শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ | প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম

in BDCommunity3 years ago

IMG_1568462238690.jpg

দিনটি ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ। কয়েকদিন পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। আমার উপজেলায় প্রাইমারি স্কুলের অনেক গুলো। উপজেলার প্রথম দিকের স্কুলগুলো যথেষ্ট একটিভ এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভালো সুযোগ সুবিধা আছে।

যদিও এই সুযোগ সুবিধা সবার পাওয়ার কথা কিন্তু কিছু স্কুলের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে সবাই এই সুযোগ সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে এসব সুবিধা ভোগ করা যেন দুষ্কর। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের এই সুযোগ গুলো বেশি দরকার, কারন তাদের পরিবার গুলো আর্থিক ভাবে অসচ্ছল থাকে। সব পরিবার আর্থিক সচ্ছল না থাকায় তারা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠায় যদিও তারা যথেষ্ট ছোট। কাজ করার জন্য উপযুক্ত নয় তারা তবুও পরিবারে আর্থিক সমস্যা মেটানোর তাগিদে তাদের কাজ করতে হয়। যেখানে তাদের স্কুলে থাকার কথা সেই সময় তারা কাজ করায় ব্যস্ত থাকে। অনেক ভালো ছেলে মেয়ে আছে যারা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া সত্বেও ভালো পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না। অভাবের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্ন গুলো, স্বপ্ন পরুন করার আগেই স্বপ্ন দেখার আশা হারিয়ে ফেলছে তারা।

আমি নিজ উদ্যোগে বেশ কয়েকবার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। আমি জানি তাদের চাহিদা মেটাতে পারবো না কিন্তু তাদের পড়াশোনায় আগ্রহী করতে পারবো। পরিবার গুলোকে বোঝানের একটা সুযোগ পাওয়া যায়। সামান্য এই শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে তাদের পরিবারকে উৎসাহিত করতে পারি।
আমরা জানি বাংলাদেশ সরকার এখন শিক্ষা খাতে অনেক বেশি বাজেট করে প্রতিবছর। যাতে করে ইচ্ছে থাকা সত্বেও কেউ পড়াশোনা থেকে বাদ না পরে। কিন্তু এই অঞ্চল গুলোতে সেই সুবিধা এসে পৌছায় না। তাই আমার প্রতিকয়েক মাস পরপর এই ছোট প্রচেষ্টা থাকে তাদের কাছে পৌছানোর।

২৯ অক্টোবর সকাল থেকেই প্রস্তুতি চলছে কারন আমাদের নদী পাড় হয়ে চরে যেতে হবে। সেখানে ২টা প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে কলম,পেন্সিল, পেন্সিল বক্স সহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করবো। যাতে পরীক্ষায় তাদের এগুলো উপকারে আসে।

IMG_20190911_143250.jpg

যথারীতি ৮টার দিকে একটা নৌকায় উঠলাম, ১ঘন্টা নৌকা চলার পর একটা নদীর পাড়ে নামিয়ে দিলো, সেখান থেকে ৪.৫ কি.মি হাটার পর সেই স্কুল। সেখান থেকে আরো ২ কি.মি দুরে আরেকটা স্কুল। হাটার ছাড়া কোন বিকল্প উপায় ছিলো না। ১১ টার দিকে প্রথম স্কুলে পৌছালাম।

IMG_20190911_141948.jpg

স্কুলে কোন হৈচৈ নেই, আমি ভেবেছি স্কুল কোন কারনে বন্ধ কিন্তু তখন চলমান, ক্লাস হচ্ছে। ছাত্রছাত্রী কম, একটা শ্রেনীতে শুধু ক্লাস চলছিলো বাকি ক্লাস গুলোতে বাচ্চারা খেলছিলো। কিন্তু তখন ক্লাস হওয়ার কথা। একজন শিক্ষিকা শিশু শ্রেনীর ক্লাস নিচ্ছে বারান্দায়। মোট ৪টা রুম, তার মধ্যে একটা রুম প্রথান শিক্ষকের বাকি ৩টা রুমে ক্লাস নেওয়া হয়। সবাই প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকলাম কিন্তু সে নাই। পুরো স্কুলে ২জন শিক্ষক উপস্থিত আছে। একজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে ফোন করে স্কুলে আনলো। প্রধান শিক্ষককের এমন অবহেলা দেখে সত্যি অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু আমার সক্ষমতা ছিলো না এটার প্রতিবাদ করার। আমরা চুপচাপ পঞ্চম শ্রেনীর বাচ্চাদের একরুমে এনে শিক্ষা সামগ্রী গুলো দিয়ে দিলাম। মোট ১৪ জন শিক্ষার্থী ছিলো পঞ্চম শ্রেনীতে।

IMG_20190911_120526.jpg

আমি সত্যি হতবাক হয়ে গেছিলাম, স্কুলের এমন অনিয়ম দেখে। প্রধান শিক্ষককে দেখে মনে হচ্ছিলো মাত্র ঘুম থেকে উঠে আসছে।

সেই সময় অনেক নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছিলো,চোখের সামনে এতো বড় অবহেলা, অনিয়ম দেখেও কিছু করতে পারলাম না। ২কি.মি হেঁটে আরেকটি স্কুলে গেলাম। স্কুলে ঢোকার আগে থেকেই মনে হচ্ছিল যথেষ্ট ছাত্রছাত্রী আছে স্কুলে। স্কুলের বিল্ডিং টা রং করা মনে হচ্ছে মাত্র কয়েক দিন হলো রং করা। প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে আমাদের উদ্দেশ্যের কথা বলাতে সে খুশি হয়ে আমাদের বসতে দিলো। আমি এইদিকে স্কুলটা ঘুরে দেখছিলাম, ক্লাস রুম গুলোতে ছাত্রছাত্রীতে ভরপুর। ভালো লাগছিলো এতে শিক্ষার্থী দেখে, স্কুলের একটিভিটিও অনেক ভালে দেখাচ্ছিলো।

IMG_20190911_123819.jpg

পঞ্চম শ্রেনীর ক্লাস রুমে যথেষ্ট শিক্ষার্থী ছিলো। একটু ফর্মালিটি মেইনটেইন করে সামগ্রী গুলো বিতরণ করবো ভাবছি। ভাবতে ভাবতেই প্রধান শিক্ষক বললো,প্রথমে বাচ্চাদের উদ্দেশ্য কিছু বলো তাদের উৎসাহ দাও। সামনে পরীক্ষা একটু উৎসাহ পেলে উপকারে আসবে। ৫মিনিট বাচ্চাদের উদ্দেশ্য কিছু বলার শিক্ষা সামগ্রী গুলো দিলাম। এটা যদিও বেশি কিছু ছিলে না কিন্তু বাচ্চারা যথেষ্ট উৎসাহ পেয়েছে মনে হচ্ছিল।

IMG_20190911_133043.jpg

এটাই শেষ স্কুল ছিলে, এখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু এতো লম্বা রাস্তা আবার হাটতে হবে ভেবেই কেমন অস্থির লাগছিলো। কিন্তু ভাগ্য ভালো ছিলো, একটা ঘোড়ার গাড়ি পেয়েছিলাম, ঘোড়ার গাড়িতে করে নদীর পাঠ পর্যন্ত আসছিলাম। তারপর নৌকায় করে বাড়িতে।

IMG_20190911_142317.jpg

আবার দেখা হবে শীঘ্রই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে আবার আসছি আমরা তোমাদের উদ্দেশ্য।