সৌন্দর্য এর মাপকাঠি

in BDCommunity3 years ago

FB_IMG_1619479630416.jpg

আমরা এমন একটি সংস্কৃতি তৈরী করেছি যেখানে একজন নারীকে বোঝানো হয় তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো তার সৌন্দর্য। জীবনে যা-ই সে হোক না কেনো, সুন্দর তাকে হতেই হবে।
কেমন সুন্দর সে হবে তার একটা অবাস্তব ছবি তার সামনে প্রতিনিয়ত উপস্থাপন করা হচ্ছে। একটা সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় প্রকাশ পায় এসব বিউটি স্ট্যান্ডার্ড থেকে, যা পুরোপুরি পূরণ করা আসলে কারো পক্ষে সম্ভব না।

খুব সূক্ষ্মভাবে নারীর মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সুন্দর হওয়ার একটাই উপায়, এই বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের সাইজ, শেইপ, রঙ তারও হতে হবে।
যদি সে তা হতে না পারে, সে দায়িত্বও নেওয়া হয়েছে।

বিউটি ফিল্টার;
আপনি কালো? ফর্সা বানিয়ে দেবে।
মুখে ব্রণ? ব্লেমিশ করে দিবে।
আপনি মোটা? চিকন বানিয়ে দেবে।

চেহারার আকৃতিও বদলে যায় ফিল্টারের বদৌলতে।
এসব থেকে বেঁচে থাকা একটি চ্যালেঞ্জ।
আমি বলছিনা আজকের দিনের কোনো নারীর পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ।
Beauty Sick বইয়ের লেখক একজন সাইকোলজিস্ট, রেনে এঞ্জেল। তিনি কিছু ছোটো মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিলেন বড় হয়ে তারা কেমন হতে চায়।

বেশিরভাগই উত্তর দিয়েছিলো, চিকন এবং সুন্দর।
তিনি আরো বের করেছিলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ নারী নিজের দৈহিক সৌন্দর্যের ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা পোষণ করে, তারা এই ব্যাপারে অখুশী।

এই ৫০ শতাংশের নাখোশের সাথে আমরা কি মিল খুঁজে পাই?
আয়নায় তাকালে নিজের খুঁত বের করি না?
মুসলিম নারীরাও করে।
বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা একজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিলো এই ব্যাপারে আরো জানতে।

সে ১০ বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। দিন দিন কমবয়সীদের সংখ্যা বাড়ছে যারা আগে হয়তো একটি সেবা নিতে আসতো, এখন তারা ফুল সার্ভিস নিতে আসে।

তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, সেলেব্রিটি বা মডেলদের ছবি নিয়ে কেউ আসে? যে আমাকে এমন করে দাও?
-হ্যাঁ, আমার এমন ক্লায়েন্ট আছে যারা দুই সপ্তাহ পরপর আসে নানান সেবা নিতে এবং তারা এসব ব্যাপারে নেশাগ্রস্ত লাগে। অ্যাডিক্টেড। কেউ কেউ প্রিন্ট করা ছবি নিয়ে আসে, ইন্সটাগ্রামের ছবি নিয়ে আসে। আমরা তাদেরকে যতোটুকু সম্ভব বুঝানোর চেষ্টা করি।

কেউ যদি চেহারা মডেলদের মতো বানাতে না-ও চায়, তবু এমন অনেক আছে যারা কথিত "ইন্সটাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার"দের মতো করে জামা বানায়, " মডেস্ট ফ্যাশন" করে, মেকআপ করে, "কাপল গোল" বানায়।

অস্বীকার করা যাবে?

ইন্সটাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সাররা আমাদের ইনফ্লুয়েন্স করতে পেরেছে বলেই ওরা ইনফ্লুয়েন্সার নাম পেয়েছে।

একজন মুসলিম নারী হিসেবে আমাদের উচিত এই ব্যাপারটিকে কাউন্টার দেওয়া- সৌন্দর্যের যে সংজ্ঞা আমাদের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে তা যে একটি মিথ্যাচার, তা প্রমাণ করে দেওয়া।
কীভাবে?

  • আমাদের বুঝতে হবে, অনুধাবন করতে হবে যে শান্তি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসা একটি উপহার। আমরা যেমন, ঠিক তেমনটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা। বাইরের নানা পরিবর্তন আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করতে পারে না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বলে গেছেন আল্লাহ আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখেন না, বরং আমাদের অন্তর দেখেন।

নিজের খুঁত ধরার যে ক্রমাগত হতাশা, তার কোনো শেষ নেই। এই নিয়ে আমরা যত ভাববো, তত এর তীব্রতা বাড়বে, একটা সময় আমরা এই অবসেশনে অসুস্থভাবে আটকা পড়বো।

আমরা বরং একজন আরেকজনকে সাহায্য করবো আল্লাহ আমদের যা দিয়েছেন তার উপর খুশী থাকতে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমাদের কাছের মানুষরাই আমাদেরকে সৌন্দর্য নিয়ে খোঁটা দেয়, তুমি মোটা।
তুমি চিকন।
তুমি বেশী ফর্সা।
তুমি কালো।
নাক বড়।
নাক বোঁচা।
খুঁতের শেষ নেই।

সমাজের বানানো সৌন্দর্যের সংজ্ঞায় যারা পড়ে না, যারা চিকন লম্বা ফর্সা না, তাদেরকে আমরা সুন্দর বলি না।
বলি কিউট।

মন্তব্যের শেষ নেই।

অথচ আমাদের রাসুল এক নারীর নাম আসিয়া (অবাধ্য) থেকে বদলে রেখেছিলেন, জামিলাহ। বলেছিলেন, তুমি সুন্দর।

মনে রাখতে হবে, সৌন্দর্য একটি দুনিয়াবী ব্যাপার।
বলিরেখা কিংবা ব্রনের দাগ, চামড়া কুঁচকে যাওয়া- এসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় জগতের অন্যান্য জিনিসের মতো সৌন্দর্যও ক্ষণস্থায়ী। কিছুই সারাজীবন টেকে না।

সুতরাং এমন কিছুর পেছনে ছুটে লাভ নেই, যা মুছে যাবে।

নিজেকে প্রচলিত সৌন্দর্যের ছাঁচে ফেলা থেকে ইসলাম আপনাকে স্বাধীন করে। আল্লাহ আমাদের বারবার বলেছেন কেনো আমরা এই দুনিয়ায় বেঁচে আছি, কেনো আমাদের এখানে পাঠানো হয়েছে, সেদিকে মনোযোগ দিতে।

অতএব, পরেরবার যখন আয়নায় তাকাচ্ছেন, এক্সপেকটেশান কমিয়ে ফেলুন।
হ্যাঁ আপনার গালে দাগ আছে। থাকুক।

কী সমস্যা?
এই দাগটা তো আপনি না।

দাগটা দাগ।

আপনি তা, যা আপনার অন্তর।

এগুলো আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য ম্যাগাজিনের কভারে নিজের ছবি বেঁচে দেওয়া না।
বরং আমাদের অন্তরকে বিশুদ্ধ করতে আমরা কাজ করবো, ওটা যেন পারফেক্ট হয়।

হিজাব পরা সুন্দর কাউকে দেখলেই তার মতো হতে চাওয়ার দরকার নেই।
কারো বোরকা সুন্দর লাগলে সেটা আমার লাগবেই কেন?
অনলাইনের বাজারে আমি কেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলবো?

ফেলবো না, এতোটুকু দৃঢ় আমাদের হতেই হবে।

♦️🔷♦️ধন্যবাদ সবাইকে ♦️🔷♦️

Sort:  

আপনি বারবার অন্যের লিখা কপি করে হাইভে পোস্ট দিচ্ছেন। এভাবে এখানে কিচ্ছু গেইন করতে পারবেন নাহ এই প্লাটফর্মে।
এই লিখার সোর্সঃ https://www.facebook.com/209123022958438/posts/906985919838808/