লাল মিয়ার তেলের ডিব্বা

in BDCommunity2 years ago

টিনের ছাউনির আর বেড়া চাটির বড় রুম। মাঝখানে কোনমতে পলিথিন টলিথিন দিয়ে পার্টিশন দেওয়া এক পাশে কোন মতে মাথা গুজার জন্য আরেক পাশে বিভিন্ন হাড়ি পাতিল লক্কর ঝক্কর জিনিসপত্র দিয়ে ঠাসা। রান্না বান্না করেন উঠানের মধ্যেই। এদিক সেদিক খর কুটো জোগার করেই রান্না বান্নার কাজ হয়ে যায়। আর এমার্জেন্সি ডাক আসলেই লোটা(বদনা) হাতে দৌড় দেন ঘরের পিছনে প্রকৃতির কাছে ঝোপ ঝাড়ে।

লাল মিয়া আর তার স্ত্রী দুজনেই থাকেন। কোন সন্তান নেই জীবনের এটাই তাদের দম্পতির দুঃখ। অভাবে অনটনের সংসার হলেও জীবন নিয়ে কুন বিতৃষ্ণা নেই। সব কিছুই নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছে লাল মিয়ার দম্পতি। তারা বলেন এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আর কটা দিনেই বা বাকি আছে। না হয় আর একটু কষ্ট করলাম। আমাদের থেকেও আরো কত মানুষ কষ্টে আছে এই সরল স্বীকারোক্তির পর তো আর কোন কথা থাকেনা।

লাল মিয়া টিসিবির পন্যের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ২৬০০ ডলারের মাথাপিছু আয়ের হিসেব কষেন। হিসেব শেষ আর হয় না।

আজ লাল মিয়ার টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে ইচ্ছা করছে না। শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তারপরেও কিছু করার নাই দাঁড়াতে তো হবেই। কোন মতে দাঁড়ালেও বেশিক্ষন টিকে থাকতে পারলেন না। লাল মিয়ার চটিতে একখানা পেরেক পায়ের তালুতে ঘুতা দিচ্ছিল। জোড়া তালি দেওয়া চটির পেরেকটা একটু উঁচু হয়ে গেছে। তাই লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিসিবর পন্য আজ আর নেওয়া হল না।

লাল মিয়া কোন মতে একটু আড়ালে গিয়ে চালাম চুলুম(এদিক সেদিক তাকিয়ে) করে সেন্ডেলটা হাতে নিয়ে কিছুটা পথ হেঁটে গেলো। আর চারিদিকে তাকিয়ে হাতুরির মত কিছু একটা খুঁজছে যাতে পেরেকটা একটু ঠুকিয়ে দেওয়া যায়।

রাস্তায় একটা পুরাতন পরিত্যাক্ত ঘরের মধ্যে অনেক কিছু পরে থাকতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়। একটু উঁকি মেরে দেখে রাজ্যের সব জিনিস সেখানে থাকলেও হাতুড়ি বা তার কাছাকাছি কিছুই নেই।

মন খারাপ করে ফিরিয়ে আসতেই চোখে পরলো একটা বস্তার মধ্যে অনেক কিছু। তার মধ্যে লম্বা হাতুরি টাইপের কিছু একটা। তিনি জিনিসটা হাতে নিয়েই চটির পেরেকের উপর বারি মারতেই অদ্ভুত একটা কান্ড ঘটে গেলো। কি যেন বুদ বুদ করে ধোঁয়ার মত বের হয়ে আসছিল। মেঘ গর্জনের মত শব্দ করতে করতে আরেকটি শব্দ ভেষে আসলো আপনার গোলাম আপনার খেদমতের জন্য হাজির। হুকুম করুন হুছুর কি চাই আপনার।

লাল মিয়া থর থর করে কাঁপতে কাপতে বলে উঠলো কে কে? আপনি কে? আমাকে ছেড়ে দাও।

হো হো করে হাসতে হাসতে বলে উঠলো হুজর আপনি ভয় পাবেন না। আমি আপনার গোলাম।আমিই সেই আলাউদ্দিনের যাদুর চেরাগের দৈত্য। আপনি যে জিনিসটা হাতে ধরে আছেন সেটাই হচ্ছে বিখ্যাত সেই আলাউদ্দিনের চেরাগ।

বল কি!

জি হুজুর। এটা সেই পাঁচ হাজার বছর ধরে এখানেই পরে আছে। কেউ ভয়ে এখানে আসতো না। আপনিই ব্যবহার করলেন। এবার হুকুম করুন হুজুর।

কি হুকুম করবো?
আপনার যা ইচ্ছা হুকুম করতে পারেন। আপনার যা প্রয়োজন হুকুম করুন আমি এখনেই নিয়ে আসবো।

লাল মিয়ার খুব বড় বড় কোন প্রয়োজন আর সখ কোনটাই নেই। অনেক দিন ধরে তেল ছাড়া খাচ্ছে। টিসিবির লাইনেও ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন তবুও তেল কিনতে পারেন না।

দৈত্য চোখ বড় বড় করে অনেকক্ষন লাল মিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো হুকুম করুন হুজুর।

লাল মিয়ার মাথায় অনেক কিছু ঘুরলেও বলে ফেললো আমার তেলের ডিব্বা লাগবে।

এক্ষুনিই এনে দিচ্ছি হুজুর। কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন।

কিছুক্ষন পর.........
বাংলাদেশের কিছু সুনামধন্য টিভি সাংবাদিক, টক শো সেলিব্রিটি আর কিছু অভিনেতাদের নিয়ে এসে দৈত্য বলে উঠলো হুজর, এই নেন তেলের ডিব্বা।

তেলের এমন ডিব্বা দেখে লাল মিয়া পুরাই বেহুঁশ।

images (8).jpeg
Source

Sort:  

Hi @steemitwork, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON