দৃষ্টির অন্তরালে

in BDCommunity4 years ago

মিসেস রহমান এর কথা শেষে সুহি আমার দিকে ওর ডান হাত টা বাড়িয়ে দেয়।আমি ওর হাত ধরি।ওআমার হাত ধরে চেয়ার থেকে ওঠে।মিসেস রহমান ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকান আমাদের দিকে।আমি ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসি।সুহি আমাকে বলে
-মিসেস রহমান এর সাথে বিশাল আড্ডা জুড়েছিলাম আজ।
-তাই নাকি!
-হুম।
-তা কি কি বললে?
-অনেক কথা। তুমি বল তোমার ফিরতে এতো দেরি কেন হলো?
-সুন্দরি কলিগের সাথে লাঞ্চ এ গিয়েছিলাম।

খিলখিল করে হাসে সুহি।ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি আমি।অন্যরা হয়তো বউ কে রাগাতে এসব কথা বলে।কিন্তু আমি বলি ওর এই হাসি দেখতে।ও রাগেনা।ও হাসে। খুব হাসে!আর বলে আমাকে রাগাতে চাইছিলে বুঝি! ভেবে পাইনা কেন এতো ভালোবাসে মেয়ে টা আমাকে। এ ভালবাসার শুরু ৩ বছর আগে।

ভার্সিটি তে ঢুকতে না ঢুকতেই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে যায়।রেগে গিয়ে বলেই বসি দেখতে পান না নাকি? মেয়ে টা তাৎখনিক চোখ বন্ধ করে ভীত ভঙ্গী তে দাঁড়িয়ে থাকে।আমি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি মেয়েটার দিকে। একটা মানুষ এতো টা মায়া কি করে ধারন করতে পারে?মেয়েটার কিছু বন্ধু ওকে সেদিন নিয়ে যায়।কিন্তু মেয়েটা থেকে যায় আমার মাঝেই।একটা অদ্ভুত ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল। এই সামান্য ভালোলাগা থেকেই ওর নাম ঠিকানা সব জোগাড় করে ফেলেছিলাম এমনকি ওর ফোন নম্বর ও!রোজ চুপিচুপি দেখা হতো তাকে। আর নিজের মনেই স্বপ্ন বোনা হতো তাকে নিয়ে। আর মেয়েটি? কিচ্ছুটি জানতো না!
মেয়েটি হাসি দিয়ে এমনি দিওয়ানা বানিয়েছিলো যে প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম।
ধিরে ধিরে বন্ধুত্ব। আর তারই সুবাদে ফোনেও কথা হতো আমাদের। একসময় সিদ্ধান্ত নিই সবকটা মনের কথা,লুকোনো অভিব্যক্তি তাকে জানাবো।
সামনাসামনি জানানোর সাহস ছিলোনা তাই ফোনেই।ও আমাকে ফিরিয়ে দেয়।আমার ভালোবাসা ও বুঝতে পারেনা।হয়তো বুঝতে চায় ও না।আমিও ভেবে নিয়েছিলাম ওকে আর বিরক্ত করব না।আমার ভালবাসা ভাল থাকুক।তবু আমার আবেগ,আমার কল্পনা,আমার ভালবাসা থেমে যেতে পারেনি।
আমি ভাবতাম ও আসবে।ও বুঝবে।কোনো একদিন হুট করে এসে ওর জন্য একটা কবিতা লিখতে বলবে,আমি খুব জঘন্য একটা কবিতা লিখবো। ছন্দহীন,কিন্তু ভালোবাসায় ভরপুর।ও শুনে খুব হাসবে,আর অনুভব করবে আমার ভালবাসা।হয়তো একদিন আসবে আর আমার সুরে সুর মেলাবে,আমার প্রথম লাইনটা গাওয়া শেষ হওয়া মাত্র ও গাইবে ২য় লাইন।কিন্তু ও আসেনা আমার কবিতা আর লেখা হয়না।গান এর প্রতিটি লাইন একাই গাইতে হয়।
একদিন ওর বন্ধু রূপা আমাকে এসে বলে,
-কামাল ভাই!
-আমি কি ওকে বিরক্ত করি?
-না তা নয়।
-তবে কেন এসেছ?
-ও আপনাকে কখনো দেখেনি জামাল ভাই।
-বেশ তো,আমাকে ও কেন দেখবে আমি ওর প্রিয়জন তো নই।কেন অহেতুক এসব বলছো রুপা নিশ্চিন্তে থাকো না! চলে যাও।
-আমি চলে যাব।আমি শুধু আপনাকে এটুকুই বলতে এসেছিলাম ও নিজের অভিশপ্ত জীবনের সাথে তাকে জড়াতে চায়না যাকে ও জিবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে। ও আপনাকে কখনো দেখেনি কিন্তু ভালবেসেছে খুব।সেদিন আপনার সাথে ধাক্কা ইচ্ছে করে খায়নি।আমরা সেচ্ছায় আপনার সামনে ওকে ঠেলে দিয়েছিলাম যাতে সেই মেয়েটা আপনার চোখে পড়ে যে আপনার প্রেমে পড়েছে। আপনাকে ভালবেসে আসছে অনেকদিন যাবত। আপনি ওকে ভালবেসে ফেলেছিলেন জেনে আমাদের খুশির অন্ত ছিলনা কিন্তু ও কেদেছে খুব।ও যে চোখে দেখতে পায়না ও কাওকে নিজের জিবনের সাথে জড়াবে এ অধিকার পৃথিবী ওকে দেয়নি।

কথা গুলো বলে রূপা চলে যায়।আমার কানে বাজতে থাকে কথা গুলো।সত্যিই তো এ কথা তো আমি কখনো ভেবেই দেখিনি। আমার চোখ বেয়ে পানি পড়েনা! ভেতর টা শক্ত হয়ে ওঠে খুব।আমি আকাশের দিকে চেয়ে থাকি বহু ক্ষন।
রূপা আমাকে ১ বছর পর সুহির বিয়ের খবর দেয়।আমি মৃদু হাসি।হাসির অন্তরাল ঘেটে দেখেনা কেউ।

সুহির ডাকে বাস্তবে ফিরি আমি।ও এখনো আমার হাত ধরে আছে। আমি ওকে শক্ত করে ধরি।ও আমাকে বলে
-টায়ার্ড হও না তুমি?
-হই তো!
-আমাকে ভালবাসতে বাসতে?
-খুব হই! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে আরেক টা বউ নিয়ে আসি।

pexels-jonathan-borba-3014856.jpg

সুহি আবার হাসে।আমি আবার ওর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি।
সেদিন ওর বিয়ে টা আমার সাথেই হয়ে ছিলো।
ওর অন্ধকার দুনিয়ার আলো হয়েছি আমি,আমিই ওর দৃষ্টি শক্তি।
Pictures are taken from pexels.com

Sort:  

Hi @troublemakerrr, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @linco!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON