্য বা ফলাফলটাও নিশ্চয়ই ভালো পাবেন। ঠিক তেমনি কাজটা ভালোভাবে না করে শেষ করলে লাভ বা মূল্য বা ফলাফলটাও ঠিক তেমটাই পাবেন এমনটাই স্বাভাবিক। “ টি ফর টেট “ একটা কথা আছে যার মানে হলো “ যেমন কর্ম তেমন ফল ”।
ঠিক একইভাবে বলতে হয়, আমরা একে অপরের কাছ থেকে কিছু পেতে চাইলে আমাদের সবার আগে বোঝার ও জানার দরকার, আমরা তেমনটাই পেতে পাড়ি যেমনটা কাজ আমি বিশ্বাসের সাথে করেছি। সহজ ভাষায় বললে বিশ্বাসের অমর্যাদা না করে ভালোভাবে কিছু করলে অবশ্যই ভালো মূল্যায়ন পাবেন ও সম্মানিত হবেন। অর্থাৎ কাজ অনুযায়ী সম্মান পাবেন এটাই এই জগতের চিরন্তন বাস্তবতা, যা সকল মানবজাতির জন্য একইভাবে প্রোজোয্য। তবে কষ্ট হলেও বলতে হয়, মানুষ জগতের নিয়ম ভেঙে আজ মানুষ পৃথিবীর স্বাভাবিকতাকে ধ্বংস করে মানব সৃষ্ট নিজস্ব নিয়মে বাঁচার যে কাল্পনিক চেষ্টা করে যচ্ছে তা ধ্বংসের মাধ্যমেই আয়নার প্রতিফলন সরূপ আমাদের মানবজাতিকে নিঃশ্বেষ করে দিবে।
বর্তমান সময়ে তো মানুষ প্রতিটা সেকেন্ড যেভাবে একজন অপরজনের সাথে বিশ্বাস ভাঙা গড়ার নোংরা খেলায় মেতে আছে। সবাই ভুলেই গেছে যেকোনো দিন যেকোনো সময়ে বা যেকোনো মূহুর্তে একইভাবে নিঃশ্বেষ হয়ে যেতে কোনো সময় লাগবে না। আমরা শিক্ষিত হতে হতে ভুলেই গেসি “ যেমন কর্ম, তেমন ফল ”।
মানুষের জীবনে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখার জন্য যেমন কাঁচের আয়নার প্রয়োজন, ঠিক তেমনিই মানুষের বেঁচে থাকার জন্যেও সবুজবনানীসহ, সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রকৃতিটাও আমাদের দরকার বাস্তবিক জীবনের আয়না হিসেবে।
সবাই ভালো থাকবেন, ভালো রাখবেন.....