এই নিয়মতান্ত্রিক দেশে সাধারণ মানুষ আইন মানবে না তা কি হয়! না হলে কি কমরের হাড় হাড্ডি থাকবে? আইন অমান্য করলেই সাজা, নো মার্সি। বনল ছেলেটা এখন অটো রিকশা ভ্যান চালক, এলাকায় এলাকায়, হাট বাজারে দোকানে দোকানে পণ্য পৌছে দেয়।
বনল একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে। যা বেতন পায় তা দিয়ে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ, বাড়ি ভাড়া, মাসে মাসে বাবা মা কে টাকা পাঠানো, ছোট ভাই বোনদের পড়াশুনার খরচ, নিজের বউ বাচ্চার খরচ হয়ে যায়। খুব ভালো না গেলেও চলে যায় আটকায় না।
কিন্তু বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হতে শুরু করে সব কিছুর দ্বিগুন দাম গুনতে হচ্ছে। কষ্টের মধ্যেও সামান্য কিছু টাকা জমিয়েছিল সেটাও শেষ। তা দিয়ে এই কয়েক মাস বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়েছে। আর বেতন যা পায় তা দিয়ে সংসারের সকল খড়চ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন হাত একেবারে শূন্য। কিন্তু খরচের খাতা উর্ধমুখী হতেই চলেছে। চলছে আপন গতিতে।
এদিকে বউ কনা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ডাক্তার দেখানোর কথা থাকলেও নানা বাহানায় কাল ক্ষেপন করতে করতে শেষ সীমানায় ঠেকেছে। ডাক্তার দেখাতেই হবে। পকেটের স্বাস্থ্য একেবারেই খারাপ। মাত্র ৩০০ টাকা আছে। ছোট ছেলেটা এই বয়সেই হিসেবি।হিসেবি হবেই বা না কেন দেখতে হবে তো কোন মায়ের ছেলে। কনা আসলেই খুব হিসেব করে সংসার চালায়। সে আমার দৈনতা ভালো করেই বুঝতো। বাড়তি কোন চাওয়া পাওয়া তার নেই। যাই হোক ছোট ছেলে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে মাটির কুলিয়ায় টাকা জমিয়েছিল। পাহাড় সম পাথর বুকে চাঁপিয়ে ছেলের কুলিয়া ভেঙ্গে ১১৫০ টাকা পেয়েছে। কথা ছিল এই টাকা জমিয়ে সাইকেল কিনবে। সেই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাবে। অভাব কি সেটা তো আর ছোট্ট ছেলে বুঝে না। ছেলে কান্না কাটি তার জমানো টাকার জন্য। হাতে হল ১১৫০+৩০০=১৮৫০ টাকা।
ছোট ছেলের স্বপ্নকে ভেঙ্গে কনা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলো। ডাক্তারের রেগুলার রুগী ছিল কনা। এর আগেও ছোট ছেলে হওয়ার সময় তারেই কাছে চিকিৎসা নিয়েছিল। যাক ভিজিট দেওয়ার সময় নতুন পুরাতন কোকরানো দশ টাকা বিশ টাকার নোট গুলো দেওয়ার সময় বনল একটু লজ্জিত বোধ করিছিল। ডাক্তার শিলা বনলের ইতস্ততা দেখে তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা বুঝতে পেরে ভিজিট নিবে না বলে বিনয়ের সাথে জানান। বনল ও কনা ভিজিট নেওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করেও লাভ হয় নিই। আজো ভালো মানুষ আছে,ভালো ডাক্তার আছে। কে বলেছে সব ডাক্তাররা কোসাই?
ফেরার পথে ডিসপেন্সারীতে সব উষুধের হিসেব কষে দেখে তার কাছে সেই পরিমান টাকা নেই।তাই সামান্য কিছু ওষুধ নিয়ে পকেট শূন্য করে বাসায় ফিরলো বনল আর কনা।
কাল থেকে সংসারের যাবতীয় খরচের জন্য টাকা নেই শূন্য হাত। বেতন পেতেও দেরি কেবল তো মাসের ২০ তারিখ। বাকি দশটা দিন চলবে কি করে। আর বেতন পায়ে লাভটাই বা কি হবে। বেতনির সম পরিমান টাকা তো শুধু মুদির দোকানের বাকি খাতা চেয়ে আছে। তাছাড়া কনার চিকিৎপার খরচ, বাড়ি ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, যাও বা বিদ্যুৎ বিল আগে বাকি রাখা যেত এখন তো আবার প্রিপেইড মিটার। টাকা শেষ হলেই ভরতে হবে। বেশি বেতনের চাকরির খোঁজে প্রতিদিন বার হয় বনল।
অবশেষে একটি পার টাইম কাজ পায়। সন্ধার পর থেকে কোম্পানির দোকানে দোকানে টাকা কালেকশন আর অবিক্রিত ও মেয়াদ উত্তীর্ণ মাল ফেরত আনার জন্য ভ্যান চালকের চাকরি পায় বনল। কিন্তু তার পক্ষে তো সেটা কোনভাবেই করা সম্ভব না। সাফ জানিয়ে দেন বনল। রাতে কনার সাথে এই ভ্যান চালকের চাকরির কথা বললে দুজনের চোখ বেয়ে নিরবে জল চলে আসে। দোটানার মধ্যে থেকে স্ত্রীর বাঁধা থাকা সত্বেও অভাব তাকে সকালে ঠিকই নিয়ে যায়। কথা বলে চাকরি কনফার্ম করে আসে। আগামী কাল থেকেই সে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়ে দেয়।
পরের দিন অফিস শেষ করে বাসায় এসি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে কথা অনুযায়ী অফিসে সব কিছু বুঝে ভ্যান নিয়ে বার হয়। কিন্তু পরিবারের এই দৈন্যদশা অভাব অনটনে থাকায় বাধ্য হয়ে তার এই সিদ্ধান্ত তার যে জীবনের নিষ্ঠুর সমাপ্তি ঘটবে সে কি জানতো?
সে নতুন ভ্যান চালক বুঝতে পারেনি সে কি আইন অমান্য করেছে, কিন্তু আইন রক্ষার দায়িত্বে আপোষহীন এক ব্যক্তির লাথি বিদ্ধ করে তাকে। গরীবের পেটেই সবাই তাদের সততা ও আপোসহীনতা দেখানোর মোক্ষম সময় মনে করে। এই আইন রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিও এই সুযোগটি হাত ছাড়া করতে চান নিই। হয়তো ওই ব্যক্তিও এভাবে লাথি মারার ইচ্ছা ছিল না, আইনের লোক হিসেবে আইন রক্ষা করতে চেয়েছিলেন মাত্র। নিয়তির দোষেই লাথি এসে লাগে বনলের বুক আর কোমড়ের মাঝামাঝি।
লাথী সে এমন কি? গরীবের এইসব লাথ্থী ঘুতা তেমন একটা জাত যায় না। লাথি সয়েই মূল সড়ক থেকে শাখা সড়কে এবড়ো থেবরো ভাবেই ভ্যান চালিয়ে এগিয়ে যায় প্রায় একশো গজ, তারপর ঢলে পরে রাস্তায়। তিনি যে পেশাদার ভ্যান চালক নয় তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিল, নিয়তির দায় তাকে এইখানে টেনে নিয়ে এসেছে। গোঙাতেও তার কষ্ট হচ্ছিল, কেউ এসে একটা ব্যবস্থা করবে এ আশায় অনেকটা নির্জীব দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে ছিল, অস্ফুট স্বরে বলছিল, 'কনা তুমি আমাকে ধর.. তার ছোট্ট ছেলে বাবু তুমি কই..।'
Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON