বদমাইশিতে ওস্তাদ ছোট্ট ছেলে আলম। খেলাধূলাতে পটু আর পড়া লেখায় ফাঁকিবাজেরও ওস্তাদ। বাসা থেকে বাইরে পা ফেললেই সামনেই প্রাইমারী স্কুল। ক্লাস থ্রিতে পড়ে আলম স্কুল অনেকদিন পরে গ্রীষ্মের ছুটিতে খুলছে। ফাঁকিবাজের স্কুলে যেতে নানা টাল বাহানা। মা'ও নাছোড়বান্দা স্কুল যাবি না তোর বাপ যাবে। মাই কা বেটা সেও কম কি। আইসক্রিম খাওয়ানোর অফার আসলো নাছোরবান্দাও লুফে নিল অফার। একটা, দুটা, তিনটা আইসক্রিম খেয়ে নিল। আইসক্রিম খেয়ে নেওয়ার পরেও আর স্কুলে যাবে না। উনুনের পাশে আমের লাকরি দিয়ে দুটা ঘা যখন বসিয়ে দিলে তখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে বুকে দুটা বই জড়িয়ে স্কুলের দিকে রওনা। স্কুলের স্যার ম্যাডাম তাকে বরণ। করে নেওয়ার জন্য স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে। দুষ্ট ছেলে স্কুল মাতিয়ে রাখতে তাই স্যার ম্যাডামের ও ফেভারিট ছিল।
মা সন্ধ্যার পর নম্প হারিকেনের মিটি মিটি আলো দিয়েই বই পড়াতো। সাথে থাকতো একটা পেন্ঠি। উল্টা পাল্টা করলেই বসে যেত পাট্টাম পাট্টাম করে শরীরে। কখনো বই পড়তে পড়তে ঝিমাতো। কখনো কখনো পড়া না শেষ করলে খাবার জুটতো না। সেই সময় টুকু মা'কে পৃথিবীর সব থেকে জল্লাৎ, নির্দয়, ভয়ংকর মহিলা মনে হত।
এভাবেই শেষ হল প্রাইমারী। হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর স্কুলের স্যারেরা প্রায় আসতো বাসায় খোঁজ খবর নিতে আলমরা পড়াশোনা করছি নাকি এদিক সেদিক করে বেরাচ্ছে। আলমের স্কুলের নিয়ম ছিল শিক্ষকদের গ্রুপ করে ভাগ করে দেওয়া হত। শিক্ষকদের কাজ ছিল কোন নির্দিষ্ট এলাকায় ঢুকবে আর সেই এলাকার সব ছাত্র-ছাত্রীদের বাসায় গিয়ে গিয়ে খোঁজ নিবে।
আলমের মা আবার পর্দাশীল ছিল। কোন পুরুষের সামনে বার হত না। শিক্ষকদের রুমে।বসিয়ে পাশের রুম থেকে কথা বলতো। আর এই বিষয়টি শিক্ষকদের ও ভালো লাগতো কারণ আলমের স্কুলটা ছিল ইসলামী ধারা। ছেলে মেয়েদের আলাদা ক্লাস। ছাত্র-ছাত্রীদের নামাজ বাধ্যতামূলক। যাই হোক এ নিয়ে অনেক কথা বলা যাবে।
আলমের মায়ের পাশের রুম থেকে স্যারের সাথে কথোপকথনের সব থেকে ভয়ংকর শব্দ ছিল স্যার মাংস গুলো আপনার হাড্ডি গুলো আমার। আপনাদের যেমন ইচ্ছা ইস্তেমাল করেন। আহা যুতসই একটা কথা বলেছে আলমের মা, স্যারেরা তো মহা খুশি।
সারা বিকাল খেলো কোন সমস্যা নাই কিন্তু রাত হলেই পড়া। মাগরিবের আজান হওয়ার এক সেকেন্ড আগে বাসায় আসলেও সমস্যা নাই। তবে এক সেকেন্ড দেরী হলেই কপালে শনি আছে। রাতে মাগরিবের পর এক ঘন্টা লোড শেডিং হবেই। আর এই এক ঘন্টা বাইরে সবাই বার হয়ে আসে। বাড়ির সামনেই স্কুল মাঠে সম বয়সি থেকে শুরু করে চাচাতো বড় ছোট ভাই বোন সবাই বার হয়ে চেঁচামেচি খেলাধুলা করে। আর আলম কিনা হারিকেনের আলোয় বই নিয়ে পরে আছে। বাইরে থেকে তাদের শব্দ গুলো যেন বন্ধুকের গুলীর মত আঘাত হানে। কিন্তু সেই গুলিতে খতবিক্ষত হলেও কিছু করার নাই। কারণ মা সামনেই বসে আছে পেন্ঠি হাতে।
এভাবেই এস এস সি পরীক্ষার পর কলেজে উঠলে কিছুটা শিথিল হল। মা আর লাঠি হাতেও নেয় না। লোডশেডিং হলে বাইরে যেতে নিষেধ ও করে না। তবে কতটুকু বাইরে যেতে পারবে সেটার সীমাবদ্ধতা ছিল। এভাবে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে কলেজ জীবনের সমাপ্তির সাথে সাথে তার মা সকল কাঁটা তার তুলে দিলেন। আজ থেকে আলম স্বাধীন। তার মা তাকে ছেড়ে দিয়েছে মুক্তবিহঙ্গের মত। তার মা তার মনে মনে বলেন "ছেলে এখন বড় হয়েছে ভালো মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে। নিজের ভালো নিজেই বুঝতে শিখেছে আজ থেকে তুমি তোমার মত করে চল।" শুধু ছেলেকে বলতো যাই কর বাবা অনেক কষ্ট করে তোকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি এমন কিছু করিস না যাতে আল্লাহর কাছে আমাকে জবাব দিতে হয়। এমন কোন পথে পা বারাইস না যাতে জীবন নষ্ট হয়ে যায়। তার সন্তানের প্রতি, ও তার এতোদিনের পারিবারিক শিক্ষার প্রতি অগাত বিশ্বাস ছিল তার ছেলে কোন খারাপ পথে পা বারাবে না।
আলম এখন বড় হয়েছে, সংসারের হাল ধরেছে। এখন সেই দিন গুলোর কথা মনে করে হারিকেনের আলোর মত মিট মিট করে হাসে। কখনো মায়ের কষ্ট গুলো অশ্রু হয়ে দুচোখ বেয়ে পরে। এখন তো আর বোকাও দেয় না, মাইর ও দেয় না। এখন শুধু চাতক পাখির মত তাকিয়ে থাকে আমার ছেলের ভবিষ্যত কি। এই টেনশন মায়েরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সন্তানদের জন্য করেই যাবে।
আজ আলম পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলেও মায়ের খেদমত কথার মত, মা কে খুশি করার মত হয়ে গিয়েছে। মায়ের জন্য ঈদের শাড়ি কিনে আনার মত শান্তি কোথাও খুঁজে পায় না। মা সেই শাড়িতে অতীতের সকল কষ্ট ভূলে গিয়ে আল্লাহর দরবারে অশ্রু ঝড়িয়ে কান্না করে। এই কান্না এই অশ্রুর এক একটা ফোঁটা চুড়ান্ত সফলতার এক একটা সিড়ি।
গতকাল বিশ্ব মা দিবস ছিল মা দিবসের জন্য এই লেখা। পৃথিবীর সকল মা ভালো থাকুক।
Congratulations @steemitwork! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 1250 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!