আতিক | দায়িত্বশীল বন্ধু

in BDCommunity3 years ago (edited)

IMG_20191127_171851.jpg

আতিককে দেখতে চুপচাপ মনে হলেও মটেও ততটা চুপচাপ আর শান্ত না। ছেলেটা খুব চালাক আর বুদ্ধি মান বটে। সব সময় হাসিখুশি থাকে, কথা কম বললেও মাঝেমধ্যে দুইএকটা যাই বলে, সেটা দিয়েই সবাইকে হাসিয়ে রাখে। ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলে নদীর পাড়ে আমরা বন্ধুরা গিয়ে বসে থাকি। আজকে স্যার ব্যস্ত, ক্লাস নিতে পারবে না। নদীর পাড়ে গিয়ে বসে আছি। সবাই চুপচাপ! হঠাৎ আতিক বলে উঠলো সবাই এতো চুপচাপ কেন আজ? দেখে মনে হচ্ছে সবাই দুঃখের সাগরে ভাসছোস। ভাই জীবনে দূঃখের কি দেখছোস, কেবল তো শুরু। কাঁদতে হবে তোদের, কিন্তু আমি হাসবো। এটা বলতাতেই আমরা সবাই হেসে উঠলাম আর আতিককে পচাতে লাগলাম। ও জানতো ঠিকই এমন কিছু একটা বললে সবার মুড ঠিক হয়ে যাবে।

সবার মুড অফ কারন আগের ক্লাসে স্যার এসে বকে গেছে। অ্যাসাইনমেন্ট সবার একই হওয়ার কারনে। সেজন্য সবার মন খারাপ হয়ে আছে আর ভাবছে নেক্সট অ্যাসাইনমেন্ট যার যার মত লেখতে হবে। আমি দ্বিমত পোষণ করলাম, কারন আমার অ্যাসাইনমেন্টের প্যারা নিতে একদম ভাল্লাগে না। ততক্ষণে আতিক বলে উঠলো, ভাই তোরা এতো সহজেই হাড় মেনে নিস কেন? স্যার একবার বকছে তাই বলে তোরা হাড় মেনে নিবি। এমন হয় না। আগের মতই করবো আমরা। এই বলেই আতিক চলে গেলো ভাই থাক বাসায় কাজ রেখে আসছি, যেতে হবে। কালকে দেখা হবে আবার আর কালকের অ্যাসাইনমেন্ট করে আমাকে ছবি তুলে দিস রাতে লেখবো।

এটা নতুন না, প্রতিদিনই আতিক এমন করে। আমাদের সাথে বেশিক্ষন থাকতে চায় না। আমরা আলোচনা করি এটা নিয়ে যে, আতিক এমন কেন! একটু পর পরই বাসায় যাব, বাসায় যাব করে। আমরা কখনো ওর বাসায় ও যাইনি, চিনিও না। কিন্তু ওর এলাকার নাম জানি। তাই আমরা কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিলাম যে আতিকের বাসায় যাবো আজকে। দেখি ও বাসায় আছে নাকি।

তাই আজকে আমরা চার বন্ধু মিলে ওর এলাকায় গিয়ে ফোন দিয়েছি। ২ বার চেষ্টা করার পর ফোন রিসিভ করলো। আমাদের মধ্যে এক বন্ধু বললো, আমরা তোর বাসার পাশে আসছি। এটা শুনে আতিক অবাক! কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো কই আছোস? না চিনলে একটা রিকশায় উঠে বল যে উত্তর পাড়া জামে মসজিদে যাব। এসে আমায় ফোন দে। আমরা ওর কথা মত একটা রিকশায় করে মসজিদের কাছে গিয়ে আতিককে ফোন দিতেই ২ মিনিটের মধ্যে চলে আসলো। গায়ে সাদা টিশার্ট আর একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরা। চুল গুলো এলোমেলো। টিশার্টের পিছনে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে যে শুয়ে ছিলো আর না হয় চেয়ারে বসে ছিলো। টিশার্টে দাগ হয়ে আছে বসে থাকার।

এসেই হেসে দিয়ে বললো, তোরা এদিকে কি মনে আসলি। মন ভালো হয় নাই নাকি। বললাম না! মন ভালো আছে! আমরা তোর এলাকার হালিম খেতে আসছি, শুনলাম এটা বিখ্যাত হালিম আশেপাশের এলাকার মধ্যে। এটা শুনে ওর হাসি যেন থামছেই না। হাসতেই আছে। হাসি থামিয়ে বললো আয় এ হালিম খেয়ে কাম নাই। বাসায় যাই। যেখানে ছিলাম সেখান থেকে ২ মিনিটের একটা গলি পাড় হলেই ওর বাসা। বাসায় টিনের দোতলা ঘর আর একটা নরমাল টিনের ঘর। চারপাশে টিন দিয়েই বেড়া দেওয়া উচু করে। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় বাসায় কেউ থাকে না। ভিতের ঢুকতেই আতিক আবার গেটে তালা লাগিয়ে দিল। গ্রামে দিনের বেলায় গেটে তালা লাগানো এটা অদ্ভুত লাগলো আমার কাছে। আতিক আমাদের ওর রুমে বসিয়ে বাইরে গেলো।আমরা অবাক !! ওর রুমে একটা কম্পিউটার পাশে যদিও আরেকটা মনিটর আছে। আর বেশকিছু স্কেচ নিচে পড়া, কম্পিউটার চলছে কিছু সিকিউরিটি দেওয়া। আমাদের বুঝতে বাকি রইলো না আতিক কিছু একটা করে যেটা আমরা জানি না।

কিছুক্ষন পর আতিক আসলো, কোক বিস্কিট আর কিছু ফল নিয়ে। ওকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আমাদের বললো, আমি যখন তিন বছর আগে ঢাকায় ছিলাম তখন এগুলা শিখছিলাম। আমি সব রকম গ্রাফিক্স ডিজাইন, স্কেচ, ফটোশপ। ঢাকায় যখন থাকতাম ওখানে বন্ধুরা আমাকে ফটোশপ গড বলে ডাকতো। শুনছি আর খেয়াল করছি বাসায় কোন শব্দ নেই মনে হচ্ছে বাসায় আর কেউ থাকে না। এটাও ওকে জিজ্ঞেস করার আগেই বললো এখানে আমি, ছোট ভাই আর আম্মা থাকি। ছোট ভাই কোচিং এ গেছে। বললাম আর কেউ নাই? বললো আছে সবাই, আব্বু, বোন। কিন্তু এখানে না। আমাদের সাথে আর থাকে না। আমরা বুঝতে পারলাম যে আতিকের আব্বু আর আম্মু আলাদা হয়ে গেছে। এগুলো করেই সব করতে হয়। আব্বু থাকতে বাড়ি করে দিয়ে গেছে এটাই সম্বল আপাতত থাকার। কিছুক্ষণ পরেই আতিক আমাদের সাথে মন খুলে আড্ডা দিতে লাগলো।