Describe Your Para : পাড়াগাঁয়ের ঐতিহ্য এবং আমরা..

in BDCommunity4 years ago

20200622_194851.jpg

পাড়াগাঁয়ের পরিচিত

গ্রামগঞ্জে পাড়া শব্দটা ব্যপক প্রচলিত। এজন্য গ্রামকে পাড়াগাঁ বলে। মূলত কয়েকটি বাড়ি নিয়ে একটা পাড়া হয়। যেমন মৌলভী বাড়ি, কাজী বাড়ি ইত্যাদি বলতে একটা ঘরকে বোঝায় না। কয়েকটা ঘরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটা বাড়িকে বোঝায়।

আমি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে যাব না। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করব। আশা করি এর মাধ্যমে পাড়া ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যাবে।


ভাষা বিভ্রাট

বড় হয়েছি শহরে। বছরে ২-৩ বার গ্রামের বাড়ি যেতাম। কিন্তু বাহিরে খুব কম ঘুরতাম। আমাদের পাড়ার মধ্যে ছিল আমার বিচরণ। একবার হাটে গেছি। একজন বয়স্ক লোক জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি হাজী বাড়ির?

-না, আমার বাবা হজ্ব করেন নি!

-তুমি মতলবের ছেলে না?

-না। আমার বাবার নাম আব্দুল মোতালেব।

পরে বুঝতে পেরেছি, বাবা হজ্ব না করলেও এটা হাজী বাড়ি। কোন কালে এখানকার কেউ হয়তো হজ্ব করেছিলেন। আর মোতালেবকে গ্রামের মানুষ মতলব বলে ডাকে। আমার উত্তর শুনে বয়স্ক লোকটি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।


ফুটবলের ফাইট

পাড়ার মধ্যে খেলা হবে। ফুটবল খেলা। বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের খেলা। গ্রামে বলে বিয়াইত্তা আবিয়াইত্তা খেলা।

আমার ছোট ভাই, বয়স ১০ বছর। সারা গায়ে কাদা মেখে এসেছে। জিজ্ঞেস করলাম কোন দলের হয়ে খেলেছো?

বললোঃ বিয়াইত্তা!

-তুমি কি বিয়া করছো নি?

সে হাসে। ঘটনা হল বিবাহিতদের দলে খেলোয়াড় সংকট ছিলো। তাই তাকে সবাই মিলে জোর করে বিয়াইত্তা দলে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে তাকে কিছুদিন পাড়ার সবাই বিয়াইত্তা বলে ক্ষেপাতো।


20200622_200620.jpg

চড়ুইভাতি

পাড়ায় পাড়ায় চড়ুইভাতির প্রচলন ছিলো এক কালে। এখন সেটা একটু রূপ বদলে পিকনিকে পরিনত হয়েছে। চড়ুইভাতি বছরে অন্তত একবার করতাম।

তখন আমি অনেক ছোট। সমবয়সী কয়েকজন মিলে চড়ুইভাতি করব। পাড়ার সবগুলো বাড়িতে বাড়িতে গেলাম। কেউ পেয়াজ দিলো, কেউ ডিম দিলো, কেউ তেল, কেউ চাল, আবার কেউ বা দিলো ডাল। আমরা উঠানে মাটি খুড়ে চুলা জ্বালালাম।

রান্না করতে গিয়ে আবিস্কার করলাম আগুন নিভে আসলে, সেটা যে ফুঁ দিয়ে উস্কে দিতে হয়। তা কত কঠিন! ধোঁয়ায় চোখ জ্বলতে শুরু করেছে সবার।

যা-ই হোক। রান্না করলাম। খেতে গিয়ে দেখি একটু অদ্ভুদ রকমের স্বাদ। বাসার রান্নার মত নয়। একেবারে আলাদা।

বড়দেরকে যখন দিলাম, তারা বলল- লবন দেও নি?

সর্বনাশ! সবার ঘর থেকে সব কালেক্ট করেছি। কিন্তু লবন যেহেতু অল্প লাগে, সেটা আলাদা ভাবে কেউ দেয় নি। আমরাও ভুলে গেছি!

সেই লবনহীন রান্নাই খেলাম। নিজেদের রান্না করা বলে সম্ভবত, সেটা খেতে খুব বেশি খারাপ লাগে নি।


ঝগড়াঝাটি ও কুকুরের দুর্ভাগ্য

একবার আমাদের পাড়ার সাথে অন্য এক পাড়ার ঝগড়া হয়েছে। পাড়া যেমন গ্রামের আবহমান ঐতিহ্য, তেমনি এই পাড়ার সাথে ওই পাড়ার ঝগড়াও চিরায়ত ঐতিহ্য।

কত কিছু নিয়ে যে ঝগড়াঝাটি হয়। রাস্তা নিয়ে, আম নিয়ে, মাছ ধরা নিয়ে, জমিন নিয়ে, ছাগলে গাছ ও ফসল খাওয়া নিয়ে, বিয়ে মেজবানে দাওয়াত না দেওয়া নিয়ে। কখনো কখনো বাচ্চাদের মারামারি নিয়েও বড়দের মধ্যে ঝগড়ার শুরু হয়। সেটা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় পাড়ায় পাড়ায় কথা বলাবলি বন্ধ হওয়াতে।

আমার এক চাচীকে দেখলাম একটা কুকুরকে লাঠি নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। আর বেচারা কুকুর জান বাজি রেখে দৌড়ে পালাচ্ছে।

জিজ্ঞেস করলামঃ ও চাচী, কুকুরের পিছনে লাগছেন কেন?

-অই পাড়ার কুত্তা এটা। কত্ত বড় সাহস! আমাদের পাড়ায় হাড্ডি চুষতে আসছে!

বেচারা কুকুর কি আর বোঝে, ঝগড়ার পর পাড়ায় পাড়ায় এখন কথা বলাও বন্ধ!


20200621_121520.jpg

শহুরে ভার্সন

এবার শহুরে পাড়া নিয়ে কিছু কথা বলি।

শহরে পাড়াকে গলি/কলোনি বলে। কলোনিগুলোতে মানুষকে শুধুমাত্র দেখা যায় আশেপাশের খোঁজ খবর রাখতে। নইলে আবাসিক শহরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাশের বাসার মানুষের খোঁজও মানুষ রাখে না।

একবার আমার মামা মধ্যরাতে অসুস্থ হয়ে যায়। আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই। বাড়িওয়ালার বাসায় নক করি। প্রায় আধাঘন্টা নক করার পরেও দরজা খুলে নি।

পরবর্তীতে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, মধ্যরাতে উনারা ভয় পেয়েছিলেন যে ডাকাত পরেছে কিনা। লুকিং গ্লাসে দেখলেও সন্দেহ ছিলো, দূর থেকে হয়ত কোন ডাকাত অস্ত্র তাক করে রেখেছে।


বাবার শেষ স্মৃতি

তবে কিছু ভালো অভিজ্ঞতাও হয়েছে শহুরে পাড়ায়। আমাদের পারিবারিক প্রোগ্রামের সময় পাশের বাসার প্রতিবেশী মেহমানদের শোয়ার জন্য ঘর খালি করে দিয়ে চলে গিয়েছিলো।

বাবার মৃত্যুর সময় আমি অন্য জেলায় ছিলাম। আমি যখন আসার সীদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম, প্রতিবেশীরা বলেছে আমি যেন গ্রামে গিয়ে সেখানে দাফন কাফনের সব ব্যবস্থা করি। কারন তখন অনেক রাত হয়ে গেছে। তারা বাবার লাশ গোসল দিয়ে এক জানাজা পড়িয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দেয় আমার পরিবারসহ মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে।

গ্রামেও পাড়ার সবাই এত এত সহযোগিতা করেছে যে, সারাজীবনে ভুলতে পারব না সেই সব স্মৃতি।



This is my entry to the writing contest 3 for this week powered by bdcommunity.

#BDC #BDCcontest

Sort:  

That football story of your brother was hilarious! Thank you for participating in this week's contest!

আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। এই ঘটনার পরে দীর্ঘদিন তাকে আমরা বিয়াইত্যা বলে ক্ষেপিয়েছি। এমনকি এখনো পারিবারিক আড্ডায় এইসব ঘটনা প্রসংগক্রমে চলে আসলে খুব হাসাহাসি হয় 🙂

Congratulations @tariqul.bibm! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You received more than 4000 upvotes. Your next target is to reach 4250 upvotes.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!

Khub e bhalo likhechen bhai. ja ja bornona korlen tar shob e amar khub chena.. Gollachut Choruivaati footbal, aha egulai to jibon.

Apnar babake allah behesto nosib koruk. Goodluck for the contest :)

ধন্যবাদ ভাই। আরও অনেক স্মৃতি মনে পরে যায়। নিশ্চয়ই ঝড়ের দিনে আম কুড়িয়েছেন। পুকুরে হাতরে মাছ ধরেছেন। বৃষ্টির দিনে পিছলা উঠানে আছাড় খেয়েছেন। হাটে গিয়ে মন্ডা মিঠাই খেয়েছেন। এইসব স্মৃতি তো অমলিন। এখনকার শিশুদের জন্য আফসোস হয়, তারা এসব সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত গুলো শৈশবে পাচ্ছে না।

আহা ভাই। এগুলোর সাথে, গুলতি নিয়ে বক মারা, "টানা" খাওয়া আর বই পড়াই ছিল জীবন। আর শুক্রবার রাতে আলিফ লায়লাবা এক্স ফাইলস। এখন আর এসব কিছুরই অস্তিত্ব নেই। জীবন এখন ভার্চুয়াল। খুব ভালো লিখেছেন ভাই।

সময়ের সাথে সাথে কত কিছু বদলে যায়। এখন আলিফ লায়লা ইউটিউবে দেখতে গেলে হাসি আসে। অথচ তখন সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম একটি অনুষ্ঠানের জন্য। সেই তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা সিরিজ, কুয়াশা সিরিজ এসব মনে হয় এখনকার তরুণরা পড়ে না। এখন তারা ইউটিউব ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। আপনার প্রশংসার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

রহস্য পত্রিকা, কিশোর আলো, রকিব হাসান, অনিশ দাস অপু এরা ছিল আমাদের জেনারেশন এর প্যাসিভ মেনটর। এখন আর কিছুই বাকি নেই।

সেই সাথে জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস, ফেলুদা সিরিজ, আর চাঁচা চৌধূরী কার্টুন

অনেক সুন্দর করে লিখেছেন ভাইয়া। আমার কখনো গ্রামে থাকা হয় নি। গ্রামের সৌন্দর্য বিষয়টা আমি কম বুঝি। তবে আপনার লেখা পড়ার সময় আমি কল্পনা করছিলাম আমার গ্রাম নিয়ে।

আমারও গ্রামে থাকার সৌভাগ্য হয় নি। তবে প্রতিবছর বেড়াতে যেতাম। এবং একেকবার অনেক লম্বা সময় ধরে থাকা হত। তাই গ্রামীণ ঐতিহ্য খুব কাছে থেকে দেখেছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, গ্রামের আবহাওয়ায় ফিরে যেতে।

Hi @tariqul.bibm, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @zayedsakib!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON

ধন্যবাদ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। এবং @zayedsakib ভাইকে স্পেশাল থ্যাংকস।

This is quite good writing but is there a reason you made eight post in a single day? I guess no one point this to you. Posting more than 2 posts a day is generally considered spam and is frowned upon by the community. There are rare few who can pull 3 posts a day and still maintain any kind of quality. Simple rule of thumb; post less post quality. Hope this helps!

Okey, I have understand. Thanks @azircon dada for your suggestion. I will try to maintain quality of the posts in future. Give me suggestions as I am still now learning.