বেঁচে আছে , মিশে যায় নি ।

in BDCommunity4 years ago

পেশায় মসলা ব্যবসায়ী হলেও,রহিম মিয়ার একটা ইজ্জত আছে । নিজের ইজ্জত এর ব্যাপারে সে ভীষণ কঠিন স্বভাবের একজন মানুষ, ইজ্জতের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় সে । রহিম মিয়া সর্বদা চেষ্টা করে নিজের মনকে নিজের সামর্থ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে। এতে যে হয়তো সে খুব বেশি সুখী তেমনটা নাহ্ , কিন্তু তার কাছে তার প্রাপ্ত সুখ টুকুই বা কম কিসে । দেখতে দেখতে রহিম মিয়া এভাবে জীবনের ষাটটি বসন্ত পার করে ফেলেছে । এই ষাট বছরে রহিম মিয়ার তেমন কোন পরিবর্তন না হলেও, শুধু তার মসলার পোটলা গুলোর সংখ্যা খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে অল্প পদের মসলা বিক্রি করত,এখন সে হরেক পদের মসলা বিক্রি করে ঠিক এতোটুকুই উন্নতি ।


তার জীবনে পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষার ধারাবাহিকতা নেহাতই নেই বলে চলে । তবে রহিম মিয়া, জীবন থেকে যে বাস্তবিক শিক্ষা অর্জন করেছে,সেটা অবশ্য পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষাকেও মাঝে মাঝে দমিয়ে দেয় । রোজ সকাল থেকে তার জীবনের যাত্রা শুরু হয়,এ যাত্রা কিন্তু ব্যবসায়িক যাত্রা । ঘুম থেকে উঠেই মুখের মধ্যে একটু কয়লা নিয়ে দাঁতগুলোর উপর ডলা দেয়, কয়লা গুলো যেন তার টুথপেষ্টের কাজ করে । রহিম মিয়া দাঁত ঘষে আর মনে মনে নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়, টুথপেষ্টের গন্ধটা তো অনেক সুন্দর ।এটাই মনে হয় বাজারের সবচেয়ে দামী, এই আকাশচুম্বী চিন্তা ভাবনা দিয়ে তার সকাল শুরু হয় । অতঃপর গিন্নিকে বলে, আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা ভাতগুলোকে হাড়ি থেকে তুলে কাঁচা মরিচ দিয়ে কড়মড় করে চিবিয়ে খেয়ে পেট পুজো করে । সে ভাবে,পেট
শান্ত তো দুনিয়া শান্ত। অতঃপর মসলার পোটলা গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে গন্জের দিকে যাত্রা শুরু।
রহিম মিয়া হাট করে খায়,তার নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই ।আজ এগঞ্জে তো কাল অন্যগঞ্জে এইভাবেই চলে তার জীবন । খুব বেশি আর্থিকভাবে সচ্ছল নাহ্ সে, এ জীবনে সে একটা নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা করতে পারেনি । এটা নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই, আসলে তার ছুটতে কষ্ট হয় না । এ জীবনে রহিম মিয়া স্বচক্ষে দেখেছে, তার সামনে একই ব্যবসা করে কতজন নিজের ঠিকানা তৈরি করে নিয়েছে,কতজন চাকচিক্য জীবনযাপন করছে । তবে রহিম মিয়ার কোনো পরিবর্তন হয়নি । আজও সে কুপির আলোতেই ব্যবসা করে যাচ্ছে। কুপির আলোতে ব্যবসা করে বিধায় তার যে খুব বেশি ব্যবসার প্রসার তা কিন্তু নয় ।হয়তো এই কুপির আলোয় তার ব্যবসাকে আরো অন্ধকার করে ফেলেছে । মানুষ নাকি এখন বাহ্যিক দিকটাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, হয়তো এইরকম মুখরোচক কথাগুলোর ভিড়ে রহিম মিয়া দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ।
এতো সবের মাঝেও রহিম মিয়ার দুঃখ নেই, তার মুখ ভরা হাসি ।সে জানে যে তার অধিক খরিদ্দার নেই, তবে দিন শেষে কিছু ভালো খরিদ্দার পেলেই হয় । এতেই তার হাসিমাখা মুখ আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে । রহিম মিয়া সর্বদা চেষ্টা করে মসলার গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য ,এজন্যই হয়তো এখনো রহিম মিয়া মাটির সঙ্গে মিশে যায়নি ।
20200630_201231-01.jpeg

20200630_201302-01.jpeg

20200630_201250-01.jpeg
@azircon ভাই তোমাকে উৎসর্গ করলাম লেখাটা । পড়ে দেখতে পারো । ধন্যবাদ

Sort:  

ছবিতে কুপির আলোটা এমন জ্বলজ্বল করছে, মনে হচ্ছে যেন রহিম মিয়ার জীবন জ্বলছে।

thanks for your compliment

Thanks for sharing your creative and inspirational post on HIVE!



This post got curated by our fellow curator @priyanarc and you received a 100% upvote from our non-profit curation service!

Join the official DIYHub community on HIVE and show us more of your amazing work!